সম্ভ্রম রক্ষায় চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে পড়া সেই নারীর মৃত্যু
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি মারা যান।
প্রথম নিউজ, ভালুকা, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ভালুকায় বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারলেও জীবন রক্ষা করতে পারলেন না পোশাককর্মী শামসুননাহার (৪০)। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মোজাম্মেল হক তিনজনের নাম উল্লেখ করে ভালুকা মডেল থানায় মামলা করেছেন। বাসচালক রাকিব হোসেনসহ ওই তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপর গ্রেফতাররা হলেন চালকের সহকারী আরিফ হোসেন ও আনন্দ দাশ। ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বিকালে শামসুননাহারের লাশ মোজাম্মেল হকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভালুকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক জাকিউল ইসলাম জানান, মাথায় গুরুতর জখমপ্রাপ্ত ওই গার্মেন্টকর্মীকে প্রথমে নিউরো সার্জারিতে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে রোববার সকালে তিনি মারা যান।
পুলিশ জানায়, ১৬ জুন রাত ১১টার দিকে গাজীপুর শ্রীপুরের মাওনা রিদিশা গার্মেন্টের বিধবা পোশাককর্মী দুই সন্তানের মা শামসুননাহার বাসে ভালুকা ফিরছিলেন। বাসটি ভালুকার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে আসার পর অন্য যাত্রীরা বাস থেকে নেমে পড়েন। এ সময় তাকে একা পেয়ে বাসচালক ও তার সহকারী চলন্তবাসেই ধর্ষণের চেষ্টা চালান। সম্ভ্রম বাঁচাতে ওই নারী জামিরদিয়া মায়ের মসজিদ এলাকায় বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে মাথায় আঘাত পান।
ঘটনাটি স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বাসটির পিছু নেন। খবর পেয়ে ভালুকা থানার উপপরিদর্শক আব্দুল করিম মহাসড়কের উলটো রাস্তা দিয়ে এসে আমতলী এলাকায় বাসের সুপারভাইজার আনন্দ দাসকে গ্রেফতার করেন। আনন্দের তথ্য অনুযায়ী ভালুকা ও ত্রিশাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাসচালক রাকিব ও বাসের সহকারী আরিফকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ আহত শামসুননাহারকে উদ্ধার করে প্রথমে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে জ্ঞান না ফেরায় তাকে রাত ২টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহতের ছেলে মো. সজিব বলেন, মা প্রায় ১০ বছর গার্মেন্টে চাকরি করে আমাদের দুভাইকে পড়ালেখা করাতেন। আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।