‘১১ বছর ধরে যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি, আমার সন্তানদের ফিরিয়ে দেন’
দুই ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি নিয়ে ফিরোজা বেগম বলেন, দীর্ঘ ১১ বছর দুই সন্তানের ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছি।
প্রথম নিউজ, বরিশাল: চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে মা ফিরোজা বেগমের বড় ছেলে ফিরোজ খান কালু ও ছোট ছেলে জিতু নিখোঁজ হয়ে যায়। ফিরোজ বরিশালের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ও তার ছোট ভাই তৎকালীন মহানগর ছাত্রদলের একাংশের যুগ্ম আহ্বায়ক জিতু হত্যা মামলার আসামি।
দুই ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি নিয়ে ফিরোজা বেগম বলেন, দীর্ঘ ১১ বছর দুই সন্তানের ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছি। দুর্বিষহ যন্ত্রনা নিয়ে বেঁচে আছি। আমার সন্তানদের ফিরিয়ে দেন। সন্তানদের জন্য মায়ের এই অপেক্ষা কতটা কষ্টদায়ক তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না। আমার সন্তান অন্যায় করলে দেশে আদালত আছে সেখানে বিচার হতে পারতো। এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া কোনো রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে পড়ে?
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে ‘মায়ের ডাক’ ও ‘হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস নেটওয়ার্ক’ এর যৌথ উদ্যোগে শুক্রবার (২৬ মে) দুপুরে বরিশাল অশ্বিনী কুমার হলের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানান তিনি।
ফিরোজা বেগম বলেন, ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে আমার বড় ছেলে ফিরোজ খানকে চট্টগ্রাম থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে যায়। ওই বছরের আগস্ট মাসে ছোট ছেলে মিরাজকেও ঢাকা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে গেছে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ নেই। এই ১১ বছর ধরে কী দুর্বিসহ যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে বেঁচে আছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি যেকোনো মূল্যে আমার ছেলেদের ফেরত চাই। অবিলম্বে আমার ছেলেদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
সংগঠনের সদস্য এসকান্দার সিকদারের সভাপতিত্ব মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন নিখোঁজ ফিরোজ খান কালু ও মিরাজ হোসেন খানের বোন মুক্তা বেগম, নিখোঁজ ফিরোজের স্ত্রী আমেনা আক্তার বৃষ্টি, নারগিস আক্তার পারভিন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৪ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর কালিবাড়ি রোডের সরকারি বরিশাল কলেজের প্রধান ফটকের সামনে রাফসান আহমেদ জিতুকে নৃসংশভাবে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। জিতু তৎকালীন মহানগর ছাত্রদলের একাংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সরকারি বরিশাল কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে ওই খুনের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিল ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান কালু। তার ভাই মিরাজও জিতু হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।