Ad0111

কাজ শেষ না হতেই হেলে পড়ল স্কুল ভবন!

এছাড়াও ওই এলাকায় সদ্য নির্মিত পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয় ও পল্লীশ্রী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনও কিছুটা দেবে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কাজ শেষ না হতেই হেলে পড়ল স্কুল ভবন!
পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়

প্রথম নিউজ, খুলনা: প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ তলা এ কাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করার আগেই ভবনটি দেবে ও হেলে গেছে। এরপরও ঠিকাদার এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও ওই এলাকায় সদ্য নির্মিত পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয় ও পল্লীশ্রী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনও কিছুটা দেবে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের পার মাদারতলা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা ও জানাগেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের বাস্তবায়নে ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন 'নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে উন্নয়ন' প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ২ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার ৯০৭ টাকা ব্যয়ে জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার পার মাদার তলা এলাকার পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের জন্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়।

খুলনার দৌলতপুরের এম, এস, রৈতি এন্টারপ্রাইজ নামীয় একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পান। ১৮ মাসে কাজ সমাপ্ত করার সময় বেঁধে দিয়ে ৮-০৪-২০১৯ তারিখে কার্যাদেশ দেয়া হয়। অথচ অভিযোগ উঠেছে কাজ সম্পন্ন করার নির্ধারিত সময়ের দ্বিগুণ সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত ভবনের  মাত্র ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে নির্মাণাধীন ভবনের পিছনের (উত্তর) পাশ দেবে গিয়ে কিছুটা হেলে পড়লেও কাজ অব্যহত রেখেছেন শ্রমিকরা।

ভবন নির্মাণে বিদ্যালয়ের মাঠের সীমানার উত্তর পাশের জলাশয় ভরাটিয়া জায়গা বাদ রেখে স্থান নির্ধারণ করে মাটি পরীক্ষা করা হয়। যা পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় নির্ধারিত স্থান থেকে একটু পিছিয়ে ডোবার জায়গা নির্ধারণ করা হয়। ওই স্থানের মাটি পরীক্ষা ছাড়াই পাইলিং শুরু হলে তা বেঁকে ও মাটির গভীরে চলে যায়। ক্রেন এনে পাইলিংয়ের যন্ত্র তোলার কারণে প্রায় ৫ মাস কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ শুরুর পর তৃতীয়তলা পর্যন্ত করা হয়। একপর্যায়ে ভবন দেবে গেলে উত্তর দিকে হেলে পড়ে। ঠিকাদার আবারও ক্রেন দিয়ে ঠেলে ধরে ভবনের নিচে বালু ও ঢালাইয়ের ব্যবস্থা করেন। তারপর চতুর্থ তলার ছাঁদ ঢালাই করা হয়।

বিদ্যালয় এলাকার আশপাশে বসবাসরত বাসিন্দা বৃদ্ধা আজিরুন বেগম, সুমন মন্ডলসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্কুল এরিয়ার উত্তর পাশে বড় ধরণের জলাশয় (পুকুর) ছিলো। যেখানে মাছ চাষ হতো। বছর পাঁচেক আগে জলাশয়টি বালু দ্বারা ভরাট করা হয়। প্রথমে পিলার (ফাইলিং) পোতার সময় তখন তা হেলে পড়েছিল। যারা কাজ করছিলেন তারা রাগ করে চলে গিয়েছিলো। পরে আবার বালি দিয়ে কাজ শুরু করলে। এখন তো স্কুলে হেলে পড়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দেবব্রত সরদার ও মৃণাল কান্তি বিশ্বাস বলেন, ভবনটি প্রায় দুই ফুটের মতো উত্তরে হেলে পড়েছে। পরে চারতলা করার সময় পেছন দিকে একটু গাঁথুনি বাড়িয়ে সমান করেছে। তবে ফ্লোরগুলো এখনো ডাউন। এভাবে থাকলে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীর ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হবে।

পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাষ ম-ল বলেন, ভবন নির্মাণের শুরুতে পাইলিং করার সময় পিলার দেবে গেলে তা তুলে আবারও পাইলিং করা হয়। তার পরও ৬ ইঞ্চির মতো দেবে যাওয়ায় ভবনটি হেলে পড়ে। এরপর আর কোনো সমস্যা হয়নি। ভবন সামনের দিকে একটু এগিয়ে করা যেত। কিন্তু বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে করা যায়নি। প্রকৌশলীরা বলেছেন, 'এতটুকু সমস্যায় কিছুই হবে না।' তবে ভবনের ডিজাইনে ত্রুটি আছে বলে মনে করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র সরদার বলেন, ভবনটি ব্যবহারে একটু ঝুঁকি রয়েই যাবে। কারণ ভবন নির্মাণের পর এমনিতেই কম-বেশি দেবে যায়। এ ভবন তো কাজ শেষের আগেই হেলে গেছে।

তিনি আরও জানান, একই প্রকল্পের আওতায় গত দুই বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয় ও পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ তলা বিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবনের পূর্ব পাশ প্রায় ৬ ইঞ্চির মত করে হেলে গেছে। ওই এলাকার মাটির গুণাগুনের সাথে সমন্বয় রেখে ভবনের নকশা তৈরী না হওয়ায় এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

কাজের দায়ীত্ব পাওয়া ঠিকাদার ঠিকাদার টিপু হাওলাদার দাবি করেন, নির্ধারিত স্থানে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবন করতে দেয়নি। তাদের কারণেই ডোবা ভরাটের উপর কাজ করতে হয়েছে। কাজ করার সময় পেছন পাশটা একটু হেলে যায়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের দেখানো হলে তারা সমস্যা হবে না জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের একজন অবসরপ্রাপ্ত সহকারি প্রকৌশলী মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ভবনের নকশা, নির্ধারিত স্থানের মাটি পরীক্ষা এবং ফাইলিং এর কোন কারিগরি ত্রুটি জনিত কারণে ভবন হেলে যেয়ে থাকতে পারে হয়তো।

এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খবর নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news