মরিচের কেজি ৩০ টাকা, হতাশ চাষিরা

কাঁচা মরিচের মণ বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকা। অথচ কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়েছে ৪০ টাকার বেশি। এত কম দামে মরিচ বেচে লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের।’ 

মরিচের কেজি ৩০ টাকা, হতাশ চাষিরা
কাঁচা মরিচের দাম না পেয়ে হতাশ কৃষকরা

প্রথম নিউজ, জামালপুর: ‘এবার মরিচের ফলন ভালো হওয়ায় অনেক খুশি হয়েছিলাম। আশা ছিল, খরচ তুলে লাভ হবে। কিন্তু বাজারে গিয়ে হতাশ হয়েছি। আশানুরূপ দাম পাচ্ছি না। কাঁচা মরিচের মণ বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকা। অথচ কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়েছে ৪০ টাকার বেশি। এত কম দামে মরিচ বেচে লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের।’ 

কাঁচা মরিচের দাম না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করে কথাগুলো বললেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া গ্রামের কৃষক রমজান আলী। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকালে তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিনিধির। স্থানীয় সূত্র জানায়, জামালপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চলে এ বছর মরিচের ভালো ফলন হয়েছে। তবে আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না কৃষকরা। উৎপাদন খরচ, ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে যে টাকা খরচ হয়, সে টাকাও উঠছে না তাদের। ফলে ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা।

চাষিরা বলছেন, যাতায়াত খরচ, জমি চাষাবাদ, সেচ, বীজ, সার-কীটনাশক ও শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার মরিচ চাষে খরচ বেশি হয়েছে। সার সংকটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের। এত কিছুর পরও ফলন ভালো হয়েছে। তবে মরিচের দাম পাচ্ছেন না তারা।

সরেজমিনে জেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরাঞ্চলগুলোর মধ্যে নাওভাঙ্গার চর, বেনুয়ার চর, চর আদ্রা, জামিরা, হাজিপুর, ছাতারিয়া, মানিকপটল, আদারভিটা, কুলকান্দি, হাজিপুর, হাজরাবাড়ি, শিধুলি, রৌহা, বাটিকামারি, শ্যামপুর, হরিপুর, মল্লিকপুর, চান্দেরহাওড়া, টুপকার চর, কাপাসটিয়াসহ দুই শতাধিক গ্রামে মরিচের ভালো ফলন হয়েছে। এখন ক্ষেত থেকে মরিচ তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

কৃষকরা মরিচের দাম কম পাচ্ছেন বলে স্বীকার করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জাকিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ‘জেলার ৯ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করেছেন প্রায় ২২ হাজার চাষি। লক্ষ্যমাত্রা ছিল আট হাজার ৫০ হেক্টর জমি। প্রতি বিঘায় ৪০ মণ ফলন ধরে প্রায় ১৮ হাজার ৫১৫ মেট্রিক টন মরিচ পাবেন চাষিরা।’

অনুকূল আবহাওয়া থাকায় মরিচের ভালো ফলন হয়েছে জানিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘যমুনা নদীবর্তী এলাকায় গতবারের বন্যায় পলি জমে মরিচের বাম্পার ফলনে সাহায্য করেছে। তবে বাজারে মরিচের দাম কম পাচ্ছেন চাষিরা। দাম বাড়লে তাদের আশানুরূপ লাভ হতো।’

সরেজমিনে আরামনগর, আদ্রা, বাউশি, হাজরাবাড়ি, হাজিপুর, শ্যামপুর, কালিবাড়ি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি মণ মরিচ ১০০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি কেজি মরিচের দাম পড়ছে ২৫-৩০ টাকা। এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে জানিয়ে মেলান্দহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, ‘উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের পাঁচটি চরের প্রায় ১২০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করেছেন চাষিরা। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০০০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাম্পার ফলন হয়েছে।’

মেলান্দহের হাজরাবাড়ি এলাকার কৃষক বারেক মন্ডল বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে হাইব্রিড মরিচ চাষ করেছি। ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ৫০ মণ কাঁচা মরিচ পেয়েছি। প্রতি মণ এক হাজার করে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এবার সাত বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন সরিষাবাড়ীর সাতপোয়া গ্রামের কৃষক রমজান আলী। তিনি বলেন, ‘মরিচ চাষে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত এক লাখ ৪০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। ক্ষেতে এখনও কিছু মরিচ আছে। তবে লাভ হবে না। দাম কম পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে।’

মরিচের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘এখান থেকে মরিচ কিনে রাজধানীর কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন জেলা শহরে পাঠাই। বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কম। প্রায় সব জেলায় কমবেশি মরিচ হয়েছে। এছাড়া ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সব হিসাব করে মরিচ কিনতে হয়।’ 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom