বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকার দায়ী: মির্জা ফখরুল

গত মঙ্গলবার বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকার দায়ী: মির্জা ফখরুল
বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকার দায়ী: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কী দুর্ভাগ্য এই দেশের। এত উন্নয়ন, চতুর্দিকে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অগ্নিনির্বাপণের জন্য যে আধুনিক ব্যবস্থা দরকার, সেই ব্যবস্থাগুলো এখানে নেই। ফায়ার ব্রিগেডের সেই সরঞ্জামই নেই। সরকারের গুরুত্ব হচ্ছে- কোথায় কমিশন বেশি পাবে, কোনখানে টাকার উপার্জন বেশি হবে সেই জায়গায়। বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের জন্য সম্পূর্ণভাবে সরকার দায়ী। গতকাল দুপুরে গুলশানে বিএনপি’র চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। গত মঙ্গলবার বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

 মির্জা ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় নিবর্তনমূলক আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, সাংবাদিক এবং নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ অন্যান্য সাংবাদিক এবং নাগরিকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

অবিলম্বে এই নিবর্তনমূলক কালো আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার দাবি জানায় স্থায়ী কমিটি। সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে এখনো অনেকে গুরুত্বসহকারে নিচ্ছেন না। তরুণ সাংবাদিকদের এটা আরও বেশি করে নেয়া উচিত। আপনাদের সহকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে, সিকিউরিটি অ্যাক্টে হেয় করা হচ্ছে, বাট নো বডি রেসপন্ডিং। কোথায় যাবে এ জাতি, বলেন। যে জাতি নিজে উঠে দাঁড়াতে পারে না, সে জাতিকে কে দাঁড় করাবে। আপনাদের বলছি, আপনারা কেউই বাঁচবেন না। তিনি বলেন, নওগাঁয় র‍্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে কর্মসূচি দেয়া, বেআইনিভাবে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি বিরোধী দলের কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের হামলা এবং পুলিশের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানায়।  

ডয়চে ভেলের ডকুমেন্টারি নিয়ে বিএনপি’র মহাসচিব বলেন,  বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে জার্মানির প্রধান বেতার সার্ভিস ডয়চে ভেলে সামপ্রতিক একটি প্রতিবেদন করেছে। র‍্যাবের ওপর একটি ডকুমেন্টারি (তথ্যচিত্র) বেরিয়েছে। এটা খুব সেনসিটিভ হওয়ার কারণে আমাদের বেশির ভাগ পত্রিকা নিউজ করেনি। সেনসিটিভ (সংবেদনশীল) হলেও এটা তো বাস্তবতা। এটাকে এখন পর্যন্ত অস্বীকার করা হয়নি। আমরা জানি, এ ধরনের ডকুমেন্টারি যখন কোনো মিডিয়াতে আসে, তারা কিন্তু সমস্ত দায়িত্ব নিয়েই কাজটা করে। এই ডকুমেন্টারি প্রমাণ করেছে, অনির্বাচিত সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই এ কাজগুলো করছে।  তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন (ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন) যে কী ভয়ঙ্কর। যদি এমন হয় সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে, সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি নির্দেশ দিয়ে এ সমস্ত কাজ করা হয়, তাহলে এ ধরনের সংস্থাগুলো কী ভয়ঙ্করভাবে জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে। যে কারণে র‍্যাবের ওপর যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যদিও এটা আমাদের জন্য লজ্জার।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সভা অবিলম্বে সংবিধানবিরোধী, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জোর দাবি জানিয়েছে। সভায় র‍্যাব কর্তৃক বেআইনিভাবে গুম, হত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায় এবং এসব সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী সরকারের পদত্যাগ দাবি করে। নরসিংদীর পুলিশ যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নরসিংদী জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ে গত বুধবার এবং তার আগে একাধিকবার দুষ্কৃতকারীদের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নরসিংদী বিএনপি’র কার্যালয়ে জেলা কমিটির মিটিং ছিল। কার্যালয়টি জেলা বিএনপি’র আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকা বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের (খায়রুল কবির) বাসার সঙ্গে লাগানো। সদস্যরা গিয়ে দেখতে পান কার্যালয়ের দরজায় তালা লাগানো, চারদিকে পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে। সদস্যরা ব্যারিকেড ডিঙিয়ে তালা ভেঙে অফিসে যান, সভা শুরু হয়। কিন্তু সভার শেষের দিকে মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ শুরু হয় এবং দেখা যায়, কিছু দুষ্কৃতকারী পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় সেখানে আক্রমণ করে। জানালা, দরজা ভেঙে যায়, ককটেল মিটিংয়ের মধ্যেও পড়ে।

স্বাভাবিকভাবেই সভা পণ্ড হয়ে যায়। মির্জা ফখরুল বলেন, একটা রাজনৈতিক দল জেলা কার্যালয়ে সভা করবে, এটা তার সংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় তারা (দুষ্কৃতকারী) কী করে ভেতরে ঢুকলো, ককটেল চার্জ করলো এবং সভা পণ্ড করলো। এর আগে ২৬শে ফেব্রুয়ারি দলীয় কার্যালয়ে এই দুর্বৃত্তরাই আক্রমণ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সেটাও পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায়। এসব ঘটনার সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা জড়িত বলে গণমাধ্যমে এসেছে বলে জানালে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এখানে অনেক রকম কথা বলবে তারা। প্রশ্ন হচ্ছে, সে যেই হোক, একজন দুষ্কৃতকারী যখন এ ধরনের কাজ করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াটা হচ্ছে সরকারের দায়িত্ব, পুলিশের দায়িত্ব। আমরা লক্ষ্য করেছি, ইদানীং নরসিংদীর পুলিশ প্রশাসন তারা প্রত্যক্ষভাবে বিএনপি’র বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এবং বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের তারা বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। তিনি বলেন, খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা সম্পূর্ণ সংবিধানবিরোধী, আইনবিরোধী। আমরা বাধ্য হবো এসব ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

আন্দোলনের মাধ্যমে এগুলোর রাজনৈতিক জবাব দেয়া হবে। সময় আসছে এ সমস্ত ব্যক্তি, যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের কখনো ক্ষমা করা হবে না, জনগণ ক্ষমা করবে না। এরপর গত ১১ই মার্চ স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধার জানাজায় যাওয়ার পথে খায়রুল কবিরকে লক্ষ্য করে দুষ্কৃতকারীদের গুলি এবং ২রা এপ্রিল ইবনে আদেল শশী নামে একজনকে নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির অফিস থেকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে রেললাইনের পাশে চাপাতি দিয়ে জবাই করার উদ্যোগ নেয়ার ঘটনা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল বলেন, শশীকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে গিয়ে রেললাইনের পাশে নিয়ে চাপাতি দিয়ে জবাই করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এবং সেটার ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অবিশ্বাস্য, ১০-১২ জন অল্প বয়সের ছেলেপেলে গরু যেভাবে জবাই করে, ঠিক সেভাবে ফেলে দিয়ে জবাই করার জন্য ভিডিও ধারণ করে। এ কোন দেশে বাস করছি আমরা। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ।