‘আমার ছেলের লাশটাও পাইনি’

প্রথম নিউজ, রাজশাহী: আমার ছেলেকে শেষ দেখাও দেখতে পারিনি। তার লাশটাও পাইনি। লাশটা পেলেও অন্তত হাতে ছুঁয়ে জানটাকে সবুর দিতে পারতাম। পাঁচ বছর আগে পদ্মায় নিখোঁজ হয়েছে। এটা আমার সারা জীবনের কষ্ট। ছেলেটাকে শেষ দেখাও দেখতে পেলাম না। ছেলেটাকে আমি মনের ভুলেও ভুলতে পারি না। কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুরে পদ্মা নদীতে ডুবে নিখোঁজ সজলের মা শাহেলা বেগম। তারা এই শ্রীরামপুরের বাসিন্দা। পাঁচ বছর আগে পদ্মা নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় আট বছরের সজল। কিন্তু অনেক খোঁজাখুজির পরেও মেলেনি সজলের সন্ধান। এরপর ৫ বছর কেটে গেলেও সন্তানের আশায় পথ চেয়ে থাকেন এই মা।
শাহেলা বেগম বলেন, ‘গত শনিবার এই শ্রীরামপুরে দুইটা ছেলে পদ্মা নদীতে ডুবে মরেছে। ওদের লাশ দেখে বুকের মধ্যে কেঁদে উঠল। এতো সুন্দর সুন্দর ছেলে হারিয়ে মা-বাবা কিভাবে ধৈর্য ধরবে। ওদের দেখে আমার ছেলের কথা মনে পড়ে যায়। এদের তো পাওয়া গেল, আমার ছেলের লাশও পাওয়া যায়নি। সন্তান হারানোর কষ্ট সহ্য করা মায়ের জন্য মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো কঠিন।’
সজলের বোন সুইটি খাতুন বলেন, ‘প্রতিবছরই এই শ্রীরামপুরে পদ্মা নদীতে কেউ না কেউ ডুবে মারা যায়। কারও লাশ একদিন, দুইদিন পরে পাওয়া যায়। কারও লাশ পাওয়া যায় না। এই নদীতে অনেকজনই ডুবে মারা গেছে তাদের পাওয়া গেছে। কিন্তু আমার ভাই সজল ৫ বছর নদীতে ডুবেছে। এখনও তাকে পায়নি। আগে পদ্মায় লাশ পাওয়া গেলে আমরা ছুটে যেতাম ভাইয়ের লাশ বলে। এখন জেনে গেছি আর কোনো দিন দেখা হবে না ভাইয়ের সাথে।’
শুধু সজলই নয়, পদ্ম নদীতে ডুবে নিখোঁজ হন এই এলাকার পূর্ণিমা রায় (৩৫)। তার ডুবে যাওয়া ছয় থেকে সাত বছর হলো। পূর্ণিমার লাশও পাওয়া যায়নি। পূর্ণিমা ও সজলের আগে ২০১৩ সালে এই এলাকায় আব্দুল কাদেরের ছেলে সাহিদ (৭) ও আবদুল কালামের ছেলে রিসাদ (৭) নদীতে ডুবে মারা যায়। তাদের লাশ পাওয়া যায় নদীতে।
সাহিদের মা হুরজামা বেগম বলেন, ছেলের কথা মনে পড়লে আসমান জমিন পাতাল হয়ে যায়। কোলের ছেলে ডুবা কষ্টকর। সাত বছরের ছেলে আমার ডুবে মরে গেছে। তাজা ছেলে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে ডুবে মারা যায়। তিনি আরও বলেন, তখন রমজান মাস ছিল। সাহিদ ও রিসাদ মামাতো ও ফুফাতো ভাই ছিল। তারা সব সময় একসাথে খেলা করতো। ঘটনার দিনে তারা নদীতে গোসল করতে গিয়ে পানিতে তলিয়ে যায়।
রাজশাহী সদর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, সতর্কীকরণ সাইনবোর্ডের বিষয়টি আমরাও ভাবছি। জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনি সম্মতি দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা আবার জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে বসব। আমরা ১০০ গজ দূরে দূরে এই সাইনবোর্ডগুলো দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। টি-বাঁধ (গ্রয়েন) থেকে কাটাখালীর বালুঘাট পর্যন্ত সতর্কীকরণ বোর্ড লাগানো হবে।