অর্ধশতাধিক তরুণীকে অপহরণ ও দেড় হাজার ছিনতাই করে এই ভুয়া পুলিশ চক্র
এখন পর্যন্ত তার তিনজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন- আকাশ, দেলোয়ার ও হাবিব। তারা বিভিন্ন সময়ে শাকিলের চোরাই পণ্য কিনে তাকে সহযোগিতা করতো।

প্রথম নিউজ, অনলাইন : কল্যাণপুরে ঢাবি শিক্ষার্থীকে অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা ভুয়া পুলিশ পরিচয় প্রদানকারী প্রতারক শাকিল আহমেদ রুবেলসহ (২৮) ৪ প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। প্রতারক শাকিল ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এখন পর্যন্ত তার তিনজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন- আকাশ, দেলোয়ার ও হাবিব। তারা বিভিন্ন সময়ে শাকিলের চোরাই পণ্য কিনে তাকে সহযোগিতা করতো। ডিবি পুলিশ জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া সেই অপহরণকারী শাকিলের বিরুদ্ধে আরও অর্ধশতাধিক তরুণীকে অপহরণ করে তাদের জিনিসপত্র ছিনতাই ও অশালীন আচরণ করার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। গতকাল শনিবার ৩রা সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর একটি এলাকা থেকে তিন সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোটরসাইকেল, একটি পিস্তল, একটি ওয়াকিটকি, ৬টি মোবাইল ফোন, একাধিক ভুয়া আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। আজ রোববার ৪ঠা সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, প্রতারক রুবেলের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ বিভিন্ন থানায় মোট ছয়টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। তার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে দেড় হাজারের মতো ছিনতাই করা হয়েছে। এছাড়া অর্ধশতাধিক মেয়েকে অপহরণ করে তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে তারা।
মহানগর গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, তার স্থায়ী ঠিকানা বলতে এখন পর্যন্ত তিনটি স্থানের নাম পাওয়া গেছে। তিনি একজন ‘মনুষ্যত্বহীন’ ব্যক্তি। তার টার্গেট ছিল স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে প্রথমে ছিনতাই ও পরে তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করা। অপহরণ ও ছিনতাইয়ের শিকার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিষয়টি লোকলজ্জার ভয়ে পুলিশকে জানাতেন না। অপহরণ, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল, ব্যাগ খোয়া ও অশ্লীল আচরণ করা হলেও লোকলজ্জার ভয়ে তারা বিষয়টি গোপন করতেন। এতে শাকিলের অপরাধগুলো অধিকাংশ সময় ঢাকা পড়ে যেত। মহানগর গোয়েন্দা প্রধান বলেন, সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায় প্রতারক শাকিল। এ সময় তার কোমরে পিস্তল ছিল। হাতে ছিল ওয়াকিটকি। এ ঘটনার কয়েকদিন আগে পুলিশ পরিচয়ে বরিশালে আরেক মেয়েকে তুলে নিয়েছিল অপহরণকারী শাকিল। এর আগে পূর্বাচল, গাজীপুর, উত্তরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফরিদপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকায় নারীদেরকে অপহরণ করার কথা স্বীকার করেছে শাকিল।
তিনি বলেন, ঢাকায় তার কোনো স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। কোনো বাসা বাড়িতে না থেকে একেক সময় একেক হোটেলে অবস্থান করতো। গত ২৫শে আগস্ট দুপুরে কল্যাণপুর এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণের সময় যে মোটরসাইকেলটি শাকিল ব্যবহার করেছিলেন, সেটি গত ১২ই আগস্ট উত্তরা এলাকা থেকে ছিনতাই করে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্য হারুণ অর রশিদ বলেন, রাস্তায় কেউ পুলিশ পরিচয়ে মোটসাইকেলে তুলে নিতে চাইলে তাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। পুলিশ এভাবে কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছে সাহায্য চাইতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews