গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর পক্ষপুটে আশ্রয় চাচ্ছেন শেখ হাসিনা: রিজভী

গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর পক্ষপুটে আশ্রয় চাচ্ছেন শেখ হাসিনা: রিজভী

প্রথম নিউজ, অনলাইন:বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন,কর্তৃত্ববাদী দু:শাসনের উপর দেশি-বিদেশী চাপে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে পরেছে অবৈধ সরকার। দুনিয়ায় গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর পক্ষপুটে আশ্রয় চাচ্ছেন শেখ হাসিনা। দেশ-বিদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন দেশী কিংবা বিদেশী যে-ই হোন না কেন, যারাই গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলে, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলে তারাই জনগণের বন্ধু। আজ সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

রিজভী বলেন, বর্তমান নিশিরাতের সরকার পানিতে হাবুডুবু খেতে খেতে এখন জনগণকে নানা বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছে। গত ১৪ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিজের গোষ্ঠিস্বার্থে এক নজিরবিহীন ‘স্বৈরাচারি মডেল’ তৈরি করেছেন। আর এজন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে দেশের স্বাধীন অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতেও তিনি দ্বিধা করেননি। গনতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার, সুশাসন জনগণের নিরাপত্তাকে চরমভাবে পদদলিত করা হয়েছে গুম-খুনের সংস্কৃতির বিস্তার ঘটিয়ে।

ব্যাংক লুট, টাকা পাচার, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারী ও ঋণ খেলাপিদের দিয়ে ‘ক্ষমতাসীন বলয়’ তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এরাই বর্তমানে আইন, প্রশাসন, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রন করছে। যারা ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা, তারাই আওয়ামীলীগের নেতা বা সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রী ও উপদেষ্টা। বাংলাদেশে সন্ত্রাসকে করা হয়েছে মহিমান্বিত, সন্ত্রাসীরা ক্ষমতার প্রশ্রয়ে সমাজের প্রভু হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এখন

Hasina Made Disaster| ।  
বিএনপির মুখপাত্র বলেন,বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের একতরফা নিশিরাতের নির্বাচন করে যারা নিরঙ্কুশ ক্ষমতা জবরদখল করে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা কেড়ে নেয়, সেই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা কি অন্যায় ? গণধিকৃত সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহীতা করে না বলেই বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য নানা কথার ফুল ঝুড়ি ছড়াচ্ছে। দস্যুদল যদি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করা ন্যায্য এবং ন্যায় সঙ্গত। আর এই সংগ্রামে যে সমর্থন দেবেন, সেই জনগণের বন্ধু। যেকোন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাহিরের অনেক দেশ সমর্থন দেয়, তা কি অন্যায় ? বাংলাদেশের জনগণ নিরাপত্তাহীন ভয় ও শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সরকার পরিবর্তন ও পরিচালনায় তাদের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে ভোটাধিকার হরণ করে। নাগরিক হিসেবে তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। সুতরাং জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে। মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বাক, ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ সকল স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এখন ধ্বংসের শেষ প্রান্তে, এটি ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। আমরা মনে করি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের বিকাশের লক্ষ্যে চলে আসা রক্ত ঝরা আন্দোলনে অনেকের আত্মদান বৃথা যাবে না। আর এই আন্দোলকে দেশে-বিদেশে যারাই সমর্থন করবে তারা বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু।  

বিএনপি নেতা বলেন, জনগণের স্বার্থে এবং পক্ষে আন্দোলন কখনো বৃথা যায় না। বিগত দেড় দশক ধরে গণতন্ত্র পূণ:রুদ্ধারের আন্দোলনে বিরোধী দলসহ ভিন্ন মতের মানুষ, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক,মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিককে গণতন্ত্র বিনাশী এই ফ্যাসিস্ট সরকার নির্মমভাবে হত্যা করেছে। গুম করা হয়েছে জনপ্রতিনিধিদেরও। গণতন্ত্রকামী জনগণকে দাবিয়ে রাখার জন্য সরকারের দমনযন্ত্র প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরাচ্ছে। 

দখলদার সরকার জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দিয়ে গোটা জাতিকে নিরাপত্তাহীন ও অরক্ষিত করে ফেলেছে:রিজভী আহমেদ বলেন, জনগণকে পিষ্ট করার পাশাপাশি এরই মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্দিত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখার জন্য কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। সরকার হচ্ছে জনগণের আমানতকারী। সরকারের হেফাজতে জনগণের তথ্য সহ অনেক কিছু থাকতে পারে সংরক্ষনের জন্য। নিশিরাতের সরকার জনগণের প্রতিপক্ষ বলেই সংরক্ষিত তথ্য ফাঁস করিয়েছে। সরকারের লোকজনের সহায়তা ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়। জনগণের জান-মাল, সহায়-সম্বল হেফাজতের দায়িত্ব সরকারের। ভোটারবিহীন দখলদার সরকার জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দিয়ে গোটা জাতিকে নিরাপত্তাহীন ও অরক্ষিত করে ফেলেছে।

জাতীয় পরিচয় পত্রে যে সকল তথ্য থাকে, সে তথ্য দিয়ে মানুষের ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ লোপাট করা সম্ভব। যতদিন এটি নির্বাচন কমিশনের অধীনে ছিলো ততোদিনতো ফাঁস হয়নি। তাদের অধীন থেকে সরকার নিজ দায়িত্বে নেয়ার পরই এটা ফাঁস হয়েছে। এর ভিতর সরকারের কোন সু-পরিকল্পিত গভীর চক্রান্ত থাকতে পারে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আটশত কোটি টাকা লুট-পাট হয়েছিলো, তার সঠিক প্রতিবেদন আজও প্রকাশ পায়নি। 

তিনি আরও বলেন,  এই সরকার দূর্বৃত্তায়ন, ইতরায়ন ও রক্তাক্ত সন্ত্রাসের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করেছে। পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে হত্যার সংখ্যা। দেশকে পরিণত করা হয়েছে মৃত্যু উপত্যকায়। এদের মিথ্যা কথা চেঁচানোর রেওয়াজ র্দীঘ দিনের। অবৈধ ক্ষমতায় গরিমা আর অহমিকায় তারা ধরাকে সরাজ্ঞান করে না। আর এর ফলে অতীতের সমস্ত নজির ভেঙ্গে গোটা দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর বিপর্যয় নেমে এসেছে। তাই আজ এদের সীমাহীন অনাচারের বিরুদ্ধে জনগণ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। জনগণকে আর আটকিয়ে রাখা যাবে না। মিটিং, মিছিল, স্লোগান প্রতিরোধের উদ্বেল অভিযাত্রায় রাজপথে অচিরেই জনগণের বিপুল তরঙ্গ উঠবে। 

তিনি বলেন, আগামী ১২ই জুলাই, বুধবার নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ঐদিন দলের পক্ষ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে। এই সমাবেশ সফল করার জন্য ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

এ সময় তিনি সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা এবং মামলার বিবরণ তুলে ধরে বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মহিউদ্দিন আদালত থেকে জামিন লাভের পর কারাগার থেকে বের হওয়ার আগ মূহুর্তে শ্রীনগর থানার ৩২ (৮) ২০২২ এর পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করে। গতকাল খাগড়াছড়ি সদর পৌরসভার আওতাধীন ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা হামলায় চালিয়ে কার্যালয়ের ভিতরে থাকা ছবি ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং হামলায় জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নাছির সিকদার, সহ সভাপতি আমির খাঁন গুরুতর আহত হয়। সন্ত্রাসী নাঈম গং-সহ প্রায় ৩৫ জন এ হামলা সংঘটিত করে।

 গতকাল নাটোর জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেছে। হামলায় অংশ নেন নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ বিন আজিজ, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শাহিন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাকিবুল হাসান জেমস, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব, পৌর যুবলীগের সদস্য শরিফুল ইসলাম শরিফ, জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি রোকন, লক্ষীপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান নুর ও আর.এস.টি.ইউ ইউনিভার্সিটি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান সহ ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের সন্ত্রাসীরা।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ভূজপুর থানাধীন ১নং বাগানবাজার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি সাব্বির আজমকে গতকাল ৭ জুলাই দিবাগত রাতে আধাঁরমানিক সড়ক থেকে বাড়ী ফেরার পথে সন্ত্রাসী বাহিনী বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে এবং তার একটি পা ভেঙ্গে ফেলে। গতকাল ৮ জুলাই ২০২৩ইং তারিখে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানাধীন বারদি ইউনিয়ন ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক ইউনুস গাজীর পিতা শাহ আলমকে যুবলীগ সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করেছে। লক্ষীপুর জেলা সদরে গতকাল ৮ জুলাই ২০২৩ইং তারিখ যুবদল নেতা কামাল উদ্দীন এর উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়ে উল্টো তার বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মিথ্যে মামলা দায়ের করে। 

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সহ শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ তালুকদার, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ।