খালেদা জিয়ার পরিপাকতন্ত্রের ‘রক্তক্ষরণ’ বন্ধে বিদেশে নেয়া অতি জরুরী: মির্জা ফখরুল
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে যদি জনমত জরিপ করেন দেখবেন শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ মানুষ এর পক্ষে
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিপাকতন্ত্রের ‘রক্তক্ষরণ’ বন্ধে তাকে বিদেশে নেয়া অতি জরুরী বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যে সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে তিনি একথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে অসুখ সেই অসুখটা হচ্ছে প্রধানত: তার পরিপাকযন্ত্রে। তার(খালেদা জিয়া) অনেক অসুখ। এখন যেটা তার জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে সেটা হচ্ছে , তার পরিপাকতন্ত্র থেকে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেই রক্তক্ষরণকে বন্ধ করা।”
‘‘ এখন ঠিক কোন জায়গায় তার রক্তপাত হচ্ছে এটাকে বের করার জন্যে আমাদের ডাক্তাররা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ডাক্তার তারা, গত কয়েকদিন ধরে তারা বিভিন্ন রকম কাজ করছেন। চিকিৎসার যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতিতে তারা করেছেন। কিন্তু একটা জায়গায় এসে তারা এগুতে পারছেন না।কারণ আর সেই ধরনের কোনো টেকনোলজি বাংলাদেশে নাই, সেই টেকনোলজি দিয়ে তারা সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারেন। যে কারণে ডাক্তারা(শ্রেষ্ঠ ডাক্তাররা) বার বার বলছেন যে, তাকে(খালেদা জিয়া) একটা এডভান্স সেন্টারে নেওয়া দরকার যেখানে এই ডিভাইসগুলো আছে, এই টেকনোলজিগুলো আছে সেই যন্ত্রপাতিগুলো আছে যেখানে গেলে তার যে সঠিক রোগ, সেই রোগের জায়গাটা তারা ধরতে পারেন।”
গত ১৩ নভেম্বর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। তার চিকিতসার জন্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে নব্বইয়ের ডাকুস ও ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে ডা. শামসুল আলমের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে, আমাদের দেশে যারা সরকারি দলের রাজনীতি করছেন তাদের ন্যুনতম রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার তো নেই্, তাদের মানবিক বোধ তো নেই। আর নিজের সম্পর্কে তাদের এতো বেশি দাম্ভিকতা যে তারা যেকেনো ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে কটুক্তি করতে তারা এতটুকু দ্বিধা করেন না।”
‘‘ তারা একবারও মনে করেন না যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন সেই মহিয়শী নারী যিনি ১৯৭১ সালে তার স্বামী যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন তার শিশু পুত্রকে হাতে ধরে তিনি পালিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন এবং সেখানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে ক্যান্টমেন্টের কারাগারে ছিলেন। অর্থাত দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণভাবে ছিলো।”
পরিবর্তিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে স্বৈরাচারি বিরোধী আন্দোলন গৃহবধু থেকে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘‘ সব কিছু ভুলে যায় তারা। ১/১১ তে যখন শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলেন তখন এই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার মুক্তির জন্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন। গণতন্ত্রের বিশ্বাস করা এমন একজন নেত্রী আজকে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কেনো দিচ্ছেন সবাই আমরা বুঝি, কেনো দিচ্ছেন সবাই জানে।”
‘‘ আপনি যদি সরিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনি মনে করছেন যে, আপনার সামনে বড় একটা কাটা সরে গেলো। আপনার ক্ষমতায় থাকা আপনার জন্য বেশি সুবিধা হবে।”
ফখরুল বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে প্রতীক।”
‘‘ আজকে সব শ্রেনীর মানুষকে, সব পেশার মানুষকে,সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিকে আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ আমি আগেই বলেছি, স্বৈরাচার আর ফ্যাসিবাদ এক নয়। এই ফ্যাসিবাদ আরো ভয়ংকর। ইতিমধ্যে আমাদের সকল অর্জন তারা ধবংস করে দিয়েছে, ইতিমধ্যে আমরা স্বাধীনতার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, যে আশা-আকাংখা ছিলো তা ধূলিসাত করে দিয়েছে, ইতিমধ্যে আমাদের নতুন প্রজন্মের যে সম্ভাবনা আছে তাকে ধূলিসাত করে দিয়েছে, অর্থনীতিকে ধবংস করে দিয়েছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধবংস করে দিয়েছে তারা। আসুন গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌ্মত্বকে রক্ষা করার জন্য যিনি প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই।”
দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠায় ডা. মিলনের আত্মত্যাগ থেকে সকলকে শিক্ষা নেওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘‘ বাংলাদেশে এখন একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। এটা শুরু হয়েছে ্১/১১ থেকে। ১/১১ থেকে বিরাজনীতিকরণের চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তারই পরিণতি হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে যদি জনমত জরিপ করেন দেখবেন শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ মানুষ এর পক্ষে। আওয়ামী লীগের অনেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর পক্ষে, অনেক মন্ত্রীর সাথে আলাপ করেন দেখবেন তারা বলবেন, তাকে যেতে দেয়া হোক। বিপক্ষে শুধু এক জন ...।”
ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো না হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে, ঢাকা থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। প্রয়োজনে আমরা নব্বইয়ের ছাত্রনেতারা রাজপথে শহীদ হবো। ”
১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর স্বৈরাচার এইচএম এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের(টিএসসি) সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. শামসুল আলম।
সকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরে ডা. মিলনের সমাধিস্থলে পুস্পমাল্য অর্পন করেন ৯০‘র ডাকসুর ভিপি আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে ওই সময়ের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতৃবৃন্দ।
আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, খন্দকার লুতফুর রহমান, সাইফুদ্দিন মনি, আসাদুর রহমান খান আসাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম আলিম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ড্যাব) অধ্যাপক হারুন আল রশিদ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: