আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে ৩ শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

অভিযুক্ত আনসার মড়ল বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পলশা গ্রামের মৃত ইউনুস আলী দেওয়ানের ছেলে ও একই ইউনিয়ন দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। 

আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে ৩ শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

প্রথম নিউজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে আনসার মড়ল (৬৫) নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে তিন শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এক শিশুর মা বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় একটি লিখিত এজাহার দিয়েছেন।

অভিযুক্ত আনসার মড়ল বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পলশা গ্রামের মৃত ইউনুস আলী দেওয়ানের ছেলে ও একই ইউনিয়ন দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। 

ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৯ জুলাই দুপুরে পলসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আনসার মড়লের মুদিখানার দোকানে। বিষয়টি জানাজানি হলে একটি প্রভাবশালী মহল অভিযুক্তকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেন। কয়েক দফায় স্থানীয়ভাবে মীমাংসা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ায় এক শিশুর মা গত ২২ জুলাই বাদি হয়ে থানায় এজাহার দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই তিন শিশু পলশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। স্কুলের সামনেই রয়েছে আনসার মড়লের মুদিখানার দোকান। সে দোকানে টিফিনের জন্য খাবার নিতে গেলে পর্যায়ক্রমে তিন শিশুকে যৌন নিপীড়ন করে আনসার মড়ল। এ সময় আনসার মড়ল তিন শিশুর হাতে পাঁচশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে ঘটনাটি কাউকে বললে ছুরি দিয়ে কেটে বস্তায় ভরে মহানন্দা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। 

রোববার রাতে সদর মডেল থানায় কথা হয় নিপীড়নের শিকার ১১ বছর বয়সী এক শিশুর সঙ্গে। ভুক্তভোগী ওই শিশু জানান, টিফিনের সময় তিনজন মিলে খাবার কেনার জন্য আনসার আলীর দোকানে যান তারা। এ সময় দোকানের ভিতরে নিয়ে পর্যায়ক্রমে যৌন নিপীড়ন করা হয় তাদের। তারা কান্নাকাটি করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলে। পরে তাদের হাতে টাকা দিয়ে ঘটনাটি কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, আনসার মড়ল মাঝে মধ্যেই শিশুদের যৌন নিপীড়ন করেন। এর আগেও একাধিক শিশুর সঙ্গে পাশবিক ঘটনা ঘটিয়েছেন। যা এলাকার সাধারণ মানুষ সবাই জানে। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি। বালিয়াডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বার) ফজলে রাব্বি রেনু বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আনসার মড়ল নিজ দোকানে দরজা আটকিয়ে শিশুদের যৌন নিপীড়ন করে আসছিল। একই সঙ্গে তিন শিশুর ঘটনায় পুরো এলাকাজেুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলের অন্য শিশুরাও আতঙ্কিত।

বালিয়াডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো.সাদিকুল আলম বলেন, শিশুদের পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেয়ে আনসার মড়লকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে যৌন নিপীড়নের কথা শিকার করে তিনি আপোস মীমাংসার জন্য অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি নিয়ে শনিবার একটি বাড়িতে সমাধানের জন্য বসা হয়। সেখানে সমাধান হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে থানায় মামলা করতে বলা হয়েছে। পলসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল হামিদ স্কুল ও শিশুদের সম্মান রক্ষার্থে বিষয়টি নিয়ে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঘটনা কি ঘটেছে সেটি শিশুদের পরিবার বলতে পারবে। আমি মৌখিকভাবে শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।

এদিকে বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও আনসার মড়লের পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেয়া হয়।চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিন শিশু নিপীড়নের অভিযোগে একজনের মা বাদি হয়ে থানায় এজাহার দিয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।  চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।