গাজীপুরে লোডশেডিংয়ে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

দিনে কোথাও পাঁচ-ছয়বার আবার কোথাও এর চেয়ে বেশি সময় ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে কল-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন শিল্প মালিক। উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকরা হারাচ্ছেন কর্মসংস্থান।

গাজীপুরে লোডশেডিংয়ে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

প্রথম নিউজ,গাজীপুর: গাজীপুরে লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে নিয়ম কানুন মানা হচ্ছে না। দিনে কোথাও পাঁচ-ছয়বার আবার কোথাও এর চেয়ে বেশি সময় ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে কল-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন শিল্প মালিক। উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকরা হারাচ্ছেন কর্মসংস্থান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে গাজীপুর গ্যাস সমস্যা রয়েছে। গ্যাসের চাপ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চলছে উৎপাদন কাজ। কিন্তু লোডশেডিংয়ে এ পদ্ধতিতেও কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে কারখানার অর্ডার।

কয়েকজন কারখানা মালিক জানান, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে দেখা গেছে চিন্তার ভাঁজ। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা মালিকদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন অনেক শ্রমিক।

অপরদিকে শ্রমিকদের মধ্যে যারা উৎপাদন চুক্তি অর্থাৎ প্রডাকশন রেটে কাজ করেন তারা স্বাভাবিকের চেয়ে পারিশ্রমিক কম পাচ্ছেন। নগরীর জয়দেবপুর, ভোগড়া, লক্ষ্মীপুরা, বোর্ডবাজার, কোনাবাড়ী, কাশিমপুরসহ আশপাশের এলাকায় বিদ্যুতের অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গাজীপুর পল্লীবিদ্যুৎ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৬৫০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট। ২০০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট ঘাটতি মোকাবিলায় লোডশেডিং হচ্ছে দফায় দফায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনাবাড়ীতে অবস্থিত এ জেড টেক্সটাইলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে কারখানা প্রতিদিন ১০০ টন টেক্সটাইল সামগ্রী উৎপাদন করতো। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে তা নেমে এসেছে ১০ থেকে ১৫ টনে। তাও কাজ করা যায় রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত। এতে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি টাকার উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্রেতাদের সময় মতো সরবরাহ করতে পারছি না বলে নিজের খরচের কয়েকগুণ বেশি টাকায় পণ্য বিমানে পাঠাতে হচ্ছে। আবার নতুন করে কোনো অর্ডারও নিতে পারছি না। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর বোর্ড বাজারের জাঝর এলাকার ইউনিক অ্যাপারেলসে গিয়ে দেখা গেছে, উৎপাদন বন্ধ। শ্রমিকদের কেউ বাইরে কেউ কারখানার ভেতরে আড্ডায় মশগুল। সুপারভাইজার মতিউর রহমান বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টায় বিদ্যুৎ গেছে। এখন সাড়ে ১২টা বাজলেও বিদ্যুৎ আসার খবর নেই।

গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাসন সড়ক এলাকায় মীম ডিজাইনের ব্যবস্থাপক আবু তাহের মিয়াজী বলেন, ‘বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অতিরিক্ত খরচ দিয়ে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে এতে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়ছে তেমনি মেশিনপত্রও নষ্ট হচ্ছে। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে কারখানর আংশিক অংশ চালু রাখা হয়। এতে অনেক শ্রমিক বেকার বসে থাকে। ফলে পোশাক ও টেক্সটাইল কারখানায় আগের চেয়ে উৎপাদন কমেছে।’

গাজীপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সিনিয়র জিএম যুবরাজ চন্দ্র পাল বলেন, ‘প্রতিদিন ৪৩৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে আমরা পাচ্ছি প্রায় ৩৩৫ মেগাওয়াট। ১৫৫টি ফিডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো হয়। এর মধ্যে ১০০টি ফিডারে শিল্প-কারখানা রয়েছে। বাকিগুলো আবাসিক। শিল্প-কারখানায় লোডশেডিং না দিতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। তাই ওই ১০০টি বাদ দিয়ে ৫৫টি ফিডারে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় গ্রিড থেকে সরাসরি লোড ম্যানেজমেন্ট করা হয়। উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে দ্রুত নতুন নিয়মে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এরপরও গ্রাহক জানতে পারছে না কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং হবে।’

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ-২ এর মাওনা কার্যালয়ের ডিজিএম আহাম্মদ শাহ আল জাবেদ বলেন, ‘উপজেলায় চাহিদা ৯৫ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৬০ বা ৬৫ মেগাওয়াট। ঘাটতির ৩০-৩৫ মেগাওয়াট সামাল দিতে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। উপজেলার ২৭টি ফিডারের সবকটিতেই শিল্প-কারখানা রয়েছে। ফিডারগুলোতে পর্যায়ক্রমে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পরপর এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। ফলে কমপক্ষে প্রতিদিন ১০-১২টা ফিডার বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom