ফরিদপুরে বিদায় অনুষ্ঠানে র্যাগ ডের নামে শিক্ষার্থীদের অশ্লীলতা
পরীক্ষার্থীরা কলেজ মাঠে নেমে কলেজের মনোগ্রামযুক্ত সাদাকালো রংয়ের টিশার্ট পরে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে। একপর্যায়ে রং মেখে একজন আরেকজনের টিশার্টে লিখে দিতে থাকে অশ্লীল সব ভাষা।
প্রথম নিউজ, ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিদায় অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিল শেষে র্যাগ ডের নামে অশ্লীলতায় মেতে উঠার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে কলেজের হল রুমে বিদায় অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই ওই অনুষ্ঠানের কিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠান শেষে পরীক্ষার্থীরা কলেজ মাঠে নেমে কলেজের মনোগ্রামযুক্ত সাদাকালো রংয়ের টিশার্ট পরে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে। একপর্যায়ে রং মেখে একজন আরেকজনের টিশার্টে লিখে দিতে থাকে অশ্লীল সব ভাষা। এভাবেই উদযাপিত হয় কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শেষ দিন । পরে এসব ছবি আবার শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ফেসবুকে পোস্ট করে। যে কারণে অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বার্তা দিয়ে মোড়ানো পোশাকসহ ছাত্র-ছাত্রীদের ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
সালথা-ময়েনদিয়া আঞ্চলিক সড়কে সালথা উপজেলা কমপ্লেক্সের আনুমানিক ২০০ মিটার দূরত্বে ২০০৪ সালে এক একর ৩৬ শতাংশ জমির ওপর এ কলেজটি স্থাপিত হয়। এ কলেজে শুধু উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সুযোগ রয়েছে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে মোট শিক্ষার্থী আছে এক হাজার ৪ জন। এর মধ্যে ৩৬৪ জন চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। কলেজে শিক্ষক ও কর্মচারী মিলে আছেন ২৫ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সালথা সরকারি কলেজের কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলে, দীর্ঘ আড়াই বছর আমরা সালথা সরকারি কলেজে লেখাপড়া করেছি। তাই এই কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে তাদের। সুখে-দুঃখে সবাই একসঙ্গে মিলে মিশে থেকেছি। বিদায় নেওয়ার সময় সবাইকে একসঙ্গে পেয়েছি। এই স্মৃতি যাতে সারাজীবন ধরে রাখতে পারি সেই জন্যই র্যাগ ডেতে সাদা টিশার্টে যে যার মতো লিখে দিয়ে স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করেছি মাত্র। এটা ছিল আমাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এর পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থী কুরুচিপূর্ণ লেখা কিংবা লেখানো থেকে বিরতও ছিল।
তাদের ভাষ্য, আমরা সবাইতো আর খারাপ ভাষা লিখিনি। যারা লিখেছে এবং ফেসবুকে পোস্ট করেছে তাদের জন্য আমাদের সবার আনন্দটাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। সালথা সরকারি কলেজের মনোগ্রামযুক্ত টিশার্টের ওপর অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ বার্তা লেখা যেমন কলেজের অসম্মান, পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠে। তাহলে গত আড়াই বছর এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ করে আমরা কী পেলাম।
তবে অনেক শিক্ষার্থী সালথা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, এতদিন এই কলেজে লেখাপড়া করেছি। বিদায়ের দিন কলেজ থেকে আমাদের একটা ফুল দিয়েও বিদায় দেওয়া হয়নি।
সালথা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্ণচন্দ্র বর্মন জানান, আজ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক থেকে তিনি বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, এটি দেশের সার্বিক অবক্ষয়ের একটি অংশ মাত্র, বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এ ঘটনায় সমাজের খারাপের দিকটিই ফুটে উঠেছে, খারাপেরই প্রতিনিধিত্ব করে। অধ্যক্ষ বলেন, ওই শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে তাদের অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনা করব। যাতে আগামীতে কলেজে এ জাতীয় কোনো ঘটনা না ঘটে।
সালথা সরকারি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন শাহিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। কোনো শিক্ষক বা কলেজ সংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত থাকলে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে, এ অবক্ষয় রোধে স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে অভিভাবক সমাবেশ করা হবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews