আজম খানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সংগীতের কিংবদন্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (৫ জুন)

আজম খানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
আজম খানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ-প্রথম নিউজ

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : দেশের ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (৫ জুন)। ২০১১ সালের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ‘পপগুরু’ খ্যাত এই সংগীত ব্যক্তিত্ব। প্রতি বছর এই দিনে আজম খানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তার পরিবার, বন্ধু-স্বজন, শুভাকাঙক্ষী ভক্ত-শিষ্য সবাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে ঘিরে অনেকের স্মৃতিচারণা চোখে পড়ে।

বাংলা ব্যান্ড সংগীতকে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন আজম খান। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েও এদেশের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।

‘পপগুরু’, ‘পপ সম্প্রাট’সহ আরও নানা উপাধি খ্যাত আজম খান ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর কলোনির ১০নং সরকারি কোয়ার্টারে জন্মগ্রহণ করেন। সংগীত জগতে তিনি পা রাখেন ষাটের দশকের শেষের দিকে। পাশাপাশি ক্রিকেটার হিসেবেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।

১৯৭২ সালে আজম খান বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’। যা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। মূলত তার সেই ব্যান্ডের কল্যাণেই পপ সংগীত পৌঁছে যায় দেশের আনাচে-কানাচে।

আজম খানের পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। জন্ম ও বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। বাবা আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন। তার শৈশবের পাঁচ বছর কাটে আজিমপুর কলোনিতে। তারা ৪ ভাই ও এক বোন ছিলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি প্রথমে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তার বাবা কমলাপুরে বাড়ি করে পরিবার নিয়ে সেখানে উঠেন।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন আজম খান। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচার করেন। ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ করেন প্রয়াত এই কিংবদন্তি। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটি সেকশনের ইনচার্জ। তিনি সেকশন কমান্ডার হিসেবে ঢাকা ও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন।

যুদ্ধের পর আজম খানের ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭২ সালে বন্ধু নিলু, মনসুর এবং সাদেককে নিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন তিনি। ওই বছরই তার ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ আর ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি বিটিভিতে প্রচার হয়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। পরবর্তী সময় বিটিভিতে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ গান গেয়ে হইচই ফেলে দেন এই গায়ক।

১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি সাহেদা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় আজম খানের। সহধর্মিণী মারা যাওয়ার পর থেকে একাকী জীবন কাটান এ কিংবদন্তি। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক। বড় মেয়ে ইমা খান, মেজো ছেলে হৃদয় খান ও ছোট মেয়ে অরণী খান। ১৯৮২ সালে প্রকাশ পায় তার প্রথম ক্যাসেট ‘এক যুগ’। এরপর তার আরও বেশ কিছু ক্যাসেট ও সিডি প্রকাশ পায়। তার প্রথম সিডি বের হয় ১৯৯৯ সালের ৩ মে ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের প্রযোজনায়।

গানের বাইরেও দেশের মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি আলোচিত কাজও করেছেন আজম খান। ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নামে হীরামনের একটি নাটকে এবং ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘গডফাদার’ চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। সর্বশেষ ২০১০ সালে কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনেও মডেল হন আজম খান।

আজম খানের গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘আমি যারে চাইরে’, ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অ্যাকসিডেন্ট’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’ ইত্যাদি।

ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালের ৫ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই পপসম্রাট। ওপারে চলে গিয়েও শ্রোতাপ্রিয় সব গান আর মহান মুক্তিযুদ্ধে স্মরণীয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এদেশের লাখো ভক্তের হৃদয়ে বেঁচে আছেন তিনি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom