আন্তর্জাতিক দমকলকর্মী দিবস আজ

আন্তর্জাতিক দমকলকর্মী দিবস আজ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরী করতেই এই সব দিবস পালন। বিশ্বের পালনীয় সেই সমস্ত দিবসগুলি মধ্যে একটি হলো আন্তর্জাতিক দমকলকর্মী দিবস। প্রতি বছর ৪ মে ‘আন্তর্জাতিক দমকলকর্মী দিবস’ বা ‘IFFD’ হিসেবে পালিত হয়।

১৯৯৯ সালের ৪ মে প্রথম আন্তর্জাতিক দমকলকর্মী দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের আগুন নেভাতে গিয়ে ৫ জন দমকলকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। অস্ট্রেলিয়ার লিংটন শহরের ভিক্টোরিয়া অঞ্চলে দাবানল দেখা দিলে এই দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে অস্ট্রেলিয়া সরকার ব্যর্থ হয়ে মিউচুয়াল এইড বা পারস্পরিক সাহায্য চান।
 

এরই ফলশ্রুতি হিসেবে গিলংওয়েস্ট ফায়ার ব্রিগেড সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। গ্যারি ভেডিভেলট, স্টুয়ার্ট ডেভিডশন, ক্রিস ইভান, জেসন থমাস, ম্যাথিউ আর্মস্ট্রং -এই পাঁচজন দমকলকর্মী দমকলের ট্রাকে করে ‘হট জোনে’ প্রবেশ করে আগুন নেভাতে চেষ্টা করছিলেন, ঠিক সেই সময় হঠাৎ বাতাস উল্টো দিকে প্রবাহিত হয় এবং এই পাঁচজন দমকলকর্মী সমেত দমকলের গাড়িটি আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায়। 

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা জে‌. জে. এডমনসনকে অনুপ্রাণিত করে দমকলকর্মী দিবস পালন করার জন্য। যে সমস্ত দমকলকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন এবং এখনো যে সমস্ত দমকলকর্মী প্রতিনিয়ত নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুনের লেলিহান গ্রাস থেকে মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করে চলেছেন, তাঁদের সম্মানার্থে এই দিনটি পালন করা হয়।
 

১৯৯৯ সালের ৪ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে পাঁচজন দমকলকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি ইমেইল সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি দেশের কাছে পাঠানো হয়। এই মেইলটিতে ‘আন্তর্জাতিক দমকলকর্মী দিবস’ পালন করার প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং এই দিনটি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার কথা বলা হয়।

আন্তর্জাতিক দমকলকর্মী দিবসের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ চিহ্ন হল ‘লাল নীল ফিতে’। এটি ৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১ সেন্টিমিটার চওড়া, ফিতেটির উপরের অংশটিতে লাল এবং নীল এই দুটো আলাদা রং এক সঙ্গে মিশেছে। লাল হল আগুনের প্রতীক এবং নীল হলো পানির প্রতীক।
আবার একই সঙ্গে লাল নীল হলো বিশ্বের জরুরি পরিষেবার প্রতীক। তাই এই রং দুটিকেই দমকলবাহিনীর কর্মীদের উৎসাহিত করার জন্য ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক দমকল কর্মী দিবসে লাল ও নীল ফিতে বাড়ির বাগানের সামনের গাছে, জামায়, গাড়িতে, টুপিতে লাগানো হয়ে থাকে। এই ফিতের মাধ্যমে মানুষ এই বিশেষ দিনটিতে দমকল কর্মীদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রকাশ করে।

‘সেন্ট ফ্লোরিয়ান’ এই দিনটির আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। ৩০০ সালে রোম শহরে নরিকাম অঞ্চলের সেন্ট ফ্লোরিয়ান ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি একটি দল তৈরি করে আগুন নেভানোর কাজ করেছিলেন। প্রবাদ আছে মাত্র এক বালতি জল ব্যবহার করে তিনি সমগ্র একটি গ্রামকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, শুধু তাই নয় যারা আগুনে বিপদের মধ্যে পড়েছিল তাদেরও তিনি রক্ষা করেছিলেন। এরপর থেকে সেন্ট ফ্লোরিয়ান এই কাজেই নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ৪ মে তাঁকে তাঁর কাজের জন্য সম্মানিত করা হয় এবং বিশ্বের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাই তাঁকে সম্মান জানাতেই এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক দমকলকর্মী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এই বিশেষ দিনটিতে স্কুল, বিভিন্ন সভায় বিভিন্ন জমায়েতে, এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাছাড়া সারাবছর ধরেই দমকল কর্মীরা এবং দমকল সংস্থাগুলি এই সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিয়ত উন্নত করে তুলছে। তবে শুধুমাত্র দমকল কর্মীদের জন্যই এই দিনটি পালিত হয় না। জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ব্যক্তিদের জন্যই এই দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ। যার ফলে জরুরী পরিষেবা প্রদানকারী সমস্ত ব্যক্তির প্রতি সম্মান জানাতে এই দিনটি পালিত হয়।

প্রথম ‘আন্তর্জাতিক দমকল কর্মী দিবস’ পালন করা হয়েছিল রবিবার, ৪ মে, ১৯৯৯ সালে। এই বিশেষ দিনটিতে দুপুর বারোটার সময় ৩০ সেকেন্ড সাইরেন বাজানো হয় এবং তারপর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এটি ‘সাউন্ড অফ’ বলে পরিচিত। 

যে সমস্ত জরুরী পরিষেবা প্রদানকারী ব্যক্তি মারা গেছেন, তাঁদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশেই নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়াও এই পরিষেবা সংক্রান্ত ব্যক্তিরা এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘প্যারেডস্’, ‘মোটরসাইকেল রান’ ইত্যাদিও করে থাকেন।