আনারের কেজি ৬৫০ টাকা, অন্য ফলও নাগালের বাইরে

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এক দফায় ফলের দাম বেড়েছে। এরপর ডলারের দাম বৃদ্ধি ইস্যুতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ফলের দাম আরেক দফা বেড়েছে।

আনারের কেজি ৬৫০ টাকা, অন্য ফলও নাগালের বাইরে

প্রথম নিউজ, ঢাকা: লাগামহীন বাড়ছে দেশি-বিদেশি ফলের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি ফলের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর বিদেশি ফলের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। গত দুই মাসে বিদেশি ফলের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এক দফায় ফলের দাম বেড়েছে। এরপর ডলারের দাম বৃদ্ধি ইস্যুতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ফলের দাম আরেক দফা বেড়েছে।

দাম বৃদ্ধির কারণে এমন অবস্থা হয়েছে, ফলের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। নিত্যপণ্যের বাজার আগে থেকেই চড়া। যার কারণে মানুষ দাম শুনে ফল না কিনেই চলে যাচ্ছেন। আবার বিশেষ প্রয়োজনে যারা কেনেন। তারাও অল্প পরিমাণে কিনছেন।

রামপুরা বাজারে ফল কিনতে আসা মহসিন কবির বলেন, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। গত সপ্তাহ থেকে আমার ছেলে আনার খাওয়ার বায়না করছে। আমি দুদিন অফিস থেকে বাসায় খালি হাতে ফিরেছি, বলেছি দোকান বন্ধ ছিল। কিন্তু গতকাল রাতে আবার খেতে চেয়েছে, তাই আজ তার আবদার রাখতে আধা কেজি আনার কিনেছি ২৩০ টাকায়। আনারের সঙ্গে মাল্টাও নিলাম আধা কেজি। কিন্তু আপেলের দাম শুনে আর কিনতে সাহস হলো না।

রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশি ফলের মধ্যে সবচেয়ে কম দামি ফল মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা কেজিতে। বাজারে আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজিতে। আপেল কোরবানির ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। অর্থাৎ গত দুই মাসে কেজিপ্রতি আপেলের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।

রাজধানীতে চায়না কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা কেজিতে। আঙ্গুর বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে। বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আনার। বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজিতে। এর মধ্যে ছোট আকারের আনার বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে। মাঝারি সাইজের আনার বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে। আর ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ভালো মানের বড় আনার। এছাড়া নাশপাতি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। ভালো মানের ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজিতে।

দেশি ফল: বিদেশি ফলের দাম বাড়ায় দেশি ফলের দামও বাড়ছে। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকায়। শপগুলোতে বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। পাকা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা পিস। আর কালো তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে। আমড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। আনারস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা পিস। ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা পিস। দেশি সাগর কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হালি। অন্য কলা বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা হালিতে।

রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম আশিক বলেন, সব ফলের দাম বাড়তি। তিনি বলেন, এক ক্যারেট (১৮ কেজি) আপেল কেনা পড়েছে ৪৯০০ টাকা। তার সঙ্গে ৫০ টাকা ভাড়া, সবমিলিয়ে ৫০০০ টাকা কেনাই পড়েছে। আমি এখন কত বিক্রি করব। তিনি বলেন, আপেল দুই মাস আগে কিনেছি ১৪০০ টাকা ক্যারেটে। বিক্রি করেছি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে। এখন ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হয়। কেজিপ্রতি ১০ টাকা লাভ করতে কষ্ট হয়।

গুলশানের ফল ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম বলেন, ১৪০০ টাকা ক্যারেটের কমলা এখন কেনা ২৪০০ টাকা। শুধু আপেল আর কমলা নয়, আনার, আঙ্গুর সব ফলের দাম বাড়তি। তিনি বলেন, বাদামতলিতে মালের ক্রাইসিস। আগে যেখানে ৫০ ট্রাক মাল আসত, এখন সেখানে ১০ ট্রাক মাল আসে। ব্যবসা করতে হলে মাল রাখতে হয়। তাই বেশি দামে কিনে হলেও মাল রাখি, কাস্টমারদের দেই কিন্তু ব্যবসা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইল বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ফলের দাম বাড়লে সবাই আমাদের দোষারোপ করেন। আমাদের কি করার আছে, ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ফলের দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বাড়ায় শুধু ফল নয়, সব জিনিসের দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom