লোডশেডিংয়ে নাকাল ব্যবসায়ী, কর্মজীবীরাও দুর্ভোগে
রাজধানীর নিউমার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ীরাও লোডশেডিংয়ের জন্য বিপাকে পড়েছেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: হঠাৎ করেই বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে৷ রাজধানীসহ সারাদেশেই প্রায় একই অবস্থা। এরই মধ্যে বাজেট স্বল্পতার কথা বলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, চলতি মাসে লোডশেডিং কমার সম্ভাবনা নেই। এই অবস্থায় অনিশ্চয়তায় ভূগছেন চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষরাও।
শফিক মিয়া, রাজধানীর জিগাতলার একজন মুদি ব্যবসায়ী। রাস্তার মোড়ে দোকান হওয়াতে দিনে ভালো বিক্রি হয়। তবে এ মাসের শুরুর দিক থেকে লোডশেডিংয়ের জন্য তার বিক্রির পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারণ সন্ধ্যার পর বেশির ভাগ ক্রেতা অফিস শেষ করে বাজার নিয়ে বাসায় ফেরেন। আর ঠিক সেই সময়টাতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। একরম অবস্থা এখন রাজধানীর বেশিরভাগ মার্কেটে।
সকল শ্রেণিপেশার মানুষ লোডশেডিংয়ের জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। দিনে ৪-৫ বার লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সবাই। প্রতিবার লোডশেডিংয়ে ১-২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়। এই সময়ে বেচা-বিক্রি বন্ধ থাকে ব্যবসায়ীদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই বেচাবিক্রি কম, তারপরে এই ঘন লোডশেডিং ব্যবসায়িক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে।
রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ঘুরে দেখা যায় সেখানে দিনে চার থেকে পাঁচ বার লোডশেডিং হয়। আজিমপুর বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা এখন আছি মহা সমস্যার মধ্যে। বিদ্যুৎ থাকে না, গ্যাস নেই, পানি নেই। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে রান্না করে খাবো সেই অবস্থা নেই। বিদ্যুৎ না থাকলে পানি আসেনা। আর পানির জন্য গোসল, রান্নাসহ গৃহস্থালি কাজ থেমে আছে। রাতে এখন ঠিক মত ঘুমাতে পারিনা। হঠাৎ করে রাত তিনটায় বিদ্যুৎ চলে যায়। বাচ্চারা লাফিয়ে উঠে। ঘুমাতে পারে না। প্রতিবারই এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং থাকছে। আমাদের জীবন এখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
হাজারীবাগের ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসায়ী শফিক মিয়া বলেন, দিনে ৫ থেকে ৬ বার লোডশেডিংয়ের জন্য হোটেলের খাবার নষ্টের পাশাপাশাশি কমে গেছে বেচা-কেনা। আমাদের এলাকায় দুপুর ১২ টায় বিদ্যুৎ চলে গিয়ে আসে টানা এক ঘণ্টা পর। এভাবেই দুপুর, দুপুরের পর, বিকেলে, সন্ধ্যায়, রাতে ও ভোরে একাধারে চলছে লোডশেডিং।
রাজধানীর নিউমার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ীরাও লোডশেডিংয়ের জন্য বিপাকে পড়েছেন। তারা বলছেন, দিনে ৪ থেকে ৫ বার লোডশেডিং হলে আমরা বিক্রি করি কিভাবে। আর আইপিএস দিয়ে কয় ঘণ্টা চালানো যায়। এমনিতেই করোনার কারণে গত কয়েকটি ঈদে ব্যবসা হয়নি। এখন যদি এভাবে লোডশেডিং বেড়ে যায়, তাহলে তো আমরা আরও ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবো। সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে হলেও এই সমস্যা সমাধান করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বইয়ের বাজার হলো নীলক্ষেত। লোডশেডিংয়ের জন্য তারাও বিপদে। কারণ, বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো মার্কেট অন্ধকার হয়ে যায়। যার ফলে ক্রেতারা আর মার্কেটে ঢুকতে চান না। এছাড়া অন্ধকারের জন্য ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় বই খুঁজে বের করতে সমস্যা হয়। নীলক্ষেতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাগজের দাম বাড়ায় বইয়ের দাম বেড়েছে। যার জন্য ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী বই কেনা কমিয়ে দিয়েছেন বা বিকল্প খুঁজছে। করোনার জন্য দুই বছর আমাদের ব্যবসাই হয়নি, এখন আবার লোডশেডিংয়েও আমাদের অনেক ক্ষতি করছে।
এদিকে ফটোকপির দোকানগুলোতে বিদ্যুৎহীন পুরো সময় কাজ বন্ধ থাকে। নীলক্ষেতের কম্পিউটার ও ইলেকট্রিকের দোকানগুলো বিদ্যুৎ না থাকলে এসব দোকান একেবারে অচল হয়ে যায়। বিদ্যুৎ ছাড়া বিক্রেতারা কোনো কাজ করতে পারছেন না। কম্পিউটার চালু করতে পারেন না। কোনো পণ্য চেক করে বিক্রি করতে পারেন না। ক্রেতারাও অপেক্ষা না করে মার্কেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে ব্যবসা করা যাচ্ছে না।
নীলক্ষেতের মাহি কম্পিউটার ও প্রিন্টিংয়ের স্বত্বাধিকারী জুয়েল মালিক বলেন, কারেন্ট না থাকলে আমাদের প্রিন্টারের কালির প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিন ৪-৫ বার করে কারেন্ট যায়। তখন মার্কেট পুরো গরম থাকে। ক্রেতারা অপেক্ষা না করে চলে যায়। যার জন্য এখন আমাদের প্রতিদিন লস দিতে হচ্ছে।
আগামী নভেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা কলেজের এবারের পরিক্ষার্থী মাহবুব হোসান বলেন, হঠাৎ এমন লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরাও। এখন বিপত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে গরম আর লোডশেডিং। যাকে বলে চরম লোডশেডিং। গরমের মধ্যে যখন তখন লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে পড়ার টেবিলে ঠিকমতো বসতে পারছি না। এতে করে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে অভিভাবক মহলেও। আমাদের এখানে সন্ধ্যার পর একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়। বার বার লোডশেডিং হওয়ার ফলে লেখাপড়াও ঠিকমতো হয় না। তাই এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।
আছিয়া খাতুন কামরাঙ্গীরচর এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সকালে কোনো দিন বিদ্যুৎ না থাকলে সেদিন খাওয়া, গোসল ছাড়াই অফিসে যেতে হয় তার। বিদ্যুৎ না থাকলে পানি থাকে না আর পানি না থাকলে তো রান্না বা গোসল কিছু হয় না। আবার দুপুরে এসে বাসায় বিদ্যুৎ না পেলে সেই না খেয়ে ও গোসল না করে অফিসের দিকে ফিরতে হয়। এছাড়াও অনেক কষ্ট করে কাজ করে মাসে বেতন পেয়ে সারা মাসের বাজার করেন তিনি। অল্প যা মাছ মাংস কিনেছিলাম এবার তা নষ্ট হয়ে গেছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews