সাহস নিয়ে রাজপথে নেমে দানব সরকারকে পরাজিত করতে হবে: মির্জা ফখরুল

সরকারের পদত্যাগ ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সহ একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় গণমিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সাহস নিয়ে রাজপথে নেমে দানব সরকারকে পরাজিত করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সাহস নিয়ে রাজপথে নেমে দানব সরকারকে পরাজিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমহগীর। 

সরকারের পদত্যাগ ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সহ একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় গণমিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এ কর্মসূচি পালন করে। এরআগে ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে পীরজঙ্গী মাজার হয়ে আরামবাগ, ফকিরাপুল হয়ে নয়াপল্টনে এসে মহানগর দক্ষিণের গণমিছিল নয়াপল্টনে জড়ো হোন। অপরদিকে রামপুরা ডেল্টা হাসপাতাল থেকে শুরু হয়ে গণমিছিলটি হাজীপাড়া, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, মৌচাক, শান্তিনগর হয়ে নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হয়। দুটি গণমিছিল একজায়গায় মিলিত হলে পুরো নয়াপল্টন জনসমুদ্রে রূপ লাভ করে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুটি ট্রাক দিয়ে তৈরী করা হয় ভাসমান মঞ্চ। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও লাখো জনতার উপস্থিতিতে জনগণ সরকারকে না বলে দিয়েছে। দেশের মানুষ এ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এরা ক্ষমতায় টিকে থাকতে সকল অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে। আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আটক রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার জনগণের সবধরনের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। জনগণের আওয়াজ স্তব্ধ করে আবারও এরা ক্ষমতায় আসতে চায়।  আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। সরকার জোড় করে ক্ষমতায় আসতে চাইবে। সবাইকে সতর্ক থাকবে হবে। নেতাকর্মীদের বুকে সাহস নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে  দিতে হবে। মির্জা ফখরুল বক্তব্য দেওয়ার প্রারম্ভে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে বক্তব্য সংক্ষেপ করেন তিনি। বক্তব্য শেষে তিনি শ্লোগান ধরেন, "সকল রাজনৈতিক দল একহও, একহও"। 

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে এই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব থাকবে না। দেশের মানুষের যে অবস্থা তা যদি সরকারের বোধগম্য হতো তাহলে আর ক্ষমতায় থাকত না। বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা ঘুম করে বিভিন্নভাবে বিপদে ফেলে সরকার আবারো ক্ষমতায় থাকতে চাই। সুতরাং এই সরকারকে পতন না ঘটানো পর্যন্ত আপনাদের টিকে থাকার আর কোন পথ নাই বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পতন ঘটাতে চায়। তবে সরকার যদি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয় তাহলে আমরাও শান্ত হয়ে থাকবো না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মারার চক্রান্ত করছে। তাকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মানেই গণতন্ত্রের মুক্তি বলিও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা যখন আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে তখন রাস্তায় এত নেতাকর্মী কোথায় থাকে। নেতাকর্মী মাঠে থাকলে পুলিশ এর মধ্যে সাহস পাবে না। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন এই আন্দোলনে সকলকে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা সবাই যদি মাঠে নামে পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নাই আমাদের আটকাতে পারবে। তাই রাজপথে লড়াই করার দরকার। রাজপথ এই ফয়সালা করতে হবে এই সরকার বিরোধী আন্দোলনের।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিদেশীদের কাছে ধন্যা ধরছেন। অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার জন্য দেশ বিক্রির পাঁয়তারা করছে। যে সরকার গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরেছে তাকে আর সময় দেওয়া যাবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতার মস্নার থেকে নামাতে হবে। এ সরকার এতটাই নিষ্ঠুর যে অসুস্থ মানুষকেও চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দিচ্ছে না।

বিএনপির সিনিয়র যুব মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সারাদেশে যে আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে তা ব্যর্থ হতে পারে না। পদযাত্রা কর্মসূচিতে সারা ঢাকা শহরের মানুষ জেগে উঠেছে, এই আন্দোলন ব্যর্থ হতে পারেনা। আন্দোলনের জোয়ারে ভারতে যাবেন না অন্য কোথায় যাবেন সেটি আপনারা ঠিক করেন। এই সংগ্রাম চূড়ান্ত পর্যায়ে না যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, খালেদা জিয়ার কিছু হলে এই সরকারকে দায় নিতে হবে।  বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আমরা তার বিদেশের চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রয়েছেন নির্বাচনে। তার নির্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে আন্দোলন চলছে। আর মির্জা ফখরুল যদি গ্রেপ্তার হয় দেশে আগুন জ্বলবে। কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন আমান উল্লাহ আমান।

ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় গণমিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনম সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।