Ad0111

শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে ফোন, চাঁদা না পেলেই হামলা-ডাকাতি করে এরা

কেউ চাঁদা না দিলে সেখানে হামলা, ভাঙচুরের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়িয়ে ডাকাতি করে

শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে ফোন, চাঁদা না পেলেই হামলা-ডাকাতি করে এরা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: কেউ পিয়ন, কেউ পরিচ্ছন্নতা কর্মী, কেউ আবার অটোরিকশা চালক। এ পরিচয়ের আড়ালে তারা রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী ও আদাবর এলাকার ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। বিদেশি নম্বর থেকে প্রথমে তারা শীর্ষ সন্ত্রাসী আর্মি আলমগীর, জিসান ও শাহাদাত হোসেনের পরিচয়ে চাঁদা দাবি করে। কেউ চাঁদা না দিলে সেখানে হামলা, ভাঙচুরের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়িয়ে ডাকাতি করে।

গত তিন/চার মাস আগে চক্রটি রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত ইডেন অটোস মোটরসাইকেল শো-রুমের মালিকের কাছে বিদেশি একটি নম্বর থেকে পলাতক এক শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় তারা শো-রুমটিতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় মাত্র চার/পাঁচ মিনিটের মধ্যে ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত করে।

ওই ঘটনায় জড়িত মূলহোতা জহিরুল ইসলাম ওরফে জহিরসহ ডাকাত চক্রের ছয় সদস্যকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও ধামরাই থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব গোয়েন্দা দল ও র‌্যাব-২ এর যৌথ দল।

গ্রেফতার অন্যরা হলেন- জসিম উদ্দিন (৩৪), জাহিদুল ইসলাম শিকদার (২৬), খায়রুল ভূঁইয়া (২০), রাকিব হাসান (২০) ও মো. নয়ন (২৮)। অভিযানে গ্রেফতারদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত চারটি চাপাতি, শো-রুম থেকে লুণ্ঠিত ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতাররা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

আজ রোববার  দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় মিরপুরের শ্যামলীবাগ এলাকায় অবস্থিত উত্তরা মটরসের ডিলার ইডেন অটোস নামের শো-রুমের ম্যানেজার ওয়াদুদ সজীব এবং মটর টেকনিশিয়ান নুরনবী হাসানকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং ক্যাশ ড্রয়ারে ভাংচুর করে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ডেস্কটপ মনিটর নিয়ে পালিয়ে যায় একটি ডাকাত দল।

ওই ঘটনায় শো-রুমের মালিক পক্ষ থেকে কে এম আবদুল খালেক শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। ওই ঘটনায় র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে করে মূলহোতা জহিরসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, তারা মোহাম্মদপুর কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য, যার সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। চক্রটি ঢাকার মোহাম্মদপুর, বসিলা, শ্যামলী এবং আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছিল। দাবি করা চাঁদা না দিলে তারা ভুক্তভোগীদের নানা হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসছিল। কেউ চাঁদা দিতে অসম্মত হলে তারা ভুক্তভোগীদের বাসাবাড়ি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ডাকাতি করে। গ্রেফতারদের নামে একাধিক চুরি, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এছাড়া তারা এলাকায় মাদক ও চোরাই অটোরিকশার ব্যবসা, চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত।

গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, বেশ কয়েক মাস ধরে একজন পলাতক কথিত সন্ত্রাসীর নামে ইডেন অটোস নামক প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবি করা হচ্ছিল। চাঁদা না পাওয়ায় তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে। ঢাকা উদ্যান এলাকায় গ্রেফতার জসিমের বাসায় জহির, জাহিদ, নয়ন, খায়রুল এবং রাকিব একত্রিত হয়ে শ্যামলী ইডেন অটোস শো-রুমে ডাকাতি করার বিস্তারিত পরিকল্পনা করে। তারা ১১ অক্টোবর ওই শো-রুম রেকি করে। গ্রেফতার জসিম এবং জহির ঢাকা উদ্যান কাঁচাবাজার থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত চারটি চাপাতি ক্রয় করে। পরের দিন অর্থাৎ, ১২ অক্টোবর ঢাকা উদ্যানে একত্রিত হয়ে শো-রুমের সামনে আসে এবং শো-রুমের লোকজন ও আশপাশের লোকজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। জাহিদ তার কাছে থাকা ব্যাগ থেকে তিনটি চাপাতি জহির, রাকিব এবং খায়রুলের হাতে দেয় এবং নিজে একটি চাপাতি নিয়ে নয়নসহ একযোগে শো-রুমে প্রবেশ করে। এসময় গ্রেফতার জসিম শো-রুমের বাইরে অবস্থান করে ওয়াচম্যান হিসেবে কাজ করে। জহির শো-রুমে প্রবেশ করেই চাপাতি দিয়ে ম্যানেজার সবুজকে আঘাত করে এবং রাকিব চাপাতি দিয়ে শো-রুমের মটর টেকনিশিয়ান হাসানকে আঘাত করে।

এসময় দলের অন্য সদস্যরা শো-রুমে ভাঙচুর করে। জাহিদ চাপাতি নিয়ে শো-রুমের ২য় তলায় গিয়ে কাঁচের দরজা ভেঙে ক্যাশিয়ারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ অর্থ ও ডেস্কটপ মনিটর নিয়ে চার/পাঁচ মিনিটের মধ্যে ডাকাতি সম্পন্ন করে বের হয়ে যায়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, শো-রুম থেকে বের হয়ে জহির এবং জাহিদ লেকসিটিতে জাহিদের বাসায় টাকা নিয়ে যায়। পরে নিজ নিজ ভাগের টাকা নিয়ে তারা আত্মগোপনে চলে যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার জহিরুল ইসলাম জহির চক্রের মূলহোতা। জহিরসহ অন্যরা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও নির্মাণাধীন বিল্ডিং থেকে টাকা দাবিসহ নানা অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত। জহির আগে অটোরিকশা চালালেও বর্তমানে চোরাই অটোরিকশার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার নামে একটি ডাকাতি মামলাসহ মোহাম্মদপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। 

গ্রেফতার জসিম এ চক্রের সমন্বয়কারী। মোটরসাইকেল শো-রুমে ডাকাতির আগে সবাইকে একত্রিত করা এবং ডাকাতি চলাকালে শো-রুমের বাইরে অবস্থান করে। ওয়াচম্যানের দায়িত্বে ছিল জসিম। সে ঢাকা উদ্যানে অবস্থিত একটি হাউজিংয়ে ১৮ বছর ধরে পিয়নের চাকরি করে। এর আড়ালে সে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত। তার বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ মোহাম্মদপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার রাকিব হাসান এ চক্রের সমন্বয়কারী জসিমের আত্মীয়। সে ডাকাতিকালে মোটরসাইকেল টেকনিশিয়ান হাসানকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। তার বিরুদ্ধেও মোহাম্মদপুর থানায় চুরি এবং ছিনতাইয়ের অভিযোগে মামলা রয়েছে। গ্রেফতার জাহিদুল শিকদার অস্থায়ী ভিত্তিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করে। নিয়মিত মাদকসেবী জাহিদুলই ডাকাতিকালে ক্যাশ থেকে নগদ অর্থ লুণ্ঠন করে। তার বিরুদ্ধেও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার খাইরুল ভূঁইয়া অটোরিকশা চালক। বিভিন্ন জায়গা থেকে অটোরিকশা চুরি করে সে এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করত। এছাড়া সে ডাকাতি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত বলে র‌্যাবকে জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ডাকাতি ও মাদকের মামলা রয়েছে। গ্রেফতার নয়নের নির্দিষ্ট পেশা নেই। সে মূলত দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িত।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, বিদেশি নম্বর থেকে ফোন করলেই কেউ শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে যায় না। দেশে থেকেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভিওআইপি কলে ফোন করা যায়। বিদেশি নম্বর থেকে ফোন করে তারা মূলত শীর্ষ সন্ত্রাসীর তকমার প্রমাণ হাজির করে। এরপর চাঁদা না পেলে হামলা করে। তারা ইডেন অটোস মোটর সাইকেল শো-রুমে অস্ত্রসহ হামলা চালিয়ে ডাকাতি করেছিল মূলত আতঙ্ক ছড়াতে। যাতে অন্যরা চাঁদা চাইলে ভীত হয়ে দিয়ে দেয়।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news