খেয়াঘাটে সিন্ডিকেট, একটি ডাবের টোল নিচ্ছে ৩০ টাকা

ঘাট পারাপারে ইজারাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ।

খেয়াঘাটে সিন্ডিকেট, একটি ডাবের টোল নিচ্ছে ৩০ টাকা

প্রথম নিউজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীতে দুই প্যাকেজে পাঁচটি খেয়াঘাট রয়েছে। উপজেলার মনোহরপুর, লক্ষ্মীপুর, পাঁকা, নিউ পদ্মা ও উজিরপুর এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। ঘাট পারাপারে ইজারাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। টোল আদায়ের তালিকা ঘাটে টাঙানোর নিয়ম থাকলেও তার তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছামতো আদায় করছেন ইজারাদাররা। এমনকি একটি ডাব, একটি গাছের চারারও জোরপূবর্ক টোল আদায় করা হচ্ছে।

প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি ইজারাদারদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন চরাঞ্চলের শত শত মানুষ। ১৯শে ফেব্রুয়ারি শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, পদ্মার ভাঙনের কারণে চরাঞ্চলের মানুষকে প্রায় প্রতি বছর বাড়ি ভাঙতে হয়। এসব ভাঙাবাড়ি নদীর এপার-ওপার করতে ইজারাদারদের বাধ্যতামূলক দিতে হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। টাকা না দিলে কোনো ঘাট পার হওয়া যায় না।

এমনকি চাহিদামতো টোলের টাকা পরিশোধ না করতে পারলে আটকে রাখা হয় মালামাল। একদিকে বার বার বাড়ি ভাঙতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ, অপরদিকে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইজারাদারদের গলাকাটা টোল আদায়। চরাঞ্চলের বাসিন্দা আশিকুল ইসলাম বলেন, একজন বয়স্ক মানুষ বাড়িতে লাগানোর জন্য শিবগঞ্জ থেকে একটি পেয়ারা গাছের চারা কিনেন ৪০ টাকা দিয়ে কিন্তু ওই চারাটির ইজারা চাওয়া হয় ৩০ টাকা। টাকা দিতে না পারায় বাধ্য হয়ে নদীতে ফেলে দিতে হয়েছে। রুহুল আমিন নামে আরেকজন বলেন, ইজারাদারদের যোগসাজশে নদীতে নৌকার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন নৌকা মানুষ পারাপারের জন্য নিয়ে এলেও ২০০০-৩০০০ হাজার টাকা টোল দিতে হয়। সিন্ডিকেট না থাকলে ৩০০-৫০০ টাকায় পারাপার হওয়া সম্ভব। সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ- শহরে একটি ডাবের দাম ৯০-১০০ টাকা। ইজারাদাররা একটি ডাবের টোল নিচ্ছে ৩০ টাকার উপরে। এছাড়া যদি কেউ মারা যায়, সে মরদেহ এপার থেকে ওপারে অথবা চরাঞ্চল থেকে শিবগঞ্জের দিতে গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা।

বিষয়গুলো স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েও প্রতিকার মিলেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেরিঘাটের ইজারাদার মো. রিপন আলী বলেন, যারা অতিরিক্ত পণ্য বহন করে শুধুমাত্র তাদের কাছ থেকেই টোল আদায় করা হয়। ঘাটে কোনো সিন্ডিকেট নাই। টোল আদায়ে কাউকে বাধ্যও করা হয় না। অনেক গরিব মানুষ আছেন- যারা টোলের টাকাও দিতে পারেন না।  তাদের ফ্রি পার করা হয়। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএফএম আবু সুফিয়ান বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি বাধ্য করে বা জিম্মি করে অতিরিক্ত টোল আদায় করে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।