কুষ্টিয়া সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অচলাবস্থা 

সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন আমেনা খাতুন। তিনি একদিন অফিস করে এখন পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছেন। ফলে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

কুষ্টিয়া সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অচলাবস্থা 

প্রথম নিউজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ রায় প্রায় চার মাস আগে বদলি হয়েছেন। এর তিন মাস পর নতুন সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন আমেনা খাতুন। তিনি একদিন অফিস করে এখন পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছেন। ফলে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও সেবা প্রার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

অন্যদিকে সরকার প্রতিদিন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুই-একদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অন্য উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যা সমাধান না হওয়ায় কার্যালয়ের অবস্থা নাজুক বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রার সৈয়দা রওশন আরা।

এছাড়া কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ঘুষ, অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে সরকারি এই কার্যালয়টি। অবিলম্বে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে একজন দায়িত্ববান, সৎ, যোগ্য সাব-রেজিস্ট্রারকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। 

সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চার মাস আগে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ রায় দিনাজপুরে বদলি হন। এরপর থেকে সাব-রেজিস্ট্রার শূন্য কার্যালয়ের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে দুই-একদিন অন্য উপজেলা থেকে সাব-রেজিস্ট্রার এসে কাজ করেন। গত এক মাস আগে ঝিনাইদহ সদর থেকে বদলি করে সাব-রেজিস্ট্রার আমিনা বেগমকে কুষ্টিয়া সদর অফিসে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর অফিসের প্রথম দিনেই দলিল লেখকদের সঙ্গে নতুন সাব-রেজিস্ট্রারের ঝামেলা হয়। এরপর থেকে আমিনা বেগম অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে আছেন।

এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবাগ্রহীতারা। প্রতিদিন গড়ে ৫০টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে। এতদিন ধরে দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকায় দলিল করতে আসা দাতা ও গ্রহীতারা যেমন বিপাকে পড়েছেন, তেমনি সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। জমি কেনাবেচা ও জরুরি কাজে দলিল উত্তোলন করতে এসে সেবাগ্রহীতারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অপরদিকে বেকার সময় পার করছেন দলিল লেখক ও তাদের সহকারীরা। 

ভুক্তভোগীরা বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের অভাবে কাজ হচ্ছে না। দলিল নিতে এসে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। দলিল রেজিস্ট্রি ও দলিলের নকল না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকে। সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর ছাড়া কিছুই হয় না। এমন গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তা মাসের পর মাস না থাকায় মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় সব কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে আমাদের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। 

এছাড়াও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অফিসের সামনে বোর্ডে যে সরকারি ফি লেখা থাকে সেই টাকায় কেউ কাজ করতে রাজি হন না। ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি টাকা দিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন সেবাগ্রহীতারা। সরকারের কাছে এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন সেবাগ্রহীতারা। 

কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রার সৈয়দা রওশন আরা বলেন, প্রায় চার মাস ধরে সাব-রেজিস্ট্রার নেই। এক মাস আগে একজন যুক্ত হয়েছে। তিনি একদিন অফিস করার পর থেকে ছুটিতে আছেন। সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। অন্যান্য উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রাররা আমার কথা শোনেন না। মাঝে মধ্যে দুই-একদিন অফিস চলে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি, কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। 

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত না। নতুন সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কোনো ঝামেলাও হয়নি আমাদের। সুব্রত স্যার যাওয়ার পর থেকে প্রায় ৪ মাস ধরে নিয়মিত অফিস চলছে না। নতুন সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে হাসিনা ম্যাডাম রোজার মধ্যে মাত্র একদিন অফিস করেছেন, সেদিন ১৪টা দলিল করেছিলেন। এখন উনিই দায়িত্বে আছেন। কিন্তু অফিস করেন না। উনি মাত্র একদিন অফিস করেছেন। ব্যাক পেইনের সমস্যার জন্য উনি নাকি ছুটিতে আছেন। অথবা কুষ্টিয়া অফিস হয়তো তার ভালো লাগেনি। তিনি ঝিনাইদহ ছিলেন, ওখানে হয়তো ভালো ছিলেন। এসব অফিস মন মতো না হলে কেউ থাকে না। সদর অফিসে চাপ বেশি। স্থায়ীভাবে একজন সাব-রেজিস্ট্রার ছাড়া এই অফিস চলে না। এজন্য সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিস চলা দরকার, স্থয়ী সাব-রেজিস্ট্রার দরকার। অফিস বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার আমিনা বেগমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।