কিশোরগঞ্জে হাওরে পর্যটন বাড়লেও, বাড়ছে পরিবেশ নষ্টের ঝুঁকি
এতে হুমকির মুখে পড়েছে শুকনো মৌসুমে হাওর অঞ্চলের চাষাবাদ।

প্রথম নিউজ,কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের নিকলী, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলার প্রায় সবটুকু এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হাওর। এই হাওর উপভোগ করতে নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকায় দেখা যায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণপ্রেমীরা ছুটে আসেন কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরে। বর্তমানে দেশে বেড়েছে হাওর-বাওর কেন্দ্রিক পর্যটন। সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশাপাশি প্রতিদিন কিশোরগঞ্জের চার উপজেলার হাওরে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। তবে এই পর্যটন শিল্প যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিশাল সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে পরিবেশ নষ্ট হবার ঝুঁকি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শুকনো মৌসুমে হাওর অঞ্চলের চাষাবাদ।
কিশোরগঞ্জের চার উপজেলা নিকলী, ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম হাওর এলাকা হিসেবে পরিচিতি। বর্ষায় হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ছুটে আসেন প্রায় অর্ধলাখ প্রকৃতিপ্রেমী। এ হাওরের সৌন্দর্যে খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ পরিবেশের স্বকীয়তা। ওপরে নীল আকাশ, নিচে বিস্তৃত নীল জল হাওর পর্যটনকে ঘিরে এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জে গড়ে উঠছে হোটেল-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। বর্ষাকালের কয়েক মাস কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলসহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জলরাশি মেলে ধরে পর্যটন এলাকার মোহনীয় রূপ। বিশেষ করে ‘অলওয়েদার রোড' সড়কটি পাল্টে দিয়েছে হাওরের চেহারা, সূচনা করেছ যুগান্তকারী যোগাযোগ ব্যবস্থার। এই সড়ক ও ২২টি দৃষ্টিনন্দন সেতু হাওরের সৌন্দর্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
বর্ষাকালের চারটি মাস হাওরে দেখা মেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নৈসর্গিক রূপ। তখন দূর-দূরান্তের মানুষ ছুটে আসে হাওরে। শত শত রং-বেরঙের ট্রলার সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে থাকে। পর্যটকরা সেগুলো দিন চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে বিস্তীর্ণ হাওরে ঘুরে বেড়ান। ট্রলার ভেদে ভাড়া আড়াই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। তবে পর্যটন শিল্পের প্রসার হলেও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাওর এলাকার পরিবেশ। শুকনা মৌসুমে চাষাবাদ ব্যাহত করছে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক আর পলিথিন বর্জ্য। সরজমিনে দেখা যায়, প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের প্লেট, ওয়ানটাইম বিরিয়ানির প্যাকেট, কফির কাপসহ অপচনশীল বিভিন্ন পলিথিন। তাছাড়া এই পর্যটনীয় এলাকায় ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা নদীর বুকে ভাসছে এতে হারাচ্ছে হাওরের সৌন্দর্য।
স্থানীয় কৃষক আবুল কালাম বলেন, এভাবে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া ময়লায় আমাদের পরিবেশের খুব ক্ষতি হচ্ছে। শুকনো মৌসমে হাল চাষ করতে গেলে প্লাস্টিকের বোতলগুলো ট্রিলারের দা এর মাধ্যমে টুকরো হয়ে জমিতে মিশে যায়। এরপর জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে প্লাস্টিকের বোতলের টুকরায় আমাদের পা কেটে যায়। এ বিষয়ে সরকার যদি উদ্যোগ নিত বা ইউএনও যদি ভালো কোনো উদ্যোগ নিত তাহলে পরিবেশ আরও সুন্দর হত। নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকার স্পিডবোটের চালক বলেন, বেড়িবাঁধ এলাকায় যেভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এভাবে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয় তাহলে সবার জন্যই ভালো। পরিছন্ন থাকলে পর্যটকদের জন্য ভালো। তিনি আরও বলেন, ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে পরিচ্ছন্ন করা হয় না এখানে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এখানের সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষার্থে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন ব্যবহার ও তদারকি করা উচিত।
পরিবেশ বাদী সংগঠন বিডি ক্লিনের কিশোরগঞ্জ শাখার উপ-সমন্বয়ক বলেন,যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা এদিক সেদিক ফেলে আমরাই পরিবেশকে ধ্বংস করছি,এই বিষয়ে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।হাওরে যদি সৌন্দর্যতা ধরে রাখতে চাই তাহলে পরিচ্ছন্নতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা মনে করি পর্যটন শিল্প প্রসারের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় দরকার কঠোর নজরদারি। তাহলেই রক্ষা পাবে হাওরের কৃষি। এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন,হাওরে যত্রতত্র ময়লা ফেলার এই বিষয়টি নতুন কিছু নয় আমরা হাওরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করছি ডাস্টবিনও দেওয়া আছে।
নিকলী সদর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম বলেন, এ এই বেড়িবাধ এলাকায় কখনোই ডাস্টবিন দেওয়া হয়নি। মানুষ যে যেভাবে পারে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলছে। মাঝে মাঝে ইউএনও স্যার অভিযান চালায় তখন আমরাও যাই কিন্তু তারপর আবার সেই আগের অবস্থা ফিরে আসে । এই বিষয় স্থানীয় মেম্বার আরও বলেন, ভবিষ্যতে পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে কিনা সেটা চেয়ারম্যান সাহেব বলতে পারেন।
নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকায় ওভাবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। গত বছর আমার গ্রাম পুলিশ ও লেবারের মাধ্যমে একবার পরিচ্ছন্ন করেছিলাম । তাছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমি পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রমে যাচ্ছি না। আমি গত মাসেও উপজেলার আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ বেড়িবাঁধ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে উপস্থাপন করেছি কিন্তু এই বিষয়টি আমি একা বললেতো হবে না।
তিনি আরও বলেন, গত ৩ বছর আগে আমি কিছু ড্রাম্প কেটে ডাস্টবিন বসিয়েছিলাম কিন্তু কিছুদিন পর কে বা কারা সেটি চুরি করে নিয়ে যায়। তাছাড়া জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়নি। শুকনো মৌসুমে প্লাস্টিকের বজ্যের জন্য কৃষকদের কৃষি কাজে সমস্যা হয় ।