সিলেটের কিশোর গ্যাং এর কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা
সিলেটে বেপরোয়া ‘কিশোর গ্যাং’। জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। মেতে উঠেছে খুনাখুনিতেও। ওদের হাত ধরে সয়লাব মাদক। ইয়াবাও তাদের হাতে হাতে।
প্রথম নিউজ, সিলেট: সিলেটে বেপরোয়া ‘কিশোর গ্যাং’। জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। মেতে উঠেছে খুনাখুনিতেও। ওদের হাত ধরে সয়লাব মাদক। ইয়াবাও তাদের হাতে হাতে। ফলে অপরাধকে অপরাধই মনে করে না তারা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- কিশোর গ্যাংয়ে যারা এসব অপকর্মে জড়িত তাদের বেশির ভাগই পরিবহন শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক কিংবা দোকান কর্মচারী। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা খুবই কম।
তাদের কাছে জিম্মি এলাকার মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা। সিলেটের ওসমানী মেডিকেল এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে এক তরুণের মৃত্যুর পর সিলেটের কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। গত শনিবার ওসমানীর ইমার্জেন্সি ফটকের বাইরে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বের জের ধরে খুন করা হয়েছে কিশোর গ্যাংয়েরই আরেক সদস্য নাজিম আহমদকে। নাজিম পেশায় ছিল হোটেল শ্রমিক। আর তাকে হত্যার ঘটনায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারাও বিভিন্ন পেশার শ্রমিক। কাজ শেষ হলে সবাই চলে আসতো মেডিকেলে। আর ওখানে এসে তারা আড্ডা দিতো। মেডিকেলের ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে। বর্তমানে এরা রিমান্ডে রয়েছে।
সর্বশেষ গত সোমবার রাতে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে নগরের সুবিদবাজার এলাকার বনকলাপাড়ার সোহাগ ও সিলেট সদর উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের আফসার হোসেনের ছেলে সানি। এর আগে ঘটনার দিনই সিলেট নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার মীর কাশেমের ছেলে জুয়েল আহমদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি মুহাম্মদ আলী মাহমুদ জানিয়েছেন- এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য মিলেছে। তবে- কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা ওই এলাকায় বসে আড্ডাও দিতো। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। মেডিকেল এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- মেডিকেল এলাকা পুরোটাই কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ইমার্জেন্সি ফটক, আলবাহার গলি, শাপলার পেছন, মনিকা সিনেমা হলের সামনে, শামীমাবাদ, ঘাষিটুলা, বাগবাড়ি, পশ্চিম শেখঘাট, মেডিকেলের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা, নার্সিং হোস্টেল এলাকা সবই ছিল কিশোর গ্যাংয়ের দখলে।
ছাত্রলীগের ব্যানারে থাকা বিভিন্ন নেতার নামে তারা এসব এলাকায় বসে আড্ডা দিতো। নাজিম খুনের ঘটনায় এখন পালিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এদিকে- কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য নিয়ে চিন্তিত সিলেটের মানুষও। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- গত বছরের ২৭শে মে রাতে সিলেট নগরীর নয়াসড়ক কিশোরী মোহন স্কুলের সামনে থেকে দুই কিশোরকে অপহরণ করে কিশোর গ্যাংয়ের ১০-১২ জন সদস্য। পূর্ব জিন্দাবাজার আসার পর স্থানীয় লোকজনের প্রতিরোধের মুখে অন্যরা পালিয়ে গেলে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে অপহৃত কিশোররা অন্য একটি গ্রুপের এক কিশোরের ওপর হামলা চালিয়েছিল। এর জের ধরে ওই গ্রুপের কিশোররা ওইদিন তাদেরকে পেয়ে অপহরণের চেষ্টা চালিয়েছিল। এরকম কিশোর গ্যাং নগরীর আম্বরখানা, বড়বাজার, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, কাজিটুলা, কুমারপাড়া, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, নয়াসড়ক, মিরাবাজার, ভাতালিয়া, লামাবাজার, মেডিকেল রোডসহ বিভিন্ন স্থানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সিলেট মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডাস্থল চিহ্নিত করা হচ্ছে। এবং যাদের নেতৃত্বে বসে আড্ডা দেয়া হয় তাদের নাম ঠিকানাও সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews