আপিলের অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন
কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়
প্রথম নিউজ, অনলাইন: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করা হয়েছে। মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ এ আবেদন করে। বিকালে নিজ দপ্তরে এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের রায় বাতিল চাইতে হলে আইন অনুযায়ী লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ফাইল করতে হয়। সেই লিভ টু আপিল ফাইল করা হয়েছে।
আদালত শুনানির পর সিদ্ধান্ত দেবেন আমাদের আপিলের অনুমতি দেবেন কিনা। আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) আবেদনে দেখিয়েছি কী কী কারণে হাইকোর্টের রায়টি সঠিক হয়নি। আদালতের কাছে আমাদের প্রার্থনা হচ্ছে, লিভ (আপিলের অনুমতি) দিয়ে হাইকোর্টের রায়টি যেন বাতিল করা হয়। আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের মূল যুক্তিটা হচ্ছে এটা (কোটা) সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। ফলে এতে আদালতের বিচারের কিছু নাই।
গত রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সব কোটা বহাল রেখে ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হলো। সরকার চাইলে কোটার রেশিও পরিবর্তন-পরিবর্ধন, কমাতে-বাড়াতে পারবে।
এর আগে গত ১১ই জুলাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের মূল অংশ প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত রায়ে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হলো। একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ যদি অন্য কোনো কোটা থাকে, তা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেয়া হলো। রায়ে আরও বলা হয়, সরকার চাইলে কোটার রেশিও পরিবর্তন-পরিবর্ধন, কমাতে-বাড়াতে পারবে। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূর্ণ না হলে কিংবা কাউকে না পাওয়া গেলে বা পদ শূন্য থাকলে তা সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা যাবে।
২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ছিল ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ কোটা। এই কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ছয় বছর আগে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন গড়ে তোলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
এ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২রা জুন একটি কমিটি করে সরকার। ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনো কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেয়। ওই বছরের ৩রা অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে সেখানে কোটা বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। পরের দিন ৪ঠা অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করেন জনপ্রশাসন সচিব।