নির্বাচনে জাতিসংঘের সহায়তা নাকচ করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

একই সঙ্গে তিনি নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসতে সরকারের অনাপত্তির কথাও বলেছেন।

নির্বাচনে জাতিসংঘের সহায়তা নাকচ করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নির্বাচনে জাতিসংঘের সহায়তা নাকচ করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রথম নিউজ, অনলাইন : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতিসংঘের কোনো সহায়তা নেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসতে সরকারের অনাপত্তির কথাও বলেছেন। তবে মন্ত্রী পর্যবেক্ষকদের কার্যক্রম নিয়ে মৃদু রসিকতাও করেন। বলেন, যদিও অনেক উন্নত দেশ এগুলো (বিদেশি পর্যবেক্ষক) গ্রহণ করে না কিন্তু আমাদের এটা নিতে হয়। আমরা তাদের (পর্যবেক্ষকদের) স্বাগত জানাই। তারা (বিদেশি পর্যবেক্ষক) এসে দেখুক, আমাদের দেশে কতো সুন্দর, স্বচ্ছ, আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচন হয়। ওদের  দেশে তো আনন্দময় নির্বাচন হয় না। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশে নির্বাচন দেখে শিখতে পারে বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, তারা দেখে শিখুক। সোমবার জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এসব মন্তব্য করেন মন্ত্রী ড. মোমেন।

বলেন, নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে বলে আগেই জানান ১৯৩ রাষ্ট্রের জোটের ঢাকাস্থ প্রতিনিধি গোয়েন লুইস। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে ফেরার পথে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। জাতিসংঘ দূত জানান, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে জাতিসংঘ সহায়তা করতে চায়, কিন্তু আদতে কি সহায়তা লাগবে তা ঢাকাকে খোলাসা করে বলতে হবে। বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সহায়তা নিতে চায় কিনা? তা নিয়ে অস্পষ্টতার কথাও জানান তিনি। গোয়েন লুইসের বিদায়ের পর ব্রিফ করেন মন্ত্রী মোমেন। জাতিসংঘ দূতের বক্তব্যের রেশ ধরে সাংবাদিকরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সহায়তা নেবে কিনা? জবাবে মোমেন জানান, নির্বাচনে সংস্থাটির কোনো সহযোগিতা চায় না বাংলাদেশ। তিনি বলেন, জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতা আমাদের নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা যথেষ্ট পরিপক্ব। নির্বাচন করার জন্য যেসব ইনস্টিটিউশন দরকার, সুন্দর, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সেই ইনস্টিটিউশন আমরা মোটামুটি তৈরি করেছি। মোমেন বলেন, আমরা স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি করেছি। বায়োমেট্রিক ভোটার তালিকা, যাতে কোনো ধরনের ফ্রড বা ভুয়া ভোট না হয়। আমরা একটা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছি। তারা যথেষ্ট সক্ষমতা রাখে। সেজন্য আমাদের অন্যদের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন নেই।

সাংবাদিক শামসুজ্জামান ইস্যুতে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী: এদিকে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে প্রথম আলো’র সাংবাদিক গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গটি আসে। এ বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা বলেছি, আমাদের তথ্য মতে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন; শিশুকে ব্যবহার করার কারণে। দ্বিতীয় ইস্যু হলো তিনি আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে তামাশা করেছেন। আমাদের চেতনার সবচেয়ে বড় ধন স্বাধীনতা। ওটাকে নিয়ে তামাশা করবেন, এটা কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করবে না। অপরাধ করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পার পাওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, সাংবাদিকের নাম দিয়ে অপরাধ করবেন, এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। সাংবাদিক হলেও অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চাই, কিন্তু কেউ অপরাধ করে পার পাবেন না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে গত শনিবার (১লা এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বিবৃতিতে প্রথম আলো’র সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে বলা হয়, জীবনযাত্রার মান নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য নয়, প্রথম আলো’র সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ‘শিশুকে ব্যবহার’ করে প্রতারণামূলক সংবাদ করার দায়ে। মামলার এজাহারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিবৃতিতে কোনো সোর্স থেকে শিশু নির্যাতনের বিষয়টি যুক্ত করা হলো-জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, আমরা ছবি দেখেছি। আপনি ছবি দেখেছেন। শিশু নির্যাতনের জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। 

রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ: ওদিকে  বৈঠকে রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন জোগাড় নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অর্থ কমছে-এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, যারা ওয়াদা করেছে, তাদের কাছ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থ সংগ্রহ করেন। রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ প্রদানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিন থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে, এখনো করে যাচ্ছে। তাদের কোনো গাফিলতি নেই। কিন্তু অন্য অনেক দেশই আগে অনেক সাহায্য করেছে, এখন অনেক কমিয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ গুরুত্ব হারাচ্ছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, মনোযোগ যেন থাকে আমরা বিভিন্নভাবে এ ইস্যুটা তুলে ধরেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্ররা এটার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রত্যাবাসন নিয়ে আগের মতো আশার কথা শোনান মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের ফোকাস প্রত্যাবাসন। আমি সবসময় আশাবাদী। মিয়ানমার সরকার বারবার ওয়াদা করেছে, তারা ওদের নিয়ে যাবে। সুতরাং আমি আশাবাদী। তবে কবে সেটা আমি জানি না। সম্প্রতি জার্মানভিত্তিক ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- র‌্যাবকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোমেনের ভাষ্য, এটা হাসির খোরাক আর কি। তারা (র‌্যাব) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে না। তারা (র‌্যাব) নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে।