যৌন হয়রানির শিকার নার্সকেই উল্টো নোটিশ দিলেন তত্ত্বাবধায়ক
ঘটনাটি বগুড়ার ২০০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের। ওয়ার্ড বয় থেকে ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার বনে যাওয়া সহিদুল ইসলাম সুইট একই হাসপাতালের স্টাফ নার্স রোজিনা বেগমকে ডিউটি চলাকালীন অবস্থায় যৌন হয়রানিমূলক, আপত্তিকর কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, বগুড়া : যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে দীর্ঘ চার মাসের বেশি সময় অপেক্ষা করেও কর্তৃপক্ষের বিচার পাননি ভুক্তভোগী। ফলে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কৈফিয়ত তলবের নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টিকে উল্টো বিচার বলে অভিহিত করেছেন ভিকটিম। ঘটনাটি বগুড়ার ২০০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে। ওয়ার্ড বয় থেকে ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার বনে যাওয়া সহিদুল ইসলাম সুইট একই হাসপাতালের স্টাফ নার্স রোজিনা বেগমকে ডিউটি চলাকালীন অবস্থায় যৌন হয়রানিমূলক, আপত্তিকর কথা বলেন। ঘটনার দিন গত বছরের ৫ই ডিসেম্বর। ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে গত ২২শে মার্চ দৈনিক মানবজমিন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এছাড়াও মাল্টিমিডিয়া ইন্টারভিউ চ্যানেল ওই নার্সের একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে হাসপাতাল প্রশাসন। তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ টি এম নূরুজ্জামন রোজিনার কাছে কৈফিয়ত তলব করে নোটিশ প্রদান করেছেন।
ওই নোটিশে বলা হয়েছে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে কেন মিডিয়ায় কথা বলা হয়েছে। তার জবাব চেয়ে পাঁচ কর্মদিবস সময় দেয়া হয়েছে রোজিনাকে। এমন নোটিশ হাতে পেয়ে ভিকটিম রোজিনা বেগম অনেকটা হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। চারমাসের বেশি সময় আগে হয়রানির শিকার হয়ে সেই বিচার না করে কর্তৃপক্ষ উল্টো তার কাছেই কৈফিয়ত তলব করেছেন। বিষয়টিকে তিনি তার সঙ্গে বৈরী আচরণ বলে উল্লেখ করেছেন। রোজিনা বেগম জানান, সুইট আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। তার বিচার চেয়ে মৌখিক এবং লিখিতভাবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং নার্সিং মিডওয়াইফারির মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ দিলেও চার মাসে কোনো বিচার করেননি কেউ। বরং সুইটের সঙ্গে হাসপাতালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দহরম মহরম সম্পর্ক। ওই কর্মকর্তাই মূলত বিচার এবং তদন্তকে দমিয়ে রেখেছেন। সেই ঘটনায় লোক দেখানো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ১৮/১২/২০২২ তারিখে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন চাওয়া হলেও আজ পর্যন্ত সেই তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
এখন উল্টো ওই নার্স সব সময় সুইটের হুমকির মধ্যেই ডিউটি পালন করছেন বলে জানান। রোজিনা আরও জানান, সাহিদুল ইসলাম সুইট আমাকে স্পষ্ট করে বলেছে হাসপাতালের পুরো প্রশাসন আমার (সুইট) পক্ষে আছে। বিচার কোনোদিন হবে না। এমন কথাবর্তা শোনার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। আমি আমার কর্তৃপক্ষ থেকে বিচারের কোনো আশ্বাস না পেয়ে মিডিয়াকর্মীদের দ্বারস্থ হই। যা অনেকটা বাধ্য হয়েই। যেহেতু কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এখন পর্যন্ত করতে পারেননি। ফলে আমি আমার বিষয়টি নিয়ে তৃতীয় পক্ষের সাহায্যপ্রার্থী হতেই পারি। এটি আমার অধিকার বলে আমি মনে করি। আর আমার ব্যক্তিগত সমস্যার কথা মিডিয়ায় বলতে গেলে কারো অনুমতি নেয়ার আইনগত কোনো বিধি নিষেধ আছে বলে আমার জানা নেই। বাক স্বাধীনতা দেশের প্রতিটি নাগরিকের আছে। আমারও আছে। আমি আমার নিরাপত্তার জন্য মিডিয়ার সাহায্য চেয়ে কোন ভুল করিনি। তাছাড়া আমি হাসপতালের বিরুদ্ধে কোন কথা বলিনি। বলেছি কিছু ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে। যা বলেছি সত্য বলেছি। এখানে কোন মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) ডা. এ টি এম নূরুজ্জামান জানান, বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ। তদন্ত চলাকালে মিডিয়ায় কথা বললে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। দীর্ঘ চার মাসেও তদন্ত শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, তদন্তকারীরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন, স্বাক্ষীদের ঠিকমত পাওয়া যায় না। কারো ডিউটি সকালে থাকে আবার কারো বিকালে। সবাইকে এক সঙ্গে পাওয়া যায় না। আমি তদন্তকারীদের আবারও তাগিদ দিয়েছি। দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য। দীর্ঘদিনেও প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারা দায়িত্ব অবহেলার মধ্যে পড়ে কি-না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। ব্যক্তিগত বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বলতে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন কেন জানতে চাইলে তিনি এই প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারেননি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: