এখনো সুযোগ আছে ‘কামব্যাক’ করার
সেঞ্চুরিয়ান তাওহিদ হৃদয় সংবাদ সম্মেলন সেরে বেরিয়ে যাওয়ার একটু পরই ‘মিক্সড জোনে’ এলেন ভারত ম্যাচে রেকর্ড গড়া ১৫৪ রানের পার্টনারশিপে তাঁর সঙ্গী জাকের আলী। ৬৮ রানের ইনিংস খেলা ব্যাটারের প্রতিক্রিয়া জানার আগে ওই জায়গাটি নিয়ে ছোট্ট করে ধারণা দিয়ে রাখা যাক। এটি হলো সেই নির্দিষ্ট জায়গা, যেখানে খেলোয়াড়দের খুব কাছাকাছি গিয়ে কথা বলতে পারেন সাংবাদিকরা। অলিম্পিক ও বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো বৈশ্বিক আসরে এই চর্চা সব সময়ের। অনেক বছর হয় আইসিসিও অনুসরণ করছে তা। সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে পার্থক্য বলতে সেখানে চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা থাকে না। কথা বলতে হয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে দাঁড়িয়েই বাংলাদেশের এই ব্যাটার হারার পরও সামনে তাকিয়ে দেখলেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের সম্ভাবনা।

প্রথম নিউজ,মাসুদ পারভেজ: প্রশ্ন : আপনার আর তাওহিদ হৃদয়ের দারুণ একটি পার্টনারশিপে বাংলাদেশ দল বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত যেভাবে হারলেন, সেটি কতটা হতাশাজনক ছিল?
জাকের আলী : অবশ্যই হতাশাজনক। শুরুতে পরিস্থিতি বেশ কঠিনই ছিল আমাদের জন্য। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিতেই ৫ উইকেট চলে যায়।
সেখান থেকে আমরা চেষ্টা করি দলকে ভালো একটি স্কোরের দিকে নিয়ে যাওয়ার। মাঝখানে ভালোই ছিল, কিন্তু ফিনিশিংটা ভালো হয়নি আমাদের। আরেকটু ভালো জায়গার কাছাকাছিই ছিলাম আমরা।
প্রশ্ন : ওই সময় আপনার আউট হওয়াটাই কি তবে বড় এক ধাক্কা ছিল? কারণ আপনি তখন ভালো ছন্দে ছিলেন।
ওদিকে আবার হৃদয়ও পা নিয়ে ভুগছিলেন?
জাকের : আমি আমার পরিকল্পনায় ঠিকই ছিলাম। আমার পরিকল্পনাই ছিল ওই সময়টায় একটু চড়াও হয়ে খেলার এবং (রান তোলার) গতি বাড়ানোর। কিন্তু আউট হয়ে যাই। চেষ্টা ছিল তখন থেকেই চালিয়ে খেলার।
প্রশ্ন : ৩৫ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আপনাদের মধ্যে কী ধরনের কথাবার্তা হচ্ছিল? তখন অবস্থাও এমন ছিল যে দুজনের একজন আউট হলেই ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল ছিল।
জাকের : একেবারেই স্বাভাবিক কথাবার্তা বলছিলাম আমরা। স্বাভাবিক থেকে খেলাটিকে গভীরে নিয়ে যাওয়া যায় কিভাবে, আমাদের মধ্যে এসব নিয়েই কথা চলছিল।
প্রশ্ন : উইকেট নিয়ে আপনার মূল্যায়নটা কী?
জাকের : উইকেট ‘ট্রিকি’ ছিল। ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ ছিল না কিছুতেই।
এ জন্যই মানিয়ে নিয়ে খেলতে হচ্ছিল। খেলাটা তাই কঠিনও ছিল।
প্রশ্ন : দেখা যাচ্ছে পাওয়ার প্লে-ই বাংলাদেশ দলের মূল দুশ্চিন্তার জায়গা। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই মাঝের ওভারগুলোতে ভালো করছেন আপনারা, বড় পার্টনারশিপও হচ্ছে। পরের দুটি ম্যাচ আপনারা খেলবেন রাওয়ালপিন্ডিতে। সেখানকার ভালো উইকেটে টপ অর্ডার ব্যাটাররা রান করলে আপনাদের পক্ষে খেলাটিকে আরো গভীরে নিয়ে যেতে সুবিধা হয়। তো পরের ম্যাচগুলোতে তাঁদের কাছে কী প্রত্যাশা?
জাকের : ওই উইকেটে অবশ্যই আশা থাকবে তারা (টপ অর্ডার ব্যাটাররা) যেন রান করতে পারে। টপ অর্ডার থেকে বড় রান পেলে পরের কাজটি খুব সহজ হয়ে যায়। আশা করব, ওখানে ভালো উইকেটও পাব। আমরাও ভালো কিছু করব।
প্রশ্ন : ‘এ’ দলের হয়ে পাকিস্তান সফর করার অভিজ্ঞতা আছে আপনার। বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে ১৭২ রানের ইনিংসও খেলেছেন। এবার পাকিস্তানে আপনার নিজের কাছে কী প্রত্যাশা?
জাকের : আসলে পরিস্থিতির দাবি যেমন থাকবে, সেই অনুযায়ীই খেলতে হবে। উইকেট কেমন থাকবে, তা তো আর আগে থেকে জানার উপায় নেই। আশা করছি, ভালোই হবে উইকেট।
প্রশ্ন : এই ম্যাচ হারার পরও টুর্নামেন্টে এগিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ দেখেন?
জাকের : অবশ্যই। এখনো সুযোগ আছে ‘কামব্যাক’ করার। প্রথম ম্যাচে এত বাজে অবস্থার পর দল যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এখান থেকেও নেওয়ার আছে অনেক কিছু। এখন সামনের ম্যাচগুলোতে যে জায়গায় যা করার দরকার, সেই কাজগুলো ঠিকঠাক করলে আমাদের সুযোগ আছে।
প্রশ্ন : উইকেটে গিয়েই আপনাকে (অক্ষর প্যাটেলের) হ্যাটট্রিক বল খেলতে হয়। দল তো বটেই, আপনার ওপরও প্রচণ্ড চাপ ছিল। ওই সময়ে মনের অবস্থা কী ছিল?
জাকের : একেই প্রথম বল, তার ওপর আবার হ্যাটট্রিক বল। সত্যিই খুব কঠিন ছিল। আর ডেলিভারিটাও হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যেই। এর পরই আমি আমার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ কিছুটা বদলাই। কারণ ওই বলটিই উইকেট নিয়ে ধারণা দিয়ে দেয় আমাকে, যা আমাকে আরো মনোযোগীও করে তোলে।
প্রশ্ন : আপনার ব্যাট ছুঁয়ে বল স্লিপে (ক্যাচ ফেলেন রোহিত শর্মা) যায়। নিশ্চিতভাবেই আপনার ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।
জাকের : যখন আমি পেছনে তাকাই, ততক্ষণে ক্যাচটি পড়ে গেছে (হাসি...)। এরপর অবশ্য ওটা নিয়ে আর একটুও ভাবিনি। একটা একটা করে বল খেলার দিকে মনোযোগ দিই। প্রথম বলটি খেলার পরই আমি নিজেকে বদলে ফেলি এবং ‘ট্রিকি’ উইকেটে খেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাই।