নামেই শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র, সেবা বঞ্চিত শ্রমিকরা

প্রায় ৪৪ বছর আগে এসব শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা ও বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয় শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র।

নামেই শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র, সেবা বঞ্চিত শ্রমিকরা
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, নীলফামারী: উত্তরের বাণিজ্যিক শহর হিসেবে পরিচিত নীলফামারীর সৈয়দপুর। এখানে বিসিক শিল্পনগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় দুই হাজারের বেশি কারখানায় প্রায় এক লাখ শ্রমিক কর্মরত আছেন। এছাড়াও বাস-মিনিবাস, ট্রাক, রিকশাভ্যান, ইজিবাইক শ্রমিক রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। প্রায় ৪৪ বছর আগে এসব শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা ও বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয় শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র।

শুরুতে এই কেন্দ্র শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করলেও বর্তমানে এর কোনো কার্যক্রম চলছে না। প্রচারণার অভাবে অনেক শ্রমিক জানেন না শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের খবর ও এখানকার প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও সেবার বিষয়টি। এতে করে কেন্দ্রটি শ্রমিকদের কোনো কল্যাণে আসছে না।   এদিকে শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রে প্রায় এক যুগ ধরে চিকিৎসক, নার্সসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য। এছাড়াও জরাজীর্ণ ভবনে কোনো রকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কেন্দ্রটির কার্যক্রম।  

শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শহরের নিচু কলোনী এলাকায় ৫৪ শতক জমির ওপর এসব শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা ও বিনোদনের জন্য শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। কেন্দ্রটিতে ১২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন।  চিকিৎসা কর্মকর্তা, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাসহ ৬টি পদ প্রায় এক যুগ ধরে শূন্য রয়েছে। 

সরেজমিন দেখা গেছে, শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রটির কার্যক্রম চলছে অত্যন্ত জরাজীর্ণ একটি ভবনে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় দেয়াল ও ছাদে বড় বড় আগাছা জন্মেছে। দেখে মনে হবে এটি একটি পরিত্যক্ত ভবন। চিকিৎসকের কক্ষসহ অধিকাংশ কক্ষই তালাবন্ধ। দেখা মেলেনি সেবা নিতে আসা কোনো শ্রমিকের। যে কয়জন অফিস স্টাফ রয়েছেন তারা গল্প-গুজব করে সময় কাটাচ্ছেন।

শহরের ট্রাক শ্রমিক আবু বকর বলেন, শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে এমন তথ্য তো জানা নেই। আজই প্রথম শুনলাম। আমাদের শ্রমিকদের মধ্যে কেউ জানে কিনা সেটাও সন্দেহ আছে। রিকশা শ্রমিক আতিয়ার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই রাস্তা দিয়ে রোজ রিকশা নিয়ে চলাচল করি। কিন্তু কোনো দিন দেখেননি এখানে শ্রমিকদের চিকিৎসা দিতে। মোতালেব  বলেন, আমাদের শ্রমিকদের জন্য এতো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে সরকার কিন্তু আমরা তা জানি না। তাছাড়া এখান থেকে কোনোদিন কাউকে কোনো সেবা নিতেও দেখিনি।

নীলফামারী জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা শ্রী রনজিত রায় বলেন, শ্রমকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত কেন্দ্রটি পুরোদমে চালু রাখার একাধিক প্রতিশ্রুতি এলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আর শ্রমিকরাও বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের অধিকার থেকে। স্থানীয় শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ, চিকিৎসাসহ কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। অথচ সরকার প্রতি বছর এই কেন্দ্রে কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে ব্যয় করছেন কোটি কোটি টাকা। 

তিনি আরও বলেন, সৈয়দপুর শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রটি বাস্তবে শ্রমিকদের জন্য কোনো কাজ করছে না। শুধু মাঝে মধ্যে কিছু শ্রমিককে নিয়ে সেমিনার করে যা লোক দেখানো। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন। হালকা প্রকৌশল শিল্প মালিক সমিতির নীলফামারীর সভাপতি এরশাদ হোসেন পাপ্পু বলেন, এখনকার শ্রমিকদের কোনো খোঁজখবর নেয় না শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র। তাছাড়া শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রটি কোথায়? শ্রমিকরা তা জানেন না।

সৈয়দপুর শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের শ্রমকল্যাণ আব্দুল খালেক বলেন, ২০১০ সাল থেকে এই অফিসে চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ ৬টি পদ শূন্য রয়েছে। ফলে শ্রমিকদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া অফিস ও স্টাফদের জন্য বরাদ্দ বাসাগুলোও দীর্ঘদিনের পুরোনো। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে একাধিকবার জানানো হলেও কর্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দিনাজপুর আঞ্চলিক শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক আবুল বাশার বলেন, চিকিৎসা কর্মকর্তা, নার্সসহ ৬টি পদে জনবল না থাকার বিষয়টি শ্রম মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এসব সমস্যা খুব শিগগিরি সমাধান হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom