রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের ব্যর্থতায় মহা-সংকটের সৃষ্টি করেছে: মির্জা ফখরুল
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের চরম ব্যর্থতা দেশের জন্য মহা-সংকটের সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পাঁচ পাঁচটি বছর পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশের অবৈধ, অনির্বাচিত গণবিচ্ছিন্ন সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত শুরু থেকেই এ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বহন করে চলেছে। ২২ আগস্ট প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী প্রতিবছর গড়ে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু যুক্ত হচ্ছে। সে হিসেবে গত ৪ বছরে রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে ১২ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে এবং এ সংখ্যা দিন-দিন বাড়তেই থাকবে। রোহিঙ্গা সমস্যা একদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং সামাজিকভাবে জীবন-জীবিকায় চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাদক ব্যবসা, নারী পাচার ও নানাবিধ অসামাজিক ও আইন বিরোধী কার্যকলাপে সৃষ্ট অশান্ত ও অস্থির পরিস্থিতি, মাদক চোরাচালান ও মাদক পাচারে রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়া, রোহিঙ্গাদের অন্তর্দ¦ন্দ্বে রোহিঙ্গা নেতা হত্যা- ইত্যাদি বিষয় চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে ভালো ভবিষ্যতের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে যেমন সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করছে। অপরদিকে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগণের আবাসন ও খাদ্যের যোগান দেয়া, স্যানিটারি ব্যবস্থাসহ পরিচ্ছন্নতা বিধান, স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদান, ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা রোহিঙ্গা সন্তানদের শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষা ব্যবস্থা, বিনোদন, জীবনাচার ইত্যাকার বিষয় অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নির্ভর এক মহাকর্মযজ্ঞ। বিশেষ করে কোভিড পরবর্তী সংকটকালে ইতোমধ্যে ১৭ কোটি মানুষের ভারে ভারক্রান্ত বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের এ অতিরিক্ত বোঝা বহন করা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এদিকে টঘঐজ এর মুখপাত্র রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির এর জন্য আরও আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। এদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য দরকার পুষ্টি, আশ্রয় সামগ্রী, পয়ঃনিস্কাশন ও জীবিকায়ন সুবিধা।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একা’র সংকট নয়। এটি একটি বৈশি^ক সংকট। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকট যে একটি বৈশি^ক সংকট, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সে বিষয়ে যথাযথভাবে উদ্ভুদ্ধ কিংবা পড়হারহপব করতে পারেনি। বিশে^র অন্যান্য মানবিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে সাড়া দেয় বা তৎপর হয়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তারা সেভাবে এগিয়ে আসেনি। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ সরকারের চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই না। যদিও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ওঈঔ) রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা চলবে বলে রায় দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র রাখাইনের হত্যাকা-কে জেনোসাইড আখ্যায়িত করেছে, এবং ওঈঈ রোহিঙ্গাপীড়নের হোতা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে, তথাপি রোহিঙ্গা সমস্যার মূল চ্যালেঞ্জ তথা নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটকে এখন আর গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না বিশ^। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ^ দরবারে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই সরকার ব্যার্থ হয়েছে বন্ধু রাষ্ট্রদের এবিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের জাতি হিসেবে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য রাখাইনে মুসলিম জনপদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গা যখন কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়, তখন মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির পরিবর্তে সেদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সফর করে এবং মিয়ানমার সরকারের সাথে এক ধরনের সহমর্মিতা প্রকাশ করে, এবং অন্যদিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক সাহায্য প্রদানের আশ^াস প্রদান করে। এদিকে চীন সরকার একদিকে বরাবরের মতো মিয়ানমারের সাথে তাদের বন্ধুত্বের ঘোষণা অব্যাহত রাখে, এবং অপরদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরাণি¦ত করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে অদ্যাবধি রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি সাধিত হয়নি। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন ত্রিপক্ষীয় পদক্ষেপ চলমান রয়েছে বলে বলা হয়। বাস্তবতা হলো গত ৫ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও সেদেশে ফেরত পাঠান সম্ভব হয়নি। এদিকে গত ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সুচিকে ক্ষমতাচ্যুত করা সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের হত্যা করা হয়েছে। সেদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েই চলছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটি বরং আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। এই পটভূমিকায় বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি এখন আগের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক মহল আরও কার্যকরী ও ফলপ্রসূ চাপ না দিলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠান সম্ভব নয়। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আরও জোরালো রাজনৈতিক তৎপরতার চালাতে হবে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের ওপর প্রচ- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। দুঃখজনক হলো বিশে^র বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার প্রতিবাদ করলেও আবার তাদের অনেকের সাথেই মিয়ানমারের বড় ধরনের ব্যবসায়ীক সম্পর্কও রয়েছে। এই দ্বৈত অবস্থান চিহ্নিত করে বাংলাদেশ সরকারের উচিত ভড়পঁংবফ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে তা বন্ধ করা। কিন্তু সংকীর্ণ রাজনৈতিক কারণে বর্তমান সরকার এসব বিষয়ে স্পষ্ট, কার্যকরী ও সুনির্দিষ্ট অবস্থান গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২০ সালে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় না করে সরকারের একক সিদ্ধান্তে বঙ্গোপসাগরের মুখে দ্বীপ ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর কিয়দংশ স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নাখোশ করেছিল। ঐ সময় জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংগি লি এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে, ''--এই স্থানান্তরে মিয়ানমার এমন বার্তা পেতে পারে যে বাংলাদেশেই রোহিঙ্গাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তাদের ফেরত না নিলেও চলবে''। সাংবাদিক সম্মেলন করে তখন বিএনপিও ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থানান্তরের বিরোধিতা করেছিল এ জন্য যে এতে মিয়ানমারের স্বার্থই রক্ষিত হবে, প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ কমবে এবং প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়ার কারণে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়বে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। মিয়ানমার সরকার সম্প্রতি ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে সেদেশে বাস্তুচ্যুত করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন্দি করে রেখেছে এবং নানা অজুহাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ারৎঃঁধষষু কোল্ড স্টোরেজে পাঠিয়ে দিয়েছে। ফলে ১২ লক্ষ রোহিঙ্গার বোঝা এখন জগদ্দল পাথরের মতো এ দেশের মানুষের ঘাড়ে চেপে আছে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার শুরু থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বিতর্কিত কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয় আসছে। শুরুতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ, মিয়ানমার বাহিনীর সাথে যৌথ সেনা মহড়ার প্রস্তাব এবং সবশেষে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর এসবই সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার প্রমাণ বহন করে। সে সময় প্রাথমিকভাবে হাসিনা সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দেয়। এমনকি মিয়ানমারের ভাষায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ তদন্তে সহযোগিতার ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে তুরস্কের ফার্স্ট লেডী এবং মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয় মন্ত্রীদের রোহিঙ্গা ক্যা¤প পরিদর্শন ও আভ্যন্তরীণ চাপে সরকার সে বাধা উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেনঃ ''এই ঘটনার সূত্রপাতটা আমরা যেটা দেখি– ওখানে কোনো একটা গোষ্ঠী আছে, তারা মিলিটারির উপর হামলা করেছে। মিয়ানমারের যে বর্ডার ফোর্স– তাদের উপর হামলা করে বেশ কয়েকজন সদস্যকে হত্যা করে। ২০১২ সালে একবার এই ঘটনা ঘটায়। তখনই সাধারণ নাগরিকের উপর অত্যাচার শুরু হয়। আবার ২০১৬ সালে এবং ২০১৭ সালে ঠিক একই ঘটনা ঘটানো হল। সেখানে অনেকগুলি বর্ডার ফোর্সের সদস্যদের, বর্ডার পুলিশকে হত্যা করেছে। আর্মির উপরে তারা আক্রমণ করেছে। যার ফলাফলটা হল যে, সাধারণ নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার, নির্যাতন শুরু হল...''।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, অপরদিকে ২০১৭ সালে আগস্টে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা আরম্ভ হলে শুরুতেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি চেয়ারপার্সন মানবতার নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ সরকারকে অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে উদাত্ত আহবান জানান। রোহিঙ্গাদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য তিনি নিজে কক্সবাজারে স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যা¤প পরিদর্শন করেন। এরপরে লাগাতারভাবে আমাদের দলের পক্ষ থেকে দেশে-বিদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, লেখালেখি, প্রকাশনা, প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া হয়। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান ইস্যুতে গোলটেবিল আয়োজন করে এবং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে জাতীয় ঐক্যের আহবান জানায়। কিন্ত এ সরকার তাদের স্বভাবসুলভ স্টাইলে সে ডাকে সাড়া দেয়নি। এ প্রসঙ্গে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান এবং ১৯৯২সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময় লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নিলে তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও স্টেটসম্যানসুলভ ধীশক্তি গুণে সে সময় মিয়ানমার সরকারকে প্রায় সকল রোহিঙ্গা শরনার্থীদের দেশে ফেরত নিতে বাধ্য করেছিলেন। সে সময় স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তিতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের আইনানুগ অধিবাসী (ষবমধষ ৎবংরফবহঃং) এবং মিয়ানমার সমাজের সদস্য (সবসনবৎ ড়ভ গুধহসধৎ ংড়পরবঃু) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ২০১৭ সনের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এই সমঝোতা চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে স্বীকার করেন যে উক্ত সমঝোতা চুক্তিবলে ১৯৭৮ সাল, ১৯৮১-৮২ সাল এমনকি ১৯৯১-৯১ সালে যে সকল রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছিল তাদের ফেরত নেয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো সে সময় সম্ভব হলে এখন কেন সম্ভব হচ্ছে না ?
আমরা বিশ্বাস করি, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে কেবলমাত্র স্বল্প সময়ের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছেন। তারা অতিশীঘ্র তাদের নিজ নিজ বাড়ি ঘরে নিরাপদে ফিরে যাবেন। আমরা চাই, প্রত্যাবাসন হোক স্বেচ্ছাপ্রণোদিত, নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই। রোহিঙ্গারা তাদের প্রিয় মাতৃভূমি মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ফিরে পাক। নিশ্চিত করা হোক বাড়ীঘর, কর্মস্থলে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা। বিশ্ব জনমত এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও তা'ই চায়।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকেই জনবিচ্ছিন্ন এই অনির্বাচিত সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। বারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি রাখাইনে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও সরকার রাখাইনে ফেরত পাঠাতে পারেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছাও তারা প্রমাণ করতে পারেনি। দীর্ঘদিনের এই সমস্যাকে কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে না পারা নিঃসন্দেহে সরকারের চরম ব্যর্থতা। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই উপায়ে মিয়ানমারের নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে চান। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার কক্সবাজার ক্যা¤প পরিদর্শনে গেলে তাঁকেও তারা একই দাবী জানায়। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের জন্য ‘নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন’ নিশ্চিত করতে হবে। আর এই প্রত্যাবর্তনকে শুধুমাত্র কাগুজে চুক্তিতে বন্দি না রেখে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তির কার্যকর প্রয়োগের পথে এগুতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা এবং বিশ্বশক্তিগুলোর স্ব স্ব ভূমিকা সুনিশ্চিত করতে হবে। কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা উপলদ্ধি করাতে হবে। কিন্তু তার আগে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায়, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিয়ে নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই। কোন ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের পাতানো খেলার অপকৌশল হিসেবে নয়। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশবাসীকে আমরা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন সে সময় উদ্ভুত রোহিঙ্গা সমস্যার সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সমাধান করা সম্ভব হয়েছিল তাদের রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্ব¡ এবং দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতাসীন থাকার কারণে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং আন্তর্জাতিকভাবে দুর্বল এবং স্বৈর সরকার হিসেবে পরিচিত একটি জনমেন্ডেটহীন সরকারের পক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যার মতো একটি জটিল ও আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র একটি জনবান্ধব গণতান্ত্রিক সরকারের দ্বারাই এটা সম্ভব। যা বাংলাদেশে এই মুহূর্তে অনুপস্থিত। তাই বাংলাদেশের জনগণ, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ও বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে আলাদাভাবে দেখলে চলবে না। একটি অগণতান্ত্রিক ও গণবিচ্ছিন্ন সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়নের ধারাবাহিক পরিণতিই হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও স্থবিরতার প্রধান কারণ। এই মুহূর্তে সর্বাগ্রে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকেই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারের পক্ষেই সম্ভব রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের স্বদেশ ভূমিতে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews