করাঙ্গী নদী খননে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ কিলোমিটার নদী খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

করাঙ্গী নদী খননে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

প্রথম নিউজ, হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বাহুবলে করাঙ্গী নদী খনন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে জোড়াতালি দিয়ে খনন করে আসছে বলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তবে ঠিকাদারের দাবি, কাজ এখন চলমান রয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে বিষয়টি আপোষ করা হয়েছে।

সূত্রমতে, বাহুবল উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা করাঙ্গী নদী খননের অভাবে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে কৃষিকাজে পানি সরবরাহসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়রা। এর পরিপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ কিলোমিটার নদী খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ৩১ মে।  কিন্তু কাজের শুরুতেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলে স্থানীয়রা।

তাদের অভিযোগ, নদীর গভীরতা ৫-৬ ফুট ও বাঁধের প্রস্থ ৩০ ফুট হওয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সভেটর মেশিন দিয়ে দুই পাড়ের বাঁধে দায়সারাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আবার কোনো স্থানে নদী ছোট করে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি কিংবা নদীতে জোয়ার আসলে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাবে কৃষি জমিসহ গ্রামাঞ্চল। ভোগান্তিতে পড়বে হাজার হাজার মানুষ। এ অবস্থায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ সঠিকভাবে কাজ করার জন্য বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন স্থানীয়রা।

করাঙ্গী নদী পাড়ের বাসিন্দা আয়াত আলী জানান, নদী খননের কাজে শুরু থেকেই অনিয়ম হচ্ছে। সিডিউল অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, করাঙ্গী নদী খননের নামে হরিলুট চলছে। নদীর অনেক স্থানে পুরাতন বাঁধ কেটে নতুন বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। ফলে সামান্য পরিমাণ বৃষ্টি কিংবা জোয়ার আসলে বাঁধ ভেঙে ফসলহানিসহ বাড়িঘর তলিয়ে যাবে।

স্থানীয় আলাপুর গ্রামের বাসিন্দা নুর মিয়া জানান, বাঁধ খননের নামে পুরাতন বাঁধ কেটে ঘষামাজা করা হচ্ছে। ১৯ কোটি টাকার কাজ বাস্তবে ১ কোটি টাকাও খরচ করা হয়নি। অবিলম্বে নদী খননের কাজ পুনরায় করতে হবে নতুবা বৃষ্টি আসলেই বাঁধ ভেঙে প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে।

আব্দুল হক নামে এক ব্যক্তি জানান, সিডিউল অনুযায়ী করাঙ্গী নদীর খনন কাজ হচ্ছে না। নদীর গভীরতা ৫-৬ ফুট হওয়ার কথা এবং প্রস্থ ৩০ ফুট কিন্তু এখানে দায়সারাভাবে কাজ হচ্ছে। এখানে খননের নামে হরিলুট চলছে। বাহুবল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আহমেদ কুটি জানান, দুঃখজনক হলেও সত্য, করাঙ্গী নদী খননের নামে হরিলুট চলছে। যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স সেখানে নদী খননের নামে প্রকাশ্যে লুটপাট করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। যদি নদী খনন সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে না হয়, তাহলে সমগ্র বাহুবলবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বাহুবল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং নদী হাওর, পাহাড় ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুল হাই জানান, করাঙ্গী নদী খননের কাজে শুরু থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। বিষয়টি আমরা দেখে প্রতিবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আব্দুল কাইয়ুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলেছি বলে জানিয়ে বাঁধ খননে অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহানেওয়াজ তালুকদার বলেন, কিছু স্থানে সমস্যা হচ্ছিল। আমরা বিষয়টি আবার খনন করার জন্য তাগিদ দিয়েছি। বাঁধ খননে সঠিকভাবে কাজ না করলে আমরা বুঝে নেব না। তবে বৃষ্টির কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom