প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে হাতে বাঁশি, ২০ বছর ধরে ছড়াচ্ছেন সুরের মূর্ছনা

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের রুদ্রবানা গ্রামে বেড়ে ওঠা বাবলুর। হাদি আতিউর রহমানের ছেলে সদা হাস্যোজ্জল বিনয়ী বাবলু একজন ফুটবল খেলোয়াড়ও।

প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে হাতে বাঁশি, ২০ বছর ধরে ছড়াচ্ছেন সুরের মূর্ছনা

প্রথম নিউজ, ফরিদপুর: বংশীবাদক বাবলু। বাঁশি বাবলু নামেও পরিচিত। পুরো নাম হাদী বাবুল আক্তার বাবলু। প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে বিনোদন দিয়ে চলছেন। শুধু কি তাই এই বাঁশির সুরের মধ্যেও রয়েছে তার বিরহের স্মৃতি।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের রুদ্রবানা গ্রামে বেড়ে ওঠা বাবলুর। হাদি আতিউর রহমানের ছেলে সদা হাস্যোজ্জল বিনয়ী বাবলু একজন ফুটবল খেলোয়াড়ও। এলাকায় তার বেশ পরিচিতি। লেখাপড়া করেন এসএসসি পর্যন্ত। দর্জি কারিগর ও কৃষি কাজের পাশাপাশি তার রয়েছে শখের অতি আদরের দাবুড়ে ঘোড়া। আশপাশে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় দাবুড়ে ঘোড়া নিয়ে অংশ নেন তিনি।

এলাকাবাসী জানান, বংশীবাদক বাবলু বাড়ি থেকে বের হলেই তার বাঁশি বাজানোই লাগবে। এজন্য তিনি বাঁশি সঙ্গেই রাখেন সব সময়। প্রিয় বাহন বাই সাইকেলে করে বাড়ি থেকে বের হলেই আর যেন রেহাই নেই। পথে-ঘাটে, হাটে-মঠে, বাজারে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে তাকে বাঁশি বাজিয়ে শোনাতে হয়। মাথায় চুল রেখেছেন বড় করে। কাঁধ ঝাঁকিয়ে যখন বাঁশিতে ফুঁক দেন তখন যেন সুরে সুরে ভেসে যায় চারদিক। নদীর পাড়, রাস্তার মোড়, মুদি দোকান কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে সব জায়গায় বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে নিজে তৃপ্তি পান বাবলু।

বিনাপয়সায় বাঁশি বাজান তিনি। চলার পথে ভক্তরা পথ আগলে দাঁড়ান। বিনয়ের সঙ্গে সাইকেল থেকে নেমে বাজিয়ে শোনান একের পর এক মন শীতল করা বাঁশির সুর। কলেজ জীবনে তিনি জড়িয়ে পড়েন প্রেমে। তাকে তার প্রিয়তমা প্রেমে দাগা দিয়ে অন্যজনের সঙ্গে ঘর বাঁধেন। যার কারণে তিনি আর প্রেম-ভালবাসায় জড়াননি। বিয়েও করেননি। বংশীবাদক হাদী বাবুল আক্তার বাবলু  বলেন, বংশীবাদক ওস্তাদ মনা মিয়া, জিতেন ঘোষ, ওস্তাদ কায়েমের কাছ থেকে বাঁশি বাজানো শিখেছেন তিনি। তিনি স্কুল জীবন থেকেই বাঁশি বাজান এবং ফুটবল খেলা শুরু করেন। প্রায় ২০ বছর ধরে বাঁশের আড় বাঁশি বাজিয়ে মানুষের মনের খোরাক মেটানোর পাশাপাশি মানুষকে তৃপ্তি-বিনোদন দিয়ে নিজের কাছে আনন্দ লাগে।

তিনি বলেন, কলেজ জীবনে প্রেমে দাগা খেয়ে বাঁশির সুরের মাঝেই নিজেকে শপে দিয়েছি। ২৪ ঘণ্টায় বাঁশি আমার সঙ্গে থাকে। সুযোগ পেলেই সুর তুলি বাঁশিতে। আর বাঁশির সুরে মানুষের মনের খোরাক যোগায়ে কাটিয়ে দিতে চাই বাকি জীবন। তবে আমার জীবনের বড় শখ যদি রেডিও-টিভি, চলচ্চিত্রের গানে বাঁশি বাজানোর সুযোগ পেতাম তাহলে জীবনের বড় স্বপ্ন পূরণ হতো।

স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর কবির বলেন, মাথায় লম্বা চুল, বাঁশির সুর তাকে আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছে অঞ্চলে। তার বাঁশির সুর শোনেননি এমন লোক উপজেলায় কমই আছে। ভ্রমর কইয়ো গিয়া, শ্রী কৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে ও বন্ধু কাজল ভ্রমরারে কোনদিন আসিবা বন্ধু কইয়া যাও, কইয়া যাওরে কিংবা খাচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়। এমন অনেক গানের শিতল করা বাঁশির সুর যেন পরান জুড়িয়ে যায়।

উপজেলার পৌর সদরের বাসিন্দা মো. বাচ্চু মিয়া  বলেন, তিনি একজন ভালো ফুটবল খেলোয়াড়। বাড়ির বাইরে গেলেই লোকজন তাকে ঘিরে ধরে বাঁশির সুর শুনতে। প্রায় ২০ বছর ধরে তার বাঁশির মনমাতানো সুর শুনে আসছি। পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. এনায়েত হোসেন বলেন, বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দেন বংশীবাদক বাবলু। এ কারণে তাকে উপজেলার অধিকাংশ মানুষের কাছে বাঁশি বাবলু নামেও পরিচিত। বেতার ও টেলিভিশনে বাঁশি বাজিয়ে দেশবাসীকে তার বাঁশির সুর শোনাতে চান বাবলু।

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, বাংলা সংস্কৃতির প্রাচীন নিদর্শন হচ্ছে বাঁশি। আমাদের প্রাচীন ও আধুনিক সংগীতে বাঁশির ব্যবহার রয়েছে। প্রায় ২০ বছর ধরে গ্রাম, হাট বাজার, পাড়া মহল্লা আর পথে পথে ঘুরে সুর তুলে বাঁশের বাঁশি বাজান বাবলু। বাঁশিতে তোলা সুরের টান মানুষকে জানান দেয় বাবলুর উপস্থিতি। তার কোনো বিষয়ে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।