‘পাঠ্য বইয়ে ভুল, জাতির অস্তিত্বের ইস্যু’
সরকার যা খুশি তা-ই করে যাচ্ছে, যেমন খুশি তেমন করে যাচ্ছে। দিনকে রাত বলছে, রাতকে দিন বলছে, মুরগির ডিমকে অশ্বডিম্বও বলছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পাঠ্য বইয়ের ভুল অবশ্যই বড় ইস্যু, এটি জাতির অস্তিত্বের ইস্যু। সরকার যা খুশি তা-ই করে যাচ্ছে, যেমন খুশি তেমন করে যাচ্ছে। দিনকে রাত বলছে, রাতকে দিন বলছে, মুরগির ডিমকে অশ্বডিম্বও বলছে। নতুন পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে সরকার এ দেশের মানুষের পরিচয় ভুলিয়ে দিতে চায়। অবিলম্বে এসব পাঠ্যপুস্তক বাতিল করার আহ্বান জানান তিনি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ‘অপরিণামদর্শী কারিকুলাম ও মানহীন পাঠ্যপুস্তক: দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসের নীলনকশা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপিপন্থি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
তিনি বলেন, পাঠ্যবইয়ের ভুলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে রাস্তায় নামতে হবে। আমাদের স্বকীয়তা ও ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষার জন্য জেগে উঠতেই হবে। ভুলে ভরা পাঠ্যবই অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক নিয়ে ইস্যু না বানানোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনি (শিক্ষামন্ত্রী) আমার শিকড় ধরে টান দেবেন, আমি ইস্যু বানাবো না? কথা বলবো না? আপনি আমার অবয়ব বদলে দিতে চাইবেন, স্বাতন্ত্র্যকে বদলে দিতে চাইবেন, আমি ইস্যু বানাবো না? অবশ্যই এটি সবচেয়ে বড় ইস্যু।
এটা জাতির অস্তিত্বের ইস্যু
ফখরুল বলেন, আজকে পাঠ্যপুস্তকে অজস্র ভুলে ভরা ইতিহাস ও তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। আর সেগুলোই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের শেখানো হচ্ছে। যারা কারিকুলাম তৈরি করে কেউ কিন্তু ভাবে না যে ছেলেমেয়েরা কী শিখছে? জাতির মূল জায়গা হলো শিক্ষা। আর সেখানেই হাত দিয়েছে সরকার। এতক্ষণে অরিন্দম কহিল বিষাদে। মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার একটি নতজানু ও ব্যর্থ জাতি তৈরির জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আমাদের শেকড়ে টান দিয়েছে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে ব্যর্থ করতে শিক্ষা ব্যবস্থায় হাত দিয়েছে। কেউ কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করছে না। আমাদের তো আলাদা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং পরিচয় আছে। কেনো সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে ভয় কেনো? আজকে শিশুদেরকে ভ্রান্ত ধারণা ও ইতিহাস শিক্ষা দিচ্ছে। বাইরে থেকে কেউ স্যাংশন দিয়ে কিছু করে দিবে না। নিজেদেরকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। জেগে উঠতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে।
ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় আলোচনায় সভায় নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি করা পাঠ্যপুস্তকের ‘ভুল-অসংগতির’ ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ও শাহ শামীম হোসেন। প্রবন্ধের মাধ্যমে তারা নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন ‘ভুল-অসংগতি’ তুলে ধরেন। তাদের মূল বক্তব্য হলো, নতুন শিক্ষাক্রম জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অবাস্তবায়নযোগ্য। এটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নিষ্ক্রিয় করার কৌশল। যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাড়াহুড়া করে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, শিক্ষা হলো আমাদের আত্মমর্যাদা ও সভ্যতার একটি অংশ। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে ২০১১ সাল থেকে। যা গত এক দশকে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এরমাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তকে শুধু ইতিহাস বিকৃতি নয় চৌর্যবৃত্তি করা হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশ, মেধা ও মনন নষ্ট করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভুল ইতিহাস শেখানোর মাধ্যমে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার চায় তাদের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলতে। এর মাধ্যমে একটি অথর্ব ও জ্ঞানহীন জাতি তৈরি করতে চায় ফ্যাসিস্ট সরকার। আসলে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ তছনছ করে নিজেদের পরিবারের শিক্ষা ব্যবস্থা বানিয়েছে। এখানে কেবলই শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনা এবং তাদের পরিবারের লোকজনের বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। সমাজ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কোনো কিছুই তারা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এটা যেন আওয়ামী পাঠ্যপুস্তক। অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই উদ্বেগের। এটা একটি জাতি ধ্বংসের নীল নকশা। অসত্য ও ভুলে ভরা পাঠ্যবই। জাতিকে মুর্খ এবং জ্ঞানহীন করে তোলার লক্ষ্যেই পরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছে। অবিলম্বে ভুলে ভরা পাঠ্যবই বাতিল এবং যারা দায়ী তাদের বিচারের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও শিক্ষামন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। আরও বক্তব্য দেন পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস ইসলাম, অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, অধ্যাপক ড. আব্দুল করিম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান প্রমুখ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: