গাজায় ‘জাতিগত নিধন’ চালাচ্ছেন নেতানিয়াহু, ইসরাইলি মিডিয়ার অভিযোগ

রোববার (১০ নভেম্বর) প্রকাশিত পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে নেতানিয়াহু ও ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে গাজার উত্তর অংশে নির্দিষ্ট জনসংখ্যাকে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত নিধন কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ করা হয়েছে।

গাজায় ‘জাতিগত নিধন’ চালাচ্ছেন নেতানিয়াহু, ইসরাইলি মিডিয়ার অভিযোগ

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজায় ‘জাতিগত নিধন’ চালানোর অভিযোগ তুলেছে খোদ দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হারেৎজ। রোববার (১০ নভেম্বর) প্রকাশিত পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে নেতানিয়াহু ও ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে গাজার উত্তর অংশে নির্দিষ্ট জনসংখ্যাকে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত নিধন কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ করা হয়েছে।

হারেৎজের সামরিক প্রতিবেদক গত সপ্তাহে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে ওই এলাকা পরিদর্শন করে রিপোর্ট করেছেন যে, গাজার উত্তর অংশ যেন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির সম্পাদকীয়তে একে ‘মানুষ দ্বারা পরিচালিত ধ্বংসযজ্ঞের পূর্বপরিকল্পিত কর্মকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

এদিকে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ১৬২তম ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইৎসিক কোহেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কাজ হলো একটি পরিস্কার এলাকা তৈরি করা... আমরা ফিলিস্তিনি জনসংখ্যাকে তাদের সুরক্ষার জন্য স্থানান্তর করছি, যাতে আমাদের বাহিনীগুলোর জন্য স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়’। 

যদিও ‘জেনারেলস প্ল্যান’-এর উল্লেখ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। তবে এটুকুই বলেন যে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী কেবল সামরিক বাহিনী প্রধানের নির্দেশেই কাজ করছে। কোহেন আরও যোগ করেন, তার অধীনস্ত ডিভিশন ফিলিস্তিনিদের জন্য আসা মানবিক সাহায্য গাজার উত্তর অংশে সরবরাহ না করে দক্ষিণের দিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

ইসরাইলি বাহিনী এ বছর অক্টোবরের শুরুতে গাজার উত্তর অংশে নতুন করে অভিযান শুরু করার পর থেকেই খাদ্য, পানি এবং ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া এবং বেইত হানুনসহ পুরো অঞ্চলের ফিলিস্তিনি জনগণ বড় ধরণের মানবিক ও খাদ্য সংকটে পড়েছে। 

এ বিষয়ে ফেমিন রিভিউ কমিটি (এফআরসি) নামক একটি স্বাধীন সংস্থা শনিবার জানিয়েছে, ‘গাজার উত্তর অংশে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা তীব্র’।  এদিকে জাতিসংঘের রিলিফ ওয়ার্কস এজেন্সির (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ্পে লাজারিনি বলেছেন, ইসরাইল গাজার জনগণের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করছে। সেই সঙ্গে তিনি আসন্ন দুর্ভিক্ষকে ‘মানবসৃষ্ট’ হিসাবেই বর্ণনা করেছেন।

এ নিয়ে হারেৎজ-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘এ বিষয়গুলোকে তার সঠিক নামে চিহ্নিত করা জরুরি। গাজার উত্তর অংশ থেকে জোরপূর্বক গাজার জনগণকে উৎখাত করা হচ্ছে, যা নেতানিয়াহু এবং তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনায় পরিচালিত হচ্ছে’। 

‘জেনারেলস প্ল্যান’ না বলে ‘নেতানিয়াহুর নির্দেশনা’ হিসাবে বিষয়টিকে চিহ্নিত করা উচিত বলেও ইসরাইলি পত্রিকার সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়। মূলত এই প্রতিবেদনে ইসরাইলের আক্রমণের প্রভাব ও এর গুরুতর পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে। যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এদিকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৪৩,৬০৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,০২,৯২৯ জন আহত হয়েছেন।

চলমান সংঘর্ষে নিহত এবং আহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চরম চাপের মধ্যে রয়েছে। অনেক হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইতোমধ্যেই উপকরণের সংকটে পড়েছে এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আহতদের সহায়তায় হিমশিম খাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানানো হচ্ছে এবং সংঘর্ষের অবসানে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি উঠেছে। সূত্র: মিডল ইস্ট আই