সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে টাকা আয়ের জন্য : ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের সমাজকে বিভক্ত করে ফেলেছে। তারা কোন ভালো কাজ করতে পারেনি। সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে অকার্যকর করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। এই সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে টাকা আয়ের জন্য : ফখরুল

প্রথম নিউজ,সিলেট: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। তারা এই দেশের সমাজকে পুরোপুরি বিভক্ত করে ফেলেছে এবং একটা দূষিত সমাজে পরিণত করেছে। দেশের অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের পকেট কেটে টাকা নিচ্ছে। সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে টাকা আয়ের জন্য।

মহানগর বিএনপির সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে এই সম্মেলন শুরু হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে, বেআিইনিভাবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সারা বাংলাদেশে ভয়াবহ রকমের নির্যাতন-নিপীড়নের সময় চলছে।’ ‘আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনে আমাদের ১৭ জন নেতা-কর্মী রাজপথে প্রাণ দিয়েছেন। শত শত নেতা-কর্মীকে আহত করা হয়েছে। হাজারো নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও তারা কী পেরেছে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে ? পারেনি বন্ধুগণ।

মির্জা ফখরুল বলেন, বন্ধুগণ. আওয়ামী লীগ আমাদের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিগুলো করেছে, তার মধ্যে আমি কয়েকটার কথা আপনাদের বলবো। একটি বড় ক্ষতি হচ্ছে, আমাদের যে সংবিধান ১৯৭২ সালে এই দেশের মানুষ রচনা করেছিল, যে সংবিধান সবাই মেনে নিয়েছিল, সেই সংবিধানকে তারা বারবার কাটাছেঁড়া করে একটা অকার্যকর সংবিধানে পরিণত করেছে। যখনই তারা সুযোগ পেয়েছে ক্ষমতায় আসার তখনই তারা সংবিধানকে ধ্বংস করেছে, তখনই তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হাত দিয়েছে, সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করেছে, কণ্ঠরোধ করেছে সংবাদপত্রের।’ ‘সরকার অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। এমনভাবে ধ্বংস করেছে, যেটাকে টেনে অত্যন্ত তোলা কঠিন। আজকে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে, দুর্নীতির স্বার্থে, চুরি করার স্বার্থে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে। তারা পাতাল রেল করছে, মেট্রোরেল করেছে, কতো টাকা খরচ হয়েছে? যা খরচ হওয়ার কথা তার চেয়ে তিনগুণ খরচ করেছে। পদ্মাসেতু করে খুব বাহবা নেয় তারা। সেই পদ্মাসেতু বানাতে ১০ হাজার কোটি টাকা ছিল বাজেট, তার প্রকল্প, যেটা আমাদের সময় করা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। সেটা আজকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। চট্টগ্রামে টানেল তৈরি করেছে, যে টানেলের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা আমরা জানি না। অথচ হাসপাতালে আমার রোগীরা ঠিকমতো বেড পায় না, ওষুধ পায় না, তারা ডাক্তার পায় না।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আপনারা দেখুন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতো খারাপ হয়েছে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় চড়-থাপ্পড় মেরে ১১ কোটি টাকা নিয়ে যায়! পরে আবার ওরাই খোঁজে পায়, তার মধ্যে আবার দুই কোটি টাকা পাওয়া যায় না!

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থাকে তারা সম্পূর্ণ নিজেদের করায়ত্ত করে নিয়েছে। এইভাবে তারা আজকে দেশ পরিচালনা করছে শুধুমাত্র শক্তি দিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে। তারা বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে তাদের টাকা আয় করার জন্য, চুরি করার জন্য। এবং আদানি, ভারতের বিশাল কোম্পানি, তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আমরা হিসেব করে দেখেছি, এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা লোকসান হবে। অন্য দেশের চেয়ে দ্বিগুণ দামে আমাদেরকে কয়লা কিনতে হচ্ছে। চুক্তির ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম দাঁড়াবে প্রায় ১৬ টাকার মতো, যেটা এখন ৮ টাকার মতো দিতে হচ্ছে। এটাও আবার দুই মাসে তিনবার দাম বাড়িয়েছে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে জনগণের পকেট কেটে তারা টাকা নিচ্ছে।’মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে। কথা দিয়েছিল, তারা ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেবে। ১০ টাকা কেজি দরে চাল খেতে পারেন এখন? না, ৭০ টাকা কেজি মোটা চাল এখন। এখন পত্রিকায় দেখলাম, মিহি চাল যেটা সেটা ১৭০ টাকা! ডালের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে। ডিম সাধারণ মানুষের প্রোটিনের উৎস, সেটার দাম তিন-চারগুণ বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে এক লাফে ৬০ টাকা। মানুষ কোথায় যাবে? এরকম একটা অবস্থা এই সরকার তৈরি করেছে।

‘নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে সরকার’ এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “গত দুটো নির্বাচন করেছে, আপনারা দেখেছেন, যারা একটিতে কোনো ভোটই হয় নাই, ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করিয়ে তারা সরকার গঠন করেছিল। ভোটকেন্দ্রগুলোতে কুকুর বসেছিল। আমাদের শফিউল আলম প্রধান সাহেব, জাগপার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনি খুব সুন্দর একটা কথা বলেছিলেন। যে এই নির্বাচনকে নাম দেওয়া যেতে পারে ‘কুত্তা মার্কা নির্বাচন’। ২০১৮ এর যে নির্বাচন, সে নির্বাচনে আগের রাতেই তারা সব ভোট দিয়ে চলে গেছে। আর ভোটের দিন যেটুকু বাকি ছিল, সেটুকু করে, কাউকে কাছেও ভিড়তে দেয়নি। তার আগে পুলিশকে ব্যবহার করে তারা এমন একটা অবস্থার তৈরি করেছিল। বিএনপি মহাসচিব বলেন. শহীদ জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনব্যবস্থা রূপান্তর করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সম্প্রতি তিনটি বিস্ফোরণ ও বেশ কয়েকজন নিহতের ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই প্রাণের কী কোনো মূল্য নেই? কাদের জন্য এরা মারা যাচ্ছে? তাদের বিচার করতে হবে। সরকারের ব্যর্থতা, তাদের ডিপার্টমেন্টগুলোর ব্যর্থতা, যারা দায়িত্বে আছেন তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা নির্বাচন করতে চায় সংবিধানের অধীনে, বর্তমান যে সংবিধান আছে সেটার অধীনে। সেই সংবিধানে কী আছে? যে দলীয়, আওয়ামী লীগের অধীনেই নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষ কেউ বিশ্বাস করে? আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তারা বিশ্বাস করে ? তখন নেতা-কর্মীরা আওয়াজ দেন ‘না’ বলে।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদী লুনা, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী প্রমুখ ।