মৃতদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, সেলফি, তোরাজা জাতিদের আশ্চর্য উৎসব!
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রহস্য কী? মানব সভ্যতা বুড়ো হতে চলেছে, আধুনিকতার হাজারও শিখর ছোঁয়া হয়ে গিয়েছে, তবুও যে রহস্যের মিমাংসা হয়নি!
প্রথম নিউজ, ডেস্ক: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রহস্য কী? মানব সভ্যতা বুড়ো হতে চলেছে, আধুনিকতার হাজারও শিখর ছোঁয়া হয়ে গিয়েছে, তবুও যে রহস্যের মিমাংসা হয়নি! ভবিষ্যতে হবে বলেও মনে হয় না। সেই অতি চেনা রহস্যময় প্রশ্ন হল, মৃত্যুর পর কোথায় যায় মানুষ? বিষয়টি মিমাংসাহীন বলেই হয়তে এ-গ্রহে যত সম্প্রদায়, যত ধর্মবোধ, যত রকম সংস্কতি ছিল ও আছে, মৃত্যুর পরে কোথায় যায় মানুষ, আত্মা আছে কি নেই, তা নিয়ে তত রকম উত্তর মেলে। ইন্দোনেশিয়ার (Indonesia) তোরাজা (Toraja) সম্প্রদায়েরও একটি নিযস্ব উত্তর রয়েছে। কী সেই উত্তর? উত্তর বড্ড নস্টালজিক। তোরাজারা মৃত স্বজনদের কাছ ছাড়া করতে চান না কিছুতে। মৃতেরা তা বুঝুক আর না বুঝুক তাতে কী এসে যায়! প্রয়াত দাদু-দিদা-বাবা-মা-জ্যাঠা-কাকাদের সঙ্গে নিয়েই এক আশ্চর্য উৎসবে মাতেন তোরাজা সম্প্রদায়ের মানুষেরা। যে উৎসবের নাম ‘মা নেনে’। বলে রাখা ভাল, এ এমন উৎসব যাতে ভয় খায় অনেকে, অনেকের কাছে ঘেন্নার উৎসবও বটে। কেন?
আসলে কবর খুঁড়ে পূর্বপুরুষের মৃতদেহ বের করা হয় প্রথমে, তারপর সেই শবের সঙ্গে সময় কাটানোই এই উৎসবের রীতি। প্রতি বছর বর্ষাকালে হয় অদ্ভুতুড়ে উৎসব। প্রথমে সমাধি খুঁড়ে প্রিয়জনদের দেহাবশেষ তুলে আনেন তোরজা সম্প্রদায়ের পুরুষরা। প্রাণহীন দেহগুলিকে নতুন পোশাক পরানো হয় তারপর। এরপর শবদের দেওয়া হয় ভালো-মন্দ খাবার। এমনকি মদ, সিগারেট। মোদ্দা কথা, জীবিত অবস্থায় পূর্বপুরুষরা যা যা ভালবাসতেন শবদেহগুলিকে তাই তাই দেওয়া হয়। আর পাঁচটা উৎসবে যেমনটা হয়, এই উৎসবেও তুমুল আনন্দে মাতেন তোরাজা নারী-পুরুষরা। সাজানো দেহগুলির পাশে দাঁড়িয়ে আনন্দ করে ছবি তোলেন যুবক-যুবতির দল। সেলফি তোলেন মরা বাপ-কাকার সঙ্গে। এমন ‘উদ্ভট’ রীতির কথা জেনে অনেকে হয়তো ভাবছেন, তোরাজারা বোধ হয় বিলুপ্তপ্রায় কোনও সম্প্রদায়। মোটেই তা নয়। ইন্দোনেশিয়ায় 10 লাখ তোরাজা সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। অধিকাংশই দেশের দক্ষিণের পাহাড়ি এলাকা সুলাওয়েসি প্রদেশের বাসিন্দা।
তোরাজাদের মধ্যে আধুনিক সময়ের ছোঁয়া যে লাগেনি তা নয়। পোশাক দেখলেই তা আন্দাজ হয়। তবে কিনা বহুকালের রীতি-রেওয়াজ থেকেও সরে আসেনি তাঁরা। ফলে ‘মা নেনে’ ছাড়াও একাধিক নিযস্ব রীতি রয়েছে তাঁদের। যেমন, দাঁত ওঠার আগেই যদি শিশুর মৃত্যু হয়, তবে বড় গাছের গুঁড়িতে গর্ত করে সেখানেই সমাধি দেওয়া নিময়। অকালপ্রয়াত শিশুর দেহ শরীরে নিয়েই বেড়ে ওঠে গাছ! তাছাড়া শুরুতেই যে বলা হয়েছিল, মৃত স্বজনদের কাছছাড়া করতে চায় না তোরাজারা। তার আরেক প্রমাণ, অনেক সময়েই মৃতদেহ দ্রুত সৎকার করে না তারা। কখনও এক সপ্তাহ, কখনও বা এক মাস অবধি নিজস্ব পদ্ধতিতে মমি করে বাড়িতেই রেখে দেওয়া হয় প্রয়াতের শরীর। মৃতের সমাধিও হয় বাড়ির মধ্যে, খুব বেশি হলে সংলগ্ন জমিতে।
প্রতি বছর অগাস্ট মাসে মাটি খুঁড়ে তুলে আনা হয় সেইসব শবদেহ। ‘মা নেনে’ উৎসবের ক’দিন শবদেহগুলির সঙ্গে জীবিতের মতোই ব্যবহার করা হয়। সপরিবারে খাওয়াদাওয়ার সময় নতুন পোশাক পরা মৃতদেহরাও উপস্থিত থাকেন ডায়নিং টেবিলে। তাদের সঙ্গে কথাও বলেন জীবিতরা! মৃতেরা কি উত্তর দেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে নারাজ তোরাজারা। ওঁরা জানিয়ে দেন, “মা নেনে” উৎসব খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত নতুন প্রজন্মের জন্যে। এর ফলে পারিবারিক মূল্যবোধ বাড়ে। সম্পর্ক হয় ফেলে আসা অতীতের সঙ্গে।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: