মাত্র ৫০ টাকার জন্য রোগীর অক্সিজেন খুলে দেয় ওয়ার্ডবয় ধলু
ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে স্কুলছাত্রের অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়া কর্মচারী গ্রেফতার
প্রথম নিউজ,বগুড়া: িওয়ার্কশপে গ্রিল ওয়েল্ডিংয়ের শ্রমিক বিকাশ চন্দ্র দাস গত মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাইসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে গাইবান্ধার সাঘাটায় মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বগুড়ার একটি সরকারি হাসপাতালে রাত ১০টায় ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের যে ওয়ার্ডে বিকাশ ভর্তি ছিল সে ওয়ার্ডে দৈনিক মজুরিভিত্তিক ওয়ার্ডবয় হিসেবে কাজ করতেন মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলু। মাত্র ৫০ টাকার জন্য বিকাশের মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে নেন ধলু। এতে বিকাশের মৃত্যু হয়।
নিহত স্কুলছাত্র বিকাশ চন্দ্র দাশ গাইবান্ধার স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে ওয়ার্কশপে গ্রিল ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে পড়ালেখার খরচ চালাত।
বকশিশের টাকা না পেয়ে অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেওয়ায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ধলুকে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ভোরে রাজধানীর আব্দুলাহপুর থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-১২ ও র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা দল।
দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, বিকাশ আহত অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছালে জরুরি বিভাগের দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী আসাদুল ইসলাম মীর ধলু ভিকটিমের অভিভাবকের কাছে চিকিৎসা দালালির নামে ৫০০ টাকা দাবি করেন। পরে ২০০ টাকায় রাজি হয় ধলু। ভিকটিমকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসক রোগীকে জরুরি সেবা দিয়ে অক্সিজেন লাগিয়ে দেন ও ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন। এরপর ভিকটিমকে ধলু সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে নিয়ে যান। বেড না থাকায় ভিকটিমকে ফ্লোরে বেড দেওয়া হয়। এরপর ভিকটিমের অভিভাবকের কাছে টাকা চাইলে তাদের কাছে ১৫০ টাকা থাকায় তাকে ১৫০ টাকা দেওয়া হয়। তখন সে আরও টাকা দাবি করলে বিকাশ চন্দ্র দাসের অভিভাবক বলে আমাদের কাছে আর কোনো টাকা নেই।
তিনি বলেন, তখন ধলু উত্তেজিত হয়ে ভিকটিম বিকাশের অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে গালিগালাজ করে। এরপরই শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভিকটিম মৃত্যুবরণ করে। তখন হাসপাতালে অন্যান্য রোগী ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন লোকজন জড়ো হয়। এ সময় হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্ট করেন। তখন সুযোগ বুঝে আসাদুল ইসলাম মীর ধলু পালিয়ে যায়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিকাশ চন্দ্র দাসের মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার দিবাগত রাতে বগুড়া সদর থানায় ধলুকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার ধলু জিজ্ঞাসাবাদে বিকাশ চন্দ্র দাসের চিকিৎসারত অবস্থায় অক্সিজেন মাস্ক বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি স্বীকার করে। ধলু বিগত ৬ বছর ধরে ওই হাসপাতলে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করছিল। প্রতিদিন সে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করার পর বিকেল থেকে হাসপাতালের জরুরি আউটডোরে রোগীদেরকে ট্রলিতে করে পৌঁছে দেওয়া বা অন্যান্য দালালিসহ বিভিন্ন কাজ করত। সে এই কাজের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করত। এ ঘটনার পর সেখান থেকে ধলু প্রথমে নওগাঁ ও পরে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরপরেই র্যাব রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: