প্রধানমন্ত্রী ১৪১ জন সহযাত্রী নিয়ে তিনি প্রমোদ ভ্রমনে গেছেন: রিজভী
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ভাগ্নের অভিমান ভাঙ্গার জন্য প্রধানমন্ত্রী ফিনল্যান্ডে যাত্রা বিরতি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, 'আপনি (প্রধানমন্ত্রী) ১৪১ জন আত্নীয়-স্বজন, দলের লোক সব নিয়ে প্রথমে গেলেন ফিনল্যান্ড তারপরে নিউয়র্ক। ফিনল্যান্ডে আপনার কি কাজ ছিলো? কি এমন গুরুত্বপূর্ন কাজ ছিল যে একটা গোটা বিমান চাটার্ড করে আপনি সেখানে গেলেন। তাতে বোঝাই যাচ্ছে পারিবারিক কোন লেনদেনের ব্যাপার সেইটা হয়তো মিটমাট করার জন্য আপনি গেছেন সেখানে আপনার ভাগ্নের অভিমান ভাঙ্গার জন্য, তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য। যেটা আজকে প্রচার হচ্ছে সেটা কি অসত্য? মানুষ খাবারের জন্য হাহাকার করছে আর আপনি প্রধানমন্ত্রী ১৪১ জন মানুষ নিয়ে যাচ্ছেন নিউয়র্কে।
আজ শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিষ্ট এক্স স্টুডেন্ট'স এসোসিয়েশন (রুনেসা) আয়োজিত সাবেক ছাত্রদল নেতা প্রয়াত নিশতাক আহমেদ রাখীর স্মরণে শোক সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিউয়র্ক সফরের কড়া সমালোচনা করে রিজভী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৪১ জন সহযাত্রী নিয়ে তিনি প্রমোদ ভ্রমনে গেছেন। সবাই বলাবলি করছে বিভিন্ন মাধ্যমে দেখছি ভাগ্নের অভিমান ভাঙ্গাতে তিনি নাকি সেখানে গেছেন এই যদি হয় তাহলে কোথায় যাবো আমরা? ফিনল্যান্ড থেকে নিউয়র্ক উনি (প্রধানমন্ত্রী) গেছেন জাতিসংঘের বাৎসরিক অধিবেশনে সেখানে বক্তব্য রাখার জন্য। কই আপনি (প্রধানমন্ত্রী) সেখানে তো রোহিঙ্গাদের কথা বলেননি? বাংলাদেশে আজকে যে পরিস্থিতি সেই পরিস্থিতির জন্য আপনি দায়ী সেটি তো আপনি বলেননি। তাহলে আপনি সেখানে কিসের কথা বলতে গেছেন? আপনি যে দিনের ভোট রাত্রে দেন আপনি যে নিশীরাতের প্রধানমন্ত্রী সেটা একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আপনি সেখানে বক্তব্য দিতেন। দেশের স্বার্থে জনগনের স্বার্থে আজকে দেশের যে সংকট রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য যে উদ্দ্যোগ থাকার দরকার ছিল যে কূটনৈতিক তৎপরতা থাকার দরকার ছিল সেই কূটনৈতিক তৎপরতা আপনি দেখাতে পারেননি। আপনি চারিদিক থেকে ব্যর্থ।
তিনি বলেন, 'একটা গরীব দেশ কর্মসংস্থান নেই হাজার হাজার যুবক এম এ পাশ করে মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে হাতে সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে। মহামারী এই করোনার কারণে বহুমানুষ কর্মহীন হয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। পাশাপাশি একই সাথে আমরা দেখছি দেশের এক শ্রেণীর মানুষের কি আনন্দঘন বিলাশ চলছে।
সরকারের এত ভয় কীসের এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'আপনারা দেখুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় দুই বছর বন্ধ রাখলেন সাথে স্কুল কলেজ ও বন্ধ রাখলেন। এখন ৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তারা নাকি খুলবেন এবং ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবাইকে নাকি টিকা নিতে হবে এবং টিকা কার্ড নিয়ে সবাইকে নাকি যেতে হবে। তারপর বলছেন সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নজরদারিতে থাকবে। কি চলছে দেশে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নজরদারিতে থাকবে কেন? তাহলে এতদিন আপনারা যে করোনার অযুহাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলেন এইটা তাহলে রাজনৈতিক উদ্দেশে। এইটা করোনার বিষয় নয় একধরনের ভীতি থেকে এক ধরনের শঙ্কা থেকে। কারণ আপনার মনের মধ্যে দূর্বলতা আপনি নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী। আপনার সরকার নিশিরাতের। পুলিশ র্যাব দিয়ে আপনি দেশ চালাচ্ছেন। এজন্যই আপনারা আতঙ্কিত যে কখন কি হয়ে যায়।
প্রয়াত নিশতাক আহমেদ রাখীর স্মতিস্মারণ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'রাখীর মতো ছেলেদের এই মুহুর্তে দেশে খুব প্রয়োজন ছিল। চারিদকে যখন অসৎ বাটপার দুর্নীতিবাজ লুটেরেরা তাদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য গোটা জাতিকে এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে সে মুহুর্তে রাখীদের মতো সৎ সাহসী নির্ভীক এবং তার পেশাদারিত্বে চরমভাবে নিষ্ঠাবান ছেলের পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া একটা বিরাট ক্ষতি বলে আমি মনে করি। এক বিরাট শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি মনে করি। এই শুন্যতা যে খুব তাড়াতাড়ি খুব সহজে পূরণ হবে এটা আমার বিশ্বাস হয় না।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, ওলামা দলের আহ্বায়ক শাহ মোঃ নেছারুল হক, মৎসজীবিদলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।