পুলিশের ভূমিকায় নানা প্রশ্ন

বলা হচ্ছে আগের রাতে ঘটনা ঘটলেও পরের দিন সকালে ওই এলাকায় পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেনি কেন?

পুলিশের ভূমিকায় নানা প্রশ্ন
পুলিশের ভূমিকায় নানা প্রশ্ন

আগের রাতের সংঘর্ষের জেরে গতকাল সকাল ১০টার পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করেন। ওই মানববন্ধনে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। হামলার সূত্র ধরে গতকাল ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটেনা ঘটছে। এতে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সকাল ১০টায় সংঘর্ষ শুরু হয়ে থেমে থেমে চলে রাত পর্যন্ত। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বন্ধ হয়ে যায় আশেপাশের সড়কে যান চলাচল। এতে পুরো রাজধানীতেই দেখা দেয় অচলাবস্থা। সংঘর্ষ শুরুর তিন ঘণ্টা পর পুলিশ এসে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবু সংঘর্ষ থামেনি। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। অ্যাম্বুলেন্সও ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সংঘর্ষের কারণে শুধু ওই এলাকা নয় আশেপাশের এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষও জিম্মি হয়ে পড়েন। কেউ রোগী নিয়েও হাসপাতালে যাওয়ার সাহস পায়নি। অনেকেই ব্যক্তিগত কাজে বিকল্প পথে গিয়েও যানজটের মুখোমুখি হয়েছেন। ফিরে গেছেন বাসায়। অথচ সংঘর্ষের ৩ ঘণ্টা পর পুলিশ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের এসে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করেছে। প্রশ্ন উঠেছে এতো দেরিতে এলো কেন পুলিশ। বলা হচ্ছে আগের রাতে ঘটনা ঘটলেও পরের দিন সকালে ওই এলাকায় পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেনি কেন?

গতকাল দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, নিউ মার্কেটের সামনের ওভার ব্রিজের নিচে দুই প্লাটুন পুলিশ অবস্থান নিয়ে আছে। পুলিশের হাতে ছিল ইট-পাটকেল ঠেকানোর প্লাস্টিকের ঢাল ও কারও কারও হাতে ছিল লাঠি। পাশে দাঁড়িয়ে ছিল জলকামান ও রায়ট কার। পুলিশের পাশে থেকেই ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালাতে দেখা যায়। আবার মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের দিকে টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ।  টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় ও গ্যাসে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তখন ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা নিজেদের অবস্থানেই ছিলেন। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশকে কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনরত পুলিশের রমনা জোনের এডিসি হারুনূর রশীদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।

ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন জানান, রাত থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ। তারা ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। কলেজের ভেতরে টিয়ারশেল ছুড়েছে। দফায় দফায় আমাদের ওপর ব্যবসায়ীরা হামলা করেছে। কিন্তু পুলিশ তাদের কিছু বলেনি।  ঢাকা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের রাজু নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, পুলিশের পাশে থেকেই আমাদের ওপর হামলা করেছে ব্যবসায়ীরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করেনি পুলিশ। শুধু আমাদের ছত্রভঙ্গ করেছে। সোমবার রাত থেকেই রহস্যজনকভাবে পুলিশ ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়েছে। আমরা সরকারের কাছে এর বিচার চাই।

সাহেদ নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, এই ঘটনার দায় ব্যবসায়ীদের। আমরা মার্কেটে কোনো জিনিস কিনতে গেলে নানারকম টিপ্পুনি কেটে থাকেন। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার। পুলিশ মধ্যস্থতা না করে বা সংঘর্ষ না থামিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়েছে কি-না প্রশ্ন করা হলে পুলিশের রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগের  কোনো ডকুমেন্টস আছে? কারও পক্ষ নেয়ার প্রশ্নই আসে না। ব্যক্তির সম্পদ মানেই রাষ্ট্রের সম্পদ। রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি দাবি করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ সব ধরনের চেষ্টা করছে।