Ad0111

শিক্ষাব্যবস্থায় ফের স্থবিরতা, ধাপে ধাপে বাড়তে পারে ছুটি

সীমিত সিলেবাসে নেওয়া হয় এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা। অন্য সব পর্যায়ের ক্লাস-পরীক্ষায়ও গতি আসতে শুরু করে।

শিক্ষাব্যবস্থায় ফের স্থবিরতা, ধাপে ধাপে বাড়তে পারে ছুটি
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: করোনা সংকটে প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শ্রেণি ও বোর্ড পরীক্ষায় নেমে এসেছিল স্থবিরতা। ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা নির্ভর হয়ে পড়েছিল অনলাইন ক্লাসে। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট বয়সের শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনে সরকার। বিগত বছরের শেষে খুলতে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুরু হয় সশরীরে ক্লাস। সীমিত সিলেবাসে নেওয়া হয় এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা। অন্য সব পর্যায়ের ক্লাস-পরীক্ষায়ও গতি আসতে শুরু করে। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে ফের এলোমেলো হতে শুরু করেছে সবকিছু।

করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ও দৈনিক শনাক্ত-মৃত্যু ফের বাড়তে থাকায় আপাতত ৬ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে যখন আবার স্বাভাবিকতার দিকে যাচ্ছিল, ঠিক সে সময় ফের ধাক্কা খেয়ে ঘোর সংকটে শিক্ষাব্যবস্থা। বিকল্প হিসেবে টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইনে ধারণ করা ক্লাস সম্প্রচার করেও এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না বলেই মত বিশেজ্ঞদের। এজন্য ব্লেন্ডার এডুকেশন (প্রযুক্তিগত শিক্ষা) বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগের মতো এবারো ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নির্ধারণ করা হবে ছুটি। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত স্কুল-কলেজ খোলা সম্ভব হবে না। বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে আমরা অনলাইন ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হচ্ছে। ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট শুরু করতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। শিগগির ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত এর আওতায় আনা হবে। অ্যাসাইনমেন্ট তৈরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, অ্যাসাইনমেন্ট ও অনলাইন ক্লাসের জন্য আগের চেয়ে শিক্ষকদের অনেক বেশি বেল্ডেন্ডার এডুকেশনের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে। যত দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যায় সে চেষ্টা আমাদের আছে। যতক্ষণ তা না করা যায় ততক্ষণ অনলাইন কার্যক্রমের উপর নির্ভর করতে হবে।

জানা যায়, দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘরবন্দি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে সরকার সংসদ টিভি, রেডিও এবং অনলাইনে শিক্ষকদের পাঠদান সম্প্রচার করলেও দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এর আওতায় আসেনি। ঢাকা মহানগরের কিছু শিক্ষার্থী পেয়েছে এ সুবিধা।

ইন্টারনেট সমস্যা, ডিভাইস সংকট, অমনোযোগিতা, শিক্ষকদের মনিটরিংয়ের অভাবসহ নানা কারণে সরকার এ কার্যক্রমে খুব বেশি সফল হতে পারেনি। এ কারণে প্রাথমিক স্তরে নিয়মিত বাসার কাজ ও মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের প্রতি সপ্তাহে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়। এতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী যুক্ত হয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনার কারণে আইসিটিভিত্তিক শিক্ষা শুরু করেছে বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয়ভাবে আইসিটি শিক্ষাব্যবস্থা চালু নেই দেশে। বিচ্ছিন্নভাবে অনলাইনে যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে তা সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে না। ফলে আইসিটি শিক্ষায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

সমস্যা সমাধানে যেসব সুপারিশ করেছেন শিক্ষাবিদরা তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষকদের আইসিটি বিষয়ে অভিজ্ঞ করে তোলা। বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে বিভিন্ন ডিভাইস দিয়ে অনলাইন ক্লাসে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ধারাবাহিক পদ্ধতিতে নেওয়া যাচ্ছে না। যে পদ্ধতিতে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে সেটি ডিজিটাল পদ্ধতি না। স্কুল লেভেলে এসব ডাটা থাকছে না বলে শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেওয়ার চিন্তা আসে। শুধু রেডিও-টিভিতে ক্লাস করালে চলবে না। অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতি অনেক ভালো মেথড হলেও যে পদ্ধতিতে তা দেওয়া হচ্ছে সেটা সঠিক নয়।

ব্লেন্ডার এডুকেশন বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, পরিবার বা কমিউনিটি বেজ যে লার্নিং মেথডগুলো রয়েছে সেগুলো প্রয়োগ করতে হবে। কারিকুলামগুলো পরিবর্তন করে সঠিক অনলাইন বেজ করাটা জরুরি। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ও ডিভাইস নিশ্চিত করা গেলে এটা শুধু কোভিড পরিস্থিতিতে না, যে কোনো দুর্যোগকালীন প্রয়োগ করা সম্ভব।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news