চট্টগ্রামে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ যুবলীগের তাণ্ডব গুলিতে নিহত ৩
মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে নগরের মুরাদপুরে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল।
প্রথম নিউজ, চট্টগ্রাম: কোটা সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর-মুরাদপুর এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ছাত্রলীগের গুলিতে ২ শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে নগরের মুরাদপুরে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন তিনজনের লাশ চমেক হাসপাতালে আসার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, সংঘর্ষে নিহত ৩ জনের লাশ এখানে এসেছে। আর মারাত্মকভাবে আহত ৩০ জন ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে ৪-৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম, ওমরগণি এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল ও ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুক।
ওয়াসিমের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়। আর ফারুকের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। আর ফয়সালের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। এদের মধ্যে ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছোট ভাই। জানা যায়, এ ঘটনায় আহতদের ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের মধ্যে দুজন যুবলীগের কর্মী। সংঘর্ষের সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদেরকে পিটুনি দেন। তারা স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও নগর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সেক্রেটারি নুরুল আজিম রনির অনুসারী। মূলত রনির নেতৃত্বেই শুরুতে নগরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। পরে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। একপর্যায়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ধাওয়ায় পিছু হটে যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষে যুবলীগের কয়েকজনকে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায়। সরজমিন দেখা যায়, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের গুলির বিপরীতে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে। স্থানীয় ছাত্রদল ও শিবিরের কয়েকজনকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে সংঘাতে জড়াতে দেখা যায়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তারা মুরাদপুর হয়ে অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে ষোলশহর এলাকায় যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে। এরপরে তারাও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা হামলা চালায়। তবে তারা ইটপাটকেল মারলেও ছাত্রলীগ-যুবলীগ পুলিশের সামনেই অস্ত্র ব্যবহার করেছে। সরজমিন দেখা যায়, সংঘর্ষে নগরের মুরাদপুর-ষোলশহর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে যুবলীগ- ছাত্রলীগের কয়েকজনের হাতে অস্ত্র দেখা যায়। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যদের সম্পূর্ণ নীরব থাকতে দেখা যায়।