১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে দেশের নিট রিজার্ভ: জাহিদ হোসেন
বুধবার ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের (আইবিএফবি) বার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশের নিট রিজার্ভ এখন ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে বলে মত দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে। আবার দেশে কী পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ঢুকছে এবং কী পরিমাণ মুদ্রা বেরিয়ে যাচ্ছে, তার প্রকৃত হিসাব রিজার্ভ দিয়ে মিলছে না। জাহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত এই হিসাব কখনো ধনাত্মক, আবার কখনো ঋণাত্মক। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এই হিসাব বেশ কিছুদিন ধরে ঋণাত্মক। এর অর্থ হলো, আমাদের জানার বাইরে কিছু একটা ঘটছে। বুধবার ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের (আইবিএফবি) বার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। আইবিএফবির সভাপতি হুমায়ুন রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
জাহিদ হোসেন বলেন, বাজারে বিদেশি মুদ্রা চাহিবামাত্র পাওয়া না গেলে মুদ্রার প্রতিযোগিতামূলক, বাজারভিত্তিক, নমনীয় ও একক বিনিময় হার নির্ধারণ করেও লাভ হবে না। সমালোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিরও। তার ভাষায় এটি ‘অনন্য’; এ কারণে যে এটি একদিক থেকে সংকোচনমূলক, আরেক দিক থেকে সম্প্রসারণমূলক। এটা কোনোভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। আবার বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমলেও সরকারের ঋণ বাড়ছে। তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার একটি কারণ বহিস্থ। এই বহিস্থ কারণের বড় দিক হচ্ছে ডলারের দাম। ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান ২০২১ সালেও ১০০-এর নিচে ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তা ১০০-এর ওপরে চলে যায়। এখন কিছুটা কমলেও এখনো তা ১০০-এর ওপরে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম এবং ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সে কারণে অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়ছে। এতে যেমন বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময় হার কমছে, তেমনি রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম ৬-এর সংজ্ঞা অনুসারে বাংলাদেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ এখন ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে। এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার পেছনে বৈশ্বিক কারণের সঙ্গে দেশীয় কারণও আছে। সেটা হলো সরকারের নীতি পরিবর্তন। সরকারের অগতানুগতিক নীতির কারণে গত ২৪ মাস বা ২ বছরে প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার করে রিজার্ভ কমেছে। ২০২২ সাল থেকে দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহও কমছে। ২০২২ সালে যেখানে মাসে ২০০ কোটি ডলার আসত, সেখানে ২০২৩ সালের প্রথম ৩ ত্রৈমাসিকে দেশে প্রতি মাসে গড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।