‘বাংলাদেশ দল আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি নয়’

‘বাংলাদেশ দল আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি নয়’

প্রথম নিউজ, খেলা ডেস্ক: কলম্বোতে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচ। জিতলেই হবে প্রথম শ্রীলঙ্কায় সিরিজ জয়ের ইতিহাস। ঠিক এমন ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লিটন দাস আসবেন এমনটাই ধারণা সবার। তবে না, সেখানে এলেন জাতীয় দলের সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তাহলে কি তিনি এখন থেকেই বিদায় বলে দিবেন! এমন একটা গুঞ্জন চলছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের পরই তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চাকরিচ্যুত করতে পারে। তাহলে কি তার আগে নিজেই বিদায় বলবেন! সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিস্তর অভিযোগ এমন সংবাদ প্রকাশ হয়েছে, যা কিনা জানিয়েছেন বিসিবি’র পরিচালকরাই। এমন পরিস্থিতিতে দলের দেশি কোচ কী করতে পারেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। তবে তিনি সংবাদ সম্মেলনে এসে জানালেন কড়া প্রতিবাদ। চাইলেন তার বিপক্ষে আনা অভিযোগের প্রমাণও। সেইসঙ্গে জানিয়ে দিলেন, বিসিবিতে কোচের চাকরি না থাকলে তার তেমন কিছুই আসে যায় না।

দেশের সেরা এই কোচের বিকল্পের অভাব নেই। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট তার বাপ-দাদার সম্পত্তিও নয়। তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমি কোচ। আমাকে যদি আপনি কালকে বলেন যে, সালাউদ্দিন তুমি অনূর্ধ্ব-১৩ তে গিয়ে কোচিং করাও, আমি কিছু মনে করবো না। আমার এখানে ট্যাগ লেখা নেই যে, আমি কোচ শুধু জাতীয় দলেরই।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন তার বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছেন। তিনি যেকোনো পদেই কাজ করতে প্রস্তুত, যদি তা দলের জন্য ভালো হয়। সম্প্রতি দলের পারফরম্যান্স নিয়ে নানা মহলে ওঠা প্রশ্নের মুখে তিনি নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তার কোনো ইগো সমস্যা নেই এবং দলের ভালোর জন্য যেকোনো পরিবর্তনকে তিনি স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘যদি ভালো কেউ আসে, এটা যদি দলের জন্য ভালো হয়।

দেখুন এই বাংলাদেশ দল আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি না, ঠিক আছে? এটা হচ্ছে যে, পারফর্ম যদি ভালো না করি, এখানে সমালোচনা হবেই। এটা, এটা আমাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতেই হবে। ভালো করলে সবাই বাহবা দেবে। আমি কি দলের জন্য আমার শতভাগ দিচ্ছি কিনা, আমি কি আমার জায়গায় সৎ কিনা, সেটা আমার কাছে মুখ্য বিষয়।’ কোচের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় সালাউদ্দিন অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা যেমন বলেন যে, টিমে অনেক অভিযোগ! কিন্তু অভিযোগগুলো আপনারা যদি লিখে দিতেন, ভালো হতো। প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করাটা ঠিক নয়। আপনি প্রমাণ দিলে সেটা ওই কোচের জন্যও ভালো হতো যে, না আমি যদি ভুল করে থাকি, আমি ওই জায়গাটা শুধরাবো।’ সালাউদ্দিন নিজের সততা ও প্রতিশ্রুতির ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমি কী। আমি আমার জায়গায় শতভাগ সৎ কিনা? আমি হয়তো ভালো কোচ নাও হতে পারি, ঠিক আছে? আমি যদি ভালো না হই, তাহলে আমাকে বোর্ড সরিয়ে দেবে, কোনো সমস্যা নেই।’ 

তিনি মনে করেন, কারও সম্পর্কে না জেনে লেখালেখি করা উচিত নয়, কারণ এতে একজন দুর্বল মানসিকতার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে দল বলেই বিশ্বাস করেন সালাউদ্দিন। নিজের নিয়োগ প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন স্পষ্ট করে দেন যে, তিনি নিজ থেকে এই পদে আসেননি। তিনি দলের ভালোর জন্য কাজ করতে এসেছেন এবং কোনো ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের জন্য নয়। তিনি বলেন, ‘আমার এমন না যে আমার এখানে চাকরি করতেই হবে। আমার অনেক কিছু করার আছে। আর এখানে আমি নিজের ইচ্ছায়ও আসিনি যে, আমি চেয়েছি আমাকে চাকরি দেন, আমি এখানেই চাকরি করবো এমন তো কিছু না।’

অন্যদিকে দল যখন খারাপ খেলছে, তখন পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ কেন উঠবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘টিম তো নিয়মিত হারছে। এর মধ্যে ফেভারিটিজম করে আমি কী লাভটা পাবো, আপনি আমাকে বলেন। আমরা তো এমন দল না যে প্রতিদিন জিতছি, ঠিক আছে একটারে খেলায় দিলাম, তা তো না। আমরা তো নিজেরাই ভালো খেলছি না। এখন তো আমি দলের একজন সদস্য হিসেবে চাইবো দলটা যেন ভালো করে।’ সবশেষে, তিনি গণমাধ্যমকে অনুরোধ করেন যে, তারা যেন কাউকে নিয়ে লেখার আগে বিষয়টি ভালোভাবে বোঝেন এবং সত্যতা যাচাই করেন।