কাজ না করেই ১৯ বছর ধরে বেতন তুলছেন আয়া
মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। তবে ৫০ শয্যার জনবলকাঠামো দিয়েই চলছে হাসপাতালটির কার্যক্রম।
প্রথম নিউজ, নেত্রকোনা: কর্মস্থলে না গিয়েও ১৯ বছর ধরে বেতন তোলার অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া জাহানারা আক্তার বিউটি বিরুদ্ধে। তবে, তার কর্মস্থলে প্রক্সিতে (তার বদলে) কাজ করেন খালেদা আক্তার নামে অন্য এক নারী।
মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। তবে ৫০ শয্যার জনবলকাঠামো দিয়েই চলছে হাসপাতালটির কার্যক্রম। ওই হাসপাতালে ১২ জন মেডিকেল কর্মকর্তা, দুজন কনসালটেন্ট, ৩০ জন নার্স ও চারজন আয়া কর্মরত আছেন।
২০০৪ সালের ২৮ অক্টোবর আয়া পদে যোগ দেন জাহানারা আক্তার বিউটি। বর্তমানে তার বেতন ২৫ হাজার টাকা। হাসপাতালে না এলেও ঠিকই বেতন তুলছেন তিনি। তার স্থলে মাত্র তিন হাজার টাকায় খালেদা আক্তারকে দিয়ে আয়ার কাজ করাচ্ছেন। এরআগে একই বেতনে ইয়াসমিন নামে আরেক নারী দুই বছর কাজ করেছেন বিউটির বদলে। বদলি কাজ করা কেউ বেতন বাড়ানোর চাপ দিলেই তাকে বাদ দেওয়া হয়। এভাবে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে অন্য নারীদের দিয়ে আয়ার কাজ করাচ্ছেন বিউটি।
বিউটির পরিবর্তে কর্মরত খালেদা আক্তারের বাড়ি মোহনগঞ্জ উপজেলার বিরামপুর গ্রামে। তার স্বামী বিল্লাল মিয়া পেশায় একজন মোটরসাইকেল চালক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ বলেন, আয়ার চাকরি নিলেও বিউটি ধনী পরিবারের। তার আত্মীয়-স্বজনও বড় বড় পদে সরকারি চাকরি করেন। তা এ কাজ করতে তার সম্মানে লাগে। এ কারণে চাকরির শুরু থেকে টাকা দিয়ে লোক রেখে তার জায়গায় কাজ করাচ্ছেন। তার প্রভাবশালী আত্মীয়দের কারণে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আয়া বিউটি বিরাট প্রভাবশালী। অফিসিয়াল কোনো ঝামেলায় পড়লে তিনি আমাদেরও রক্ষা করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের অধিকাংশই আয়া বিউটিকে চিনেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিউটির বাড়ি পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহয়ের গৌরীপুরে। তার স্বামী শাহ জালাল কিবরিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহে। গত রমজানে তার স্বামী মারা যান। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন থেকেই বিউটি মোহনগঞ্জে উপজেলা শহরের কলেজ রোডে বসবাস করেন। বিউটির বদলিতে কর্মরত খালেদা আক্তার বলেন, ‘আমি গরীব মানুষ। তাই তিন হাজার টাকায় আয়ার কাজ করতে রাজি হয়েছি। তিনি (বিউটি) আমাকে বলেছেন- আরও অনেকেই কাজ করতে আগ্রহী। তুমি ই টাকায় কাজ না করলে আমি অন্যজনকে নিয়ে আসবো।’
অভিযুক্ত আয়া জাহানারা আক্তার বিউটি অন্যদের দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘চাকরির শুরুতে নিজেই কাজ করেছি। তিন-চার বছর ধরে কোমরের হাড়ে ব্যথার কারণে উপুড় হয়ে কাজ করতে পারি না। তাই অন্যজনকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি। তবে আমি নিজেও উপস্থিত থাকি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এতদিন মানবিকভাবে দেখেছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) রেহানা পারভীন বলেন, ‘আয়া বিউটির বিষয়ে জেনেছি। সিভিল সার্জনকে ঘটনাটি জানিয়েছে। এজন্য বিউটিকে সর্তক করা হয়েছে। তবে কয়েকদিন ধরে বিউটি কাজে আসছে, সঙ্গে আরেকজনকে নিয়ে আসেন। তিনি আমাদের বলেছেন, তার ব্যাক পেইন আছে, এজন্য আরেকজনকে দিয়ে কাজটা করাচ্ছে। পরামর্শ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’