ঈদযাত্রায় চরম ভোগান্তি
গতকাল ঈদযাত্রায় কমলাপুরে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। সড়কগুলোতে ছিল যানবাহনের চাপ। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে করে মানুষ ছুটছেন যার যার নিজ গন্তব্যে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। গতকাল ঈদযাত্রায় কমলাপুরে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। সড়কগুলোতে ছিল যানবাহনের চাপ। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে করে মানুষ ছুটছেন যার যার নিজ গন্তব্যে। তবে যাত্রা পথে রাজধানীর বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে যাত্রীদেরকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ঈদের আগে গতকালই ছিল শেষ কর্মদিবস। মঙ্গলবার থেকে টানা পাঁচ দিনের ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে। ছুটি শেষে সরকারি কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে ফিরবেন ২রা জুলাই।
গতকাল ঈদযাত্রায় রাজধানীর কমলাপুরে ঘরমুখো মানুষের চাপ ছিল। তবে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ থাকলেও এবার তেমনটি দেখা যায়নি কমলাপুর রেলস্টেশনে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে লাইন ধরে প্ল্যাটফরমে প্রবেশ করেন যাত্রীরা। এ সময় যাদের কাছে টিকিট ছিল না, তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এবারের ঈদযাত্রায় টিকিটের ব্যবস্থা শতভাগ অনলাইন পদ্ধতিতে চালুর কারণে বিগত সময়ের মতো স্টেশনে রাত জেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি যাত্রীদের। তবে যারা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেননি, তাদের জন্য স্টেশনে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তবে সেখানেও তেমন ভিড় নেই। সহজেই টিকিট কেটে গন্তব্যে যেতে পারছেন তারা।
স্টেশনে ঢুকতে তিনটি তল্লাশি চৌকি পার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। স্টেশনের ভেতরে নেই হট্টগোল। টিকিটধারীরা নির্ধারিত ট্রেন এলেই উঠছেন। রাজশাহীগামী এক যাত্রী বলেন, আগের থেকে এবার ঈদযাত্রা ভালো লাগছে। অনলাইনে দুটো টিকিট কিনেছি। পরিবারের সবাই একসঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছি। অনলাইনের টিকিটের কারণে অনেক ভালো হয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল থেকে সবগুলো ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। অনলাইনে আগেই সব টিকিট বিক্রি হয়েছে। মোট আসনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হচ্ছে কাউন্টার থেকে। যাত্রীদের ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে স্টেশনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। টিকিট ছাড়া কাউকে প্ল্যাটফরমে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে, রাজধানীর বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে যানজট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে হোটেল রেডিসন পর্যন্ত যানজট ছিল। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এই যানজটে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরে যাত্রীদের পরিবহনে বসে অপেক্ষা করতে হয়েছে। সায়েদাবাদ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত চলাচলকারী বলাকা পরিবহনের একটি বাসের চালক বলেন, প্রতিদিনই সন্ধ্যা ৭টা থেকে এই রোডে গাড়ির চাপ বাড়ে। কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীতে ঈদযাত্রাকেন্দ্রিক অসহনীয় পর্যায়ের যানজট এখনো শুরু হয়নি। সাধারণত অফিস ছুটির পর রাজধানীতে এমন যানজট থাকে। এর মধ্যে ঈদযাত্রা শুরু হয়ে যাওয়ায় গাড়ির চাপ কিছুটা বেড়েছে।
নবীনগর-চন্দ্রা, আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের প্রতিটি পয়েন্টেই রয়েছে যানবাহনের চাপ। সেই সঙ্গে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, সাভার বাসস্ট্যান্ড, নবীনগর, নয়ারহাটসহ কয়েকটি পয়েন্টে ছিল যানবাহনের দীর্ঘ সারি ছিল। আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের আশুলিয়া, জিরাবো, জামগড়া ও বাইপাইলের সড়কগুলোতে ছিল একই চিত্র। এ ছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের পল্লী বিদ্যুৎ, ডিইপিজেড, শ্রীপুর ও জিরানীতেও রয়েছে যানবাহনের জটলা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সড়কগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
অন্যদিকে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গতকাল যাত্রীদের ভিড় ছিল। ঈদের সময়ে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চের কোনো টাইম শিডিউল থাকে না। ফলে যাত্রী ভরলেই লঞ্চ টার্মিনাল ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এখন পদ্মা সেতুর কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় বরিশালগামী যাত্রীর চাপও তুলনামূলক একটু কম বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।