অর্থনীতির সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে রাষ্ট্রের ক্ষতি করে চলেছে সরকার : বিএনপি
মির্জা ফখরুল বলেণ, সরকার বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বানভাসি মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারেনি।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকার অর্থনীতির সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে, রিজার্ভের সকল বিধি বিধান ভঙ্গ করে শুধুমাত্রা নিজেদের ঘনিষ্ট এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে বলে অবিযোগ করেছে বিএনপি।
সোমবার রাতে জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এর জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান,নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় নিম্ন বর্ণিত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত ২০ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায়, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধাসহ, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার ফলে লক্ষ লক্ষ বন্যা দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপি এর ত্রাণ কমিটির আহŸায়ক, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুÑ বন্যা পরিস্থিতি ত্রাণ কমিটির গৃহীত উদ্যোগ, বন্যা দূগর্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, সারা দেশের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ত্রাণ কাজে অংশ গ্রহণ এবং অর্থ সংগ্রহ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থান করেন। সভা, এখন পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে এবং বন্যা পরবর্তী দুযোর্গ মোকাবেলার জন্য বিশেষ করে বন্যা বাহিত রোগ, ডায়রিয়া রোগের ঔষধ ও চিকিৎসা প্রদানের জন্য ডক্টরর্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ ত্রাণ কমিটির বৈঠকে আগামী ৫ জুলাই পরবর্তী কর্মসূচী গ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
সভা মনে করে সরকার বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বানভাসি মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বন্যা পরবর্তী পূর্ণবাসন সরকারের কর্মকান্ড দৃশ্যমান নয়। অবিলম্বে দূর্গত মানুষের মাঝে খাদ্য, বস্ত্র, গৃহ নির্মাণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থার জোর দাবী জানানো হয়।
৩। সভায়, ‘ইডিএফ’ নাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাড় ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদানের ফলে প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৪.০২ বিলিয়ন ডলার। ঐ ধরনের প্রায় সবটাই (ফোর্সডলোন অধিকাংশই রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাংকের) পর্যবসিত হয়েছে। আই.এম.এফ এই ধরনের ঋণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ন্তভূক্ত না করতে বলেছে। এই সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার অবয়বে আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সরকার অর্থনীতির সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে, রিজার্ভের সকল বিধি বিধান ভঙ্গ করে শুধুমাত্রা নিজেদের ঘনিষ্ট এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে। ‘ইডিএফ’ ঋণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ী, ব্যবসা, স্থাপনা তৈরী করে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করছে। শুদুর প্রসারী প্রভাব সামাজিক অর্থনীতি ও সমগ্র অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে ফেলবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশংকা করছেন। সভায়, এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৪। সভায়, সম্প্রতি সাভারে স্কুল শিক্ষক হত্যার ঘটনা, নড়াইলে অধ্যক্ষকে অপমানসহ সারা দেশে সামাজিক নৈরাজ্যের চিত্রে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। সভা মনে করে, এই অনির্বাচিত সরকারের কোনও দায়বদ্ধতা না থাকায়, সমাজের সকল পর্যায়ে নীতি নৈতিকতা চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। সভা মনে করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের কাছে গ্রহণ যোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট এবং সরকার গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টি করলেই সমাজে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।
৫। সভায়, দেশজুড়ে ‘জনশুমারী’ ও গৃহণনার কাজ সঠিক ভাবে হয়নি বলে পরিকল্পনামন্ত্রী স্বীকারক্তিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। জনশুমারী প্রকৃত পক্ষে সম্পর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারের আমলে সব ধরনের সমীক্ষা জরীপ এবং তথ্য সংগ্রহ এর কাজ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী হওয়ায় প্রকৃত তথ্য কখনই পাওয়া সম্ভব হয়নি। জনগণকে এবং বিশ^জনমত বিভ্রান্ত করার জন্য, দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা সৃষ্টি করার জন্যই সরকার এই ধরনের নীতি বিবর্জিত কার্যকলাপ করে চলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলো বাংলাদেশের সকল তথ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারছেনা। সভা, এ বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। সঠিক পদ্ধতিতে প্রকৃত জনশুমারী ও গৃহ গণনার ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানায়।
৬। সভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫০তম অধিবেশনে উত্থাপিত ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোরদার শীর্ষক প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবীতে’ সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকার সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে গণতন্ত্রকে হরণ করছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews