সাবেক ৩১ এমপির গাড়ি নিলামে

গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বিগত সরকারের এমপিরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব গাড়ি এনেছিল।

সাবেক ৩১ এমপির গাড়ি নিলামে

প্রথম নিউজ, অনলাইন : অবশেষে নিলামে উঠছে আওয়ামী লীগ সরকারের এমপিদের নামে আসা ৩১টি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বিগত সরকারের এমপিরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব গাড়ি এনেছিল। কিন্তু ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এমপিদের পদও চলে যায়। তবে তাদের নামে আনা গাড়িগুলো স্বাভাবিক নিয়মে (শুল্ক দিয়ে) ডেলিভারি নেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা নেয়নি। এখন এই গাড়িগুলো নিলামে উঠছে। এসব গাড়ির সাথে আরো ৬৯টি নতুন ব্র্যান্ডের গাড়িও থাকছে নিলামে।

নিলামের কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার সাকিব হোসাইন বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুসারে এমপি কোটায় আনা গাড়িগুলো শুল্ক দিয়ে ছাড় করিয়ে নেওয়ার জন্য আমদানিকারকদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে রেসপন্স না পাওযায় এখন গাড়িগুলো নিলামে উঠছে। এমন গাড়ি রয়েছে ৩১টি।

এমপিদের নামে ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে এসেছিল। এসব গাড়ির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। কিন্তু নিলামে বিক্রির জন্য গাড়িগুলোর ভিত্তিমূল্য কতো ধরা হয়েছে জানতে চাইলে সাকিব হোসাইন বলেন, ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এই টাকার ৬০ শতাংশ দাম যদি নিলামে পাওয়া যায় তাহলে নিলাম কমিটি ডাকদাতাকে গাড়ি দিতে পারে। এর কম পাওয়া গেলে দ্বিতীয় নিলামের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

নতুন এসব গাড়ি হতে আশানুরূপ দাম পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে সাকিব হোসাইন বলেন, এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। নিলাম ডাক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আগামী সপ্তাহে আমরা নিলাম বিজ্ঞপ্তি দিতে পারি। কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, এমপি কোটার ৩১টি ল্যান্ড ক্রুজার ছাড়াও ১৩টি হেভেল, ১টি রেভফোর, ৫টি হ্যারিয়ার, ৩টি নোয়া, ৩টি প্রিমিও, ১০টি ড্রাম ট্রাক, ৩০টি মিক্সচার ট্রাক, স্কয়ার ৩টি ও ওসাকা ব্রান্ডের একটি গাড়ি রয়েছে।

নিলামে টাকা বেশি পাবে

এবার নিলামে সব গাড়ি নতুন ব্র্যান্ডের হওয়ায় এবার কাস্টমস বেশি টাকা রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টমসের সহকারী কমিশনার সাকিব হোসাইন বলেন, আমরা শুধু এমপি কোটার ৩১টি গাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ কোটি এবং অন্যান্যা ব্র্যান্ডের গাড়ি থেকে আরো ১০০ কোটিসহ মোট ৪০০ কোটি টাকা রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।

কাস্টমসের এই লক্ষ্যমাত্রার সাথে একমত পোষণ করে এবং এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কাস্টমস বিডার (নিলাম ডাকে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন) এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব চৌধুরী বলেন, গাড়িগুলো ইয়ার্ডে পড়ে থাকলে বছর বছর দাম কমতো এবং এক সময় অকেজো হয়ে যেতো। তখন স্ক্র্যাব হিসেবে বিক্রি করা লাগতো। এবার নির্ধারিত সময়ের পর দ্রুত নিলামে চলে আসায় নতুন গাড়ি কেনার সুযোগ পাবে বিডাররা। ফলে সরকারও বেশি টাকা রাজস্ব পাবে এবং গাড়িগুলোও ব্যবহারের আওতায় আসবে।

তবে এ বিষয়ে কাস্টমসের প্রতি দাবি উত্থাপন করে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টাস এন্ড ডিলার্স এসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, নিলামে আমরা দেখি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মূল্য ধরে রাখে (৬০ শতাংশ দর না উঠলে কিংবা উঠলেও অনেক সময় মাল দেয় না)। এ ক্ষেত্রে বর্তমান বাজার বিবেচনায় যে ডাক পাওয়া যায় সেই ডাকে পণ্যটি দিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। বাজার মূল্যের সাথে তাল মেলাতে না পারার কারণেই তো আমদানিকারক গাড়িটি খালাস করেনি। অন্যথায় বছরের পর বছর শেডে পড়ে থেকে গাড়িগুলো নষ্ট হবে।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেডে গিয়ে দেখা যায়, এমপিদের কোটায় আনা ৩১টি গাড়ি এবং এ ছাড়া অন্যান্য যেসব গাড়ি নিলামে তোলা হবে সেগুলোও নির্ধারিত জায়গায় রাখা হয়েছে।