পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও সাহসী হওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও সাহসী হওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও স্বচ্ছ এবং সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র বিশ্বাসী জনগণ আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) পাশে থাকবে। গণতন্ত্র বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের পাশে থাকবে যদি আপনাদের ভূমিকা আরও স্বচ্ছ এবং সাহসী হয়। গতকাল ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্যোগে ‘গণ-অভ্যুত্থান-২০২৪: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান ও শহীদদের স্মরণে’ এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সংঘটিত কিছু নৃশংস এবং অনাহুত ঘটনা জনমনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সক্ষমতাকে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় কেউ কেউ দেশে উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কিনা, সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষের কথা শুনলে বোঝা যায়, এই বিষয়টিও জনমনে জিজ্ঞাসা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কিনা, কোনো কোনো মহল থেকে এমন ধরনের প্রশ্ন উপস্থাপন, বিচ্ছিন্ন বক্তব্য হিসেবে বোধহয় আজ দেখার কোনো সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রতিশ্রুতির সময় জাতীয় নির্বাচন কেউ সময়ক্ষেপণ চাইছে কিনা, এ ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আমি গণতান্ত্রকামী জনগণ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো এবং আন্দোলনরত দলগুলোসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন আসন্ন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় জীবনে আসন্ন নির্বাচনে ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং আপনাদের, আমাদের এবং আমাদের সকলের কোনো আবেগতাড়িত কিংবা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ভবিষ্যতে আর যাতে কোনো চরমপন্থা কিংবা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায়, সে ব্যাপারে সমগ্র দেশবাসীকে সতর্ক এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। 

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দিতে হলে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, প্রয়োগ এবং চর্চার কোনোই বিকল্প নেই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, রাষ্ট্রের অপব্যবহার বা প্রশাসনিক কূটকৌশলের পরিবর্তে কারও রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের প্রধান মাধ্যম হওয়ার দরকার জনগণের রায়, আস্থা এবং বিশ্বাস। দেশে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে আমাদের কোনো আয়োজনই শেষ পর্যন্ত কিন্তু কোনো কাজে আসবে না, টেকসই হবে না। 

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ, শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একটি ইনসাফ এবং ন্যায়ভিত্তিক ও তাঁবেদার মুক্ত গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে আজ আমরা শহীদদের প্রতি সত্যিকারভাবে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানাতে পারি। হাজারো শহীদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার পূর্ব শর্ত হচ্ছে, জনগণের বাংলাদেশে তাদের সরাসরি ভোটে, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক নিরাপদ নির্বাচনী ব্যবস্থা থাকা জরুরি, যেখানে প্রতিটি ভোটার নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আজকের তারণ্যেই আগামীর বাংলাদেশ। ছাত্র এবং তরুণরা অবশ্যই রাজনীতি করবে। রাজনৈতিকভাবে সচেতন থাকবে, ছাত্র ও তরুণদের সাহসী অংশগ্রহণ ছাড়া বিশ্বে কোনো দেশেই স্বৈরাচার কিংবা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব বা গণ-অভ্যুত্থান সফল করার উদাহরণ খুবই বিরল। তবে রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য আপনাদের সবার আগে জ্ঞান-বিজ্ঞানে, মেধা-মননে প্রজ্ঞা-অভিজ্ঞতায় আরও সমৃদ্ধ হতে হবে। এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে শুধুমাত্র স্লোগান নির্ভর কিংবা প্রচলিত প্রথাগত রাজনীতি, সংস্কৃতি, ২০২৪ সালের শহীদ, ১৯৭১ সালের শহীদ, কারওই কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি লেখা-পড়া হতে হবে আপনাদের প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার।

অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম মিথিলের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, বিএনপি’র জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী, সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। 

এ ছাড়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু হোরায়রাসহ গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্বজনবৃন্দ এবং আহত আল মিরাজসহ অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।