অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৯ সদস্যের অনাস্থা

অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৯ সদস্যের অনাস্থা

প্রথম নিউজ, নোয়াখালী : ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে সদস্যদের সংবাদ সম্মেলনইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে সদস্যদের সংবাদ সম্মেলন

নোয়াখালী সদর উপজেলার কালাদরাফ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহদাত উল্যাহ সেলিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে অনাস্থা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পরিষদের আট সদস্য। অনাস্থা জানানো আরেক সদস্যকে চেয়ারম্যানের লোকজন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসতে দেয়নি বলেও অভিযোগ করেন অপর আট সদস্য।

সোমবার (৯ অক্টোবর) জেলা শহর মাইজদীর একটি রেস্টুরেন্টে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নারী ও পুরুষ সদস্যবৃন্দ অবিলম্বে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান। উপস্থিত আট জন সদস্যসহ নয় জন সদস্য এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অনাস্থা জমা দেন।

লিখিত বক্তব্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গোলাম কুদ্দুস উল্লেখ করেন, গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি নতুন পরিষদ গঠিত হওয়ার পর শাহদাত উল্যাহ নিজ উদ্যোগে ট্যাক্স বই ছাপিয়ে চৌকিদারদের মাধ্যমে প্রায় ২৩ লাখ টাকা আদায় করেন। কিন্তু ওই টাকা পরিষদের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেন। একইভাবে পরিষদের সভার কার্যবিবরণী ছাড়াই নিজ উদ্যোগে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের হোল্ডিং নম্বর থাকা সত্ত্বেও নতুন হোল্ডিং নম্বর প্লেট তৈরি করে তা জনসাধারণের মাঝে বিক্রি করে প্রায় ১৭ লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া পরিষদের অনুমতি ব্যতীত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করে নিজস্ব কালেক্টর বাহিনীর মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে প্রায় ৭৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। উল্লিখিত হোল্ডিং নম্বর প্লেট, হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের কোনও টাকা পরিষদের ব্যাংক হিসাবে জমা করেননি চেয়ারম্যান।

পাশাপাশি তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রেড লাইসেন্সের রসিদ বই ছাপিয়ে ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার দোকান হতে ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। এ ছাড়া মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের টাওয়ার, করাত কল, প্রভিটা কোম্পানির কাছ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা আদায় করেন, যা ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয়নি।

লিখিত বক্তব্যে সদস্যরা অভিযোগ করেন, সরকারি এডিপি, টিআর, জিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের কাজে সরকারি বরাদ্দের বিষয়ে কারও সঙ্গে কোনও ধরনের আলোচনা না করে একটি প্রকল্পকে একাধিকবার দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান। তিনি সরকারি ভূমি হস্তান্তর কর নামে পরিষদে যে আয়ের খাত রয়েছে, ওই খাতের প্রায় ৩২ লাখ টাকা পরিষদের কারও সঙ্গে আলোচনা না করে খরচ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সদস্যদের অভিযোগ, কর্মসংস্থান কর্মসূচির অধীন ৪০ দিনের কর্মসূচি, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড বিতরণেও ৯০ শতাংশ নিজের কাছে রেখে নিজস্ব লোকজনের মাঝে বিলি করেছেন। এ ছাড়া তিনি পরিষদের সদস্য দাখিল করা কোনও প্রকল্প ও কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে কোনও ধরনের আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্তে সকল কাজ করেন। যা স্থানীয় সরকারের নীতিমালা পরিপন্থি। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান পরিষদের ১২ জন সদস্যের সবাই তার বিরুদ্ধে গেলেও কিছু হবে না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অপর সদস্যরা হলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য আলেয়া বেগম, রুমি আক্তার, সদস্য মো. নাছির, আহসান উল্যাহ, আবুল কালাম আজাদ, মো. হানিফ শেখ ও মো. আবুল বাসার।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান শাহদাত উল্যাহ সেলিম বলেন, ‘একটি মহলের ইন্ধনে পরিষদের সদস্যরা তার বিরুদ্ধে লেগেছে। তিনি কোনও ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি কিংবা সরকারি অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত নন। সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও ভিত্তিহীন। পরিষদের সকল সিদ্ধান্ত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়।’

নোয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখিনূর জাহান নীলা জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশতেফুল হাসানকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।