ইউপি সদস্যের দুটি এনআইডি, বেতন তোলেন দুই প্রতিষ্ঠান থেকে
নিয়মিত তথ্য গোপন করে ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত সম্মানি ভাতা তোলেন।
প্রথম নিউজ, বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী মো. কামাল হোসেন চাকরির পাশাপাশি সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নিয়মিত তথ্য গোপন করে ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত সম্মানি ভাতা তোলেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
কামাল হোসেন মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামের নূর মোহাম্মদ খানের ছেলে। ২০১৩ সালে তিনি বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী পদে চাকরি নেন। ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার নির্বাচিত হন। কামাল হোসেন সদর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি লাইলী বেগম নামের এক নারীকে দিয়ে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
এদিকে সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে একই সঙ্গে ভাতা তোলার নিয়ম না থাকলেও, তথ্য গোপন করে প্রতিমাসে পরিষদের সদস্য হিসেবে সরকারি কোষাগার ৩ হাজার ৬০০ টাকা সম্মানি নিচ্ছেন এবং বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী হিসেবে বিদ্যালয়ে নিয়মিত দায়িত্বপালন না করেই প্রতিমাসে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা বেতন নিচ্ছেন।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, মো. কামাল হোসেনের নামে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। তিনি প্রথম আইডি কার্ডটি করেন ২০০৮ সালে। সেখানে তার নাম লেখা রয়েছে মো. কামাল হোসেন। পিতা-নূর মোহাম্মাদ। জন্ম তারিখ-০১.০১.১৯৮৩। এরপরে বিদ্যালয়ে দপ্তরি পদে চাকরি নিতে প্রায় ১০ বছর বয়স কমিয়ে ২০১৩ সালে নিজের নাম ও পিতার নামে কিছুটা পরিবর্তন দেখিয়ে আরও একটি ভোটার আইডি করেন। সেখানে জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১৫.৭.১৯৯৪। নাম মো. কামাল হোসেন খান।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন কম্পিউটারে সার্ভার দেখে বলেন, কামাল হোসেনের দুটি ভোটার আইডি সচল আছে। যার প্রথমটির নম্বর ০১১০৫২৮৩৮১০৫। দ্বিতীয়টির নম্বর ০১১০৫২০০০১৭৪। দুটি কার্ডে জন্ম তারিখ, নিজের নাম ও পিতার নামে কিছুটা পরিবর্তন রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ও সম্মানি গ্রহণের বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সব তথ্য দিয়েছি। তখন তো মনোনয়ন পত্র বাতিল করেনি। আমি নিয়মিত স্কুলে চাকরি করি। পরিষদেও যাই। আমার অনুপস্থিতিতে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করে। এতে কোনো সমস্যা তো আমি দেখি না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, কামাল মাঝে মধ্যে থাকে না। তখন তার পরিবর্তে লাইলী নামে এক মহিলা দায়িত্ব পালন করে। প্রতি মাসে কামালকেই নিয়মিত দায়িত্ব পালনের বিষয়ে প্রত্যায়ন দেওয়া হয়। প্রক্সির বিষয়ে লাইলী বেগমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, কামাল হোসেন একটি বিদ্যালয়ে চাকরি করে তা জানি। এটায় আইনগত কোনো বাধা আছে কিনা আমার জানা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের করনিক দিপক কুমার দেবনাথ বলেন, কামাল হোসেন ইউপি সদস্য হিসেবে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সরকারি অংশের সম্মানির টাকা নিয়েছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কামাল হোসেনের বিষয়টি জানা ছিল না। মূলত দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরীদের নিয়ন্ত্রণ করেন প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের প্রত্যায়নেই তাদের বেতন হয়। প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের পক্ষে প্রতিমাসে প্রত্যায়ন দিয়েছে। কেন এই অনিয়মের বিষয় জানায়নি এবং অসত্য প্রত্যায়ন দিয়েছে এজন্য প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তারেক সুলতান বলেন, বিদ্যালয়ের দপ্তরি ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হিসেবে দুটি পদে একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন ও আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।