আগামীকাল বিএনপির বর্ধিত সভা, অংশ নেবেন চার হাজার নেতা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বসতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত বিএনপির বর্ধিত সভা। সকাল ১০টায় এই বর্ধিত সভা শুরু হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। উদ্বোধনী ও সমাপনী পর্বে নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘প্রথম বাংলাদেশ আমাদের শেষ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এই প্রমাণ্যচিত্রে তৈরি করেছে ‘বর্ধিত সভা বাস্তবায়ন মিডিয়া উপ—কমিটি’। এছাড়া বর্ধিত সভা উপলক্ষে আমরা বিএনপি পরিবার ‘আস্থা’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে। এরপরে রুদ্ধদ্বার কর্ম অধিবেশন, যেখানে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেবেন। পরে সমাপনীতে তারেক রহমান নীতিনির্ধারণী বক্তব্য দেবেন।
এ সভাকে কেন্দ্র করে দলের নেতা—কর্মীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ বর্ধিত সভাকে দলের ছায়া কাউন্সিল হিসেবেও দেখছেন। চলমান অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতিতে বিএনপির এই বর্ধিত সভা বাংলাদেশে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন নেতারা। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল কর্মকর্তা ও সদস্যগণ, সকল মহানগর, জেলা, থানা—উপজেলা—পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবগণ রয়েছেন। বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবগণ রয়েছেন।
প্রায় ৪ হাজার নেতার উপস্থিতিতে এই সভা থেকে আগামী নির্বাচন, গণমানুষের আশা—আকাক্সক্ষা নিয়ে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারিত হবে। এ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন দলের প্রিয় মুখ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তৃণমূলের বক্তব্য শুনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেবেন নতুন বার্তাও। ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী এবং মনোনয়ন ইচ্ছুক যেসব প্রার্থী প্রাথমিক পত্র পেয়েছিলেন তারাও এই সভায় রয়েছেন। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য সকালের নাস্তা, দুপুরে খাবার, বিকালে স্ন্যাক্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকবে চা—কফির ব্যবস্থা।
বর্ধিত সভা উপলক্ষে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে আহ্বায়ক করে ২৭ সদস্যের বাস্তবায়ন কমিটি এবং ছয়টি উপকমিটি (ব্যবস্থাপনা, অভ্যর্থনা, আপ্যায়ন, শৃঙ্খলা, মিডিয়া ও চিকিৎসা সেবা কমিটি) গঠন করা হয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এবারের সভায় মূলত চারটি ইস্যু গুরুত্ব পাবে। এগুলো হলো: ৫ আগস্টের পর দেশের চলমান পরিস্থিতি, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন, দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মিত্র দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখা। ২০১৮ সালে, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পাঁচদিন আগে জরুরিভাবে নির্বাহী কমিটির সভা হয়েছিলো রাজধানীর একটি হোটেলে। গ্রেফতার আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করে সীমিত পরিসরে সেটি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে, ২০১৬ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির কাউন্সিল।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটি আবার সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির কাক্সিক্ষত বর্ধিত সভা। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দলের জন্য একদিন খুব কম সময়, তারপরেও সেই একদিনকেই কাজে লাগানো যেতে পারে’। রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ নেই, তবে বৃহত্তম দল হিসেবে বিএনপি এখন একটি ক্রান্তিকাল পার করছে বলে সতর্ক থাকতে বলা হবে নেতাকর্মীদের। যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে, তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই বর্ধিত সভা দলকে আরো শক্তিমালী করবে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী দিনকালকে বলেন, বিএনপির বর্ধিত সভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমন্ত্রিত সারাদেশের নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যে ডেলিগেট কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় দফতরে সার্বক্ষণিক থেকে তিনি সব কিছু তদারকি করছেন। তিনি জানান বর্ধিত সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্য শুনবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিবেন। তিনি আরও বলেন, তিনি মাঠ পর্যায়ের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সামাজিক ও অর্থনীতি অবস্থা সম্পর্কে সবার কাছ থেকে ধারণা নিতে চান। তিনি বলেন, এখনো ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বাংলাদেশ নিয়ে দেশি—আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যায়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সেখানে করণীয় কী, তা নিয়ে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি জানান, ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের কারণে গত ১৫—১৬ বছর সাংগঠনিক তৎপরতা ও দল গোছানোর কাজটি ঠিকমতো করতে পারিনি। ৫ আগস্টের পর তৃণমূলে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছি। যার কারণে বর্ধিত সভা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সভায় দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন। যা নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করবে। এ মুহূর্তে যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, সভায় অবশ্যই আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। দলের নেতাকর্মীদের প্রতি দিকনির্দেশনা এখনও আছে, সভা থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নতুন করে দিকনির্দেশনা অবশ্যই দেবেন। এই সময় উপস্থিত দলের কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, রফিকুল ইসলাম, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মীর সরাফত আলী সপু, শরীফুল আলম, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিরুল ইসলাম আলিম, আতিকুর রহমান রুমন, বেবী নাজনীন, তানভীর আহমেদ রবিনসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বর্ধিত সভা সুশৃঙ্খল ও সফলভাবে অনুষ্ঠানের জন্য ৬টি উপ—কমিটি করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ব্যবস্থাপনা কমিটি (আহ্বায়ক—শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি), অভ্যর্থনা কমিটিতে (আহ্বায়ক হাবিব—উন—নবী খান সোহেল), আপ্যায়ন কমিটি (আহ্বায়ক এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত), শৃঙ্খলা কমিটি (আহ্বায়ক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু), মিডিয়া কমিটি (আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল) এবং চিকিৎসা সেবা কমিটি (আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম)।