নূপুর শর্মা: পুলিশের যে নিষ্ঠুরতার ভিডিও ভারতকে নাড়া দিয়েছে

ভারতীয় পুলিশ তাদের হেফাজতে থাকা একদল মুসলিম পুরুষকে বেদম প্রহার করছে, এরকম একটি ভিডিও অনলাইনে দেখেছেন লাখ লাখ মানুষ। ভিডিওটি শেয়ার করেছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির এক নির্বাচিত জন-প্রতিনিধি, যিনি পুলিশের নিষ্ঠুর আচরণের প্রশংসা করেন এই বলে যে, এই পিটুনি আসলে এই লোকগুলোর জন্য একটি 'উপহার।'

নূপুর শর্মা: পুলিশের যে নিষ্ঠুরতার ভিডিও ভারতকে নাড়া দিয়েছে
নূপুর শর্মা:পুলিশের যে নিষ্ঠুরতার ভিডিও ভারতকে নাড়া দিয়েছে

প্রথম নিউজ, ডেস্ক: ভারতীয় পুলিশ তাদের হেফাজতে থাকা একদল মুসলিম পুরুষকে বেদম প্রহার করছে, এরকম একটি ভিডিও অনলাইনে দেখেছেন লাখ লাখ মানুষ। ভিডিওটি শেয়ার করেছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির এক নির্বাচিত জন-প্রতিনিধি। তিনি পুলিশের নিষ্ঠুর আচরণের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘এই পিটুনি আসলে এই লোকগুলোর জন্য একটি উপহার।’ এ ঘটনায় জড়িত অফিসারদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নির্যাতনের শিকার মানুষগুলোর পরিবার বলছে, তাদের প্রিয়জনরা নির্দোষ। তাদের মুক্তি দেয়া উচিৎ। ‘এটা আমার ভাই। ওকে প্রচণ্ড মেরেছে ওরা। ও ব্যথায় অনেক চিৎকার করছিল,’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন জেবা। যে হাতে ধরা মোবাইলফোনে তিনি তার ছোট ভাই সাইফকে মারার এই ভয়ঙ্কর ভিডিওটি দেখছিলেন, তার সেই হাতটি তখনো কাঁপছিল। তিনি বলেন, এই দৃশ্যের দিকে আমি তাকাতে পারছি না। ওকে যে কি সাংঘাতিকভাবে মেরেছে।

বিবিসি এই ভিডিওর কিছু লোককে চিহ্নিত করতে পেরেছে এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে

উত্তর ভারতের শহর সাহারানপুরে নিজের বাড়িতে এ সময় তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন আত্মীয়-স্বজনরা। বিচলিত হওয়ার মতো ভিডিওটিতে দেখা যায় কিছু ভারতীয় পুলিশ তাদের হাতে বন্দী কয়েকজন মুসলিম পুরুষকে মারতে উদ্যত, যার মধ্যে জেবার ভাইও রয়েছে। ভিডিওতে আরো দেখা যায়, পুলিশ অফিসাররা ওই লোকগুলোকে রড দিয়ে পেটাচ্ছেন। রডগুলো তারা বেসবল ব্যাটের মতো করে ঘোরাচ্ছে। প্রতিবার যখন কারো ওপর এরকম রডের বাড়ি পড়ছে, তখন তার শব্দ শোনা যাচ্ছে, এরপরই শোনা যাচ্ছে চিৎকার।

কোতোয়ালি থানা- যেখানে গ্রেফতার করা লোকজনকে আনা হয়েছিল

‘খুব ব্যথা লাগছে, খুব ব্যথা লাগছে ...আর মেরো না,’ আতঙ্কে-ভয়ে এক কোনায় দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকা কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়।এরপরও যখন বেদম প্রহার চলতে থাকে তখন সবুজ রঙের টি-শার্ট পরা এক লোককে প্রার্থনা করতে দেখা যায়। আর সাদা শার্ট পরা সাইফকে দেখা যায় ওপরে দুই হাত তুলে যেন তিনি আত্মসমর্পণ করছে। গত সপ্তাহে পুলিশ যে কয়েকজন মুসলিম পুরুষকে ধরে নিয়ে আটকে রেখেছিল, ২৪ বছর বয়সী সাইফ তাদের একজন। ভারতে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা হজরত মোহাম্মদ সা: সম্পর্কে উস্কানিমূলক কিছু মন্তব্য করার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। সাহারানপুরেও শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। মুসলিম দেশগুলো থেকে তীব্র প্রতিবাদের মুখে বিজেপি পরে নূপুর শর্মাকে দল থেকে বরখাস্ত করে।

মুসকান এবং তার ১৭ বছর বয়সী ভাইয়ের বাড়ির সামনে বুলডোজার। বাড়িটি আংশিক ভেঙ্গে ফেলা হয়।

এছাড়াও ঘোষণা করে, তারা যেকোনো ধর্মকে অবমাননার বিরুদ্ধে। সাহারানপুরের এই প্রতিবাদ ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। মসজিদ থেকে বেরিয়ে লোকজন শহরের দোকানপাটের সামনে দিয়ে মিছিল করে যায়। তবে উত্তেজনা যখন বাড়ছিল, তখন হিন্দু মালিকানাধীন কিছু দোকানে হামলা হয়। এ সময় দু’জন ব্যবসায়ী আহত হন। পরে জনতাকে ছত্র-ভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চালায়।পুলিশের কাগজপত্রে অভিযোগ করা হয়, সাইফ ও আরো ৩০ জন মিলে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করেছে। সহিংসতায় উস্কানি দিয়েছে। একজন সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা দিতে ইচ্ছেকৃতভাবে তাকে আহত করেছে এবং জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।

ভিডিওটির একটি স্ত্রিনশটে সাইফকে (সাদা কাপড় পরা) সাহারানপুরে পুলিশের থানার সামনে দেখা যাচ্ছে

সাইফের পরিবার কার্ডবোর্ড বিক্রি করে কোনোরকমে জীবন চালায়। তারা বলছে, সাইফ নির্দোষ, এমনকি তিনি ওই বিক্ষোভেও ছিল না। তারা জানায়, সাইফ শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে ঘর থেকে বেরিয়েছিল তার এক বন্ধুর জন্য বাসের টিকেট কাটতে। তখন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং সাহারানপুরের কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। জেবা যখন তাকে থানায় দেখতে যান, তখন তার ভাইয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেন বলেও জানান। তিনি বলেন, বেদম পিটুনির ব্যথায় তার শরীর নীল হয়ে গিয়েছিল। তিনি ঠিকমতো বসতে পর্যন্ত পারছিলেন না। ভিডিওতে স্পষ্টভাবেই পুলিশের নৃশংসতা দেখা যাচ্ছে। সেটি অনলাইনে শেয়ার করেন বিজেপির এক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, শালাভ ত্রিপাঠি। ভিডিওর নীচে তিনি আবার ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘বিদ্রোহীদের জন্য একটি ফিরতি উপহার।’ ভিডিওটি অনলাইনে ভাইরাল হয়। ত্রিপাঠি ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এক রাজনীতিক ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সাবেক মিডিয়া উপদেষ্টা। ঘটনাটি ঘটেছে এ প্রদেশেই। বিজেপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ ভিডিওর ঘটনার কোনো নিন্দা করা হয়নি। বিজেপি সরকারের তরফ থেকেও নয়।

নিজের ছেলে এবং স্বামীকে নিয়ে চিন্তিত মুন্নি বেগম। তিনি বলছেন, দুজনকেই পিটিয়েছে পুলিশ।

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, ভারতে ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেখানে পরিবেশ ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমদের টার্গেট করে ঘৃণা-বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা বাড়ছে। বাড়ছে তাদের টার্গেট করে হামলার ঘটনাও। বিবিসি এ পর্যন্ত কয়েকটি মুসলিম পরিবারের সাক্ষ্য নিয়েছে যারা বলছে, গত শুক্রবার সাহারানপুরে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে গ্রেফতারের পর কোতোয়ালি থানায় পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারধর করা হয়েছে। এরা ভিডিওতে তাদের নিকটজনকে চিহ্নিতও করেন, যাতে দেখা যায় পুলিশ সহিংসতা চালাচ্ছে। অন্য ফুটেজে দেখা যায়, এই লোকগুলোকে একটি ভ্যানে তুলে অন্য একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই দৃশ্যে কোতোয়ালি থানার সাইনবোর্ড স্পষ্টভাবেই চোখে পড়ে। পুলিশের রিপোর্টেও কোতোয়ালি থানার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও এ সপ্তাহের শুরুতে স্থানীয় পুলিশ সেখানে এরকম কিছু ঘটার কথা অস্বীকার করেছিল। পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার আকাশ টোমার বলেন, সাহারানপুরে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় দু’টি বা তিনটি ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপনি যদি একটি ভিডিও স্লো মোশনে দেখেন, আপনি সেখানে অন্য একটি জেলার নাম দেখতে পাবেন। টোমার পরে আবার বলেন, তিনি এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করছেন। দরকার হলে ব্যবস্থাও নেবেন বলে জানান।

ভিডিওতে অন্য যাদের দেখা যাচ্ছে, তাদের পরিবার জানিয়েছেন, তাদের প্রিয়জনরা যখন আরো তথ্যের জন্য থানায় গিয়েছিলেন, তখন তাদের আটক করা হয়। ফাহমিদার ছেলে সুবহান (১৯) থানায় গিয়েছিল তার বন্ধু আসিফ গ্রেফতার হওয়ার পর কি হয়েছে দেখতে। সেখানে যাওয়ার পর সুবহানকেও গ্রেফতার করে পেটানো হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, হালকা হলুদ রঙের পোশাক পরা সুবহান মাটিতে পড়ে আছে। আর পুলিশ তার দিকে লাঠির বাড়ি মারছে। পরিবার বলছে, সুবহান গত শুক্রবার মসজিদে যায়নি। বিক্ষোভে অংশ নেয়া তো আরো পরের কথা। আমার ছেলেকে নির্দয়-ভাবে পেটানো হয়েছে, কাঁদতে কাঁদতে বললেন ফাহমিদা।

এদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, শুক্রবারের বিক্ষোভের সময় সহিংসতার অভিযোগে তারা ৮৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের সুপারিন্টেনডেন্ট রাজেশ কুমার বলেন, কেবলমাত্র অপরাধীদেরই গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা যখন কাউকে গ্রেফতার করি, তখন প্রথমে যেকোনো সহিংস বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছিল এমন ফুটেজ তাদের দেখাই, এরপরই কেবল তাদের গ্রেফতার করা হয়। তবে তার এই কথার সাথে গ্রেফতার হয়েছে এমন কিছু লোকের পরিবারের কাছ থেকে আমরা যে বিবরণ শুনেছি, তা মিলছে না। পুলিশের থানায় যখন এসব ঘটনা ঘটছে, তখন শহরের অন্যদিকে আইনের জোর অন্যভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে। বুলডোজার দিয়ে দু’জন মুসলিম পুরুষের বাড়ির অর্ধেকটা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এ দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সহিংসতায় উস্কানি দিয়েছিল।

ভারতে লাখ লাখ মানুষ এমন সব জোড়াতালি দেয়া ঘরবাড়িতে থাকে, যেগুলো কর্তৃপক্ষের যথাযথভাবে অনুমোদিত পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মাণ করা হয়। বিজেপি এখন অহরহ এই বিষয়টিকে শাস্তির একটি কারণ হিসেবে ব্যবহারের কৌশল নিয়েছে। সম্প্রতি বিক্ষোভে অংশ নেয়া লোকজনের অবৈধভাবে নির্মিত ঘর-বাড়ি ভেঙে দেয়ার যে নির্দেশ, তা একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন পেয়েছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ টুইট করে জানান, কথিত আইন-ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে বুলডোজারের কাজ চলবে।শুক্রবার যে মুসলিমরা নামাজ পড়েন, তাদের প্রতি ইঙ্গিত করে তার মিডিয়া উপদেষ্টা মৃত্যুঞ্জয় কুমার একটি বুলডোজারের ছবি পোস্ট করেন। এর নীচে লেখা- ‘শুক্রবারের পর শনিবার আছে কিন্তু!’ এরপর গত শনিবার বিকেলে মুসকানের বাড়িতে আসলো একটি বুলডোজার এবং বাড়ির সামনের গেট ভেঙ্গে ফেলা শুরু করল। পুলিশ সেখানে এসে হাজির হলো তার ভাইয়ের এক ছবি হাতে। জিজ্ঞেস করল, এ বাড়িতেই তিনি থাকেন কিনা। ১৭ বছর বয়সী ছেলেটিকে এর আগের রাতেই পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছিল।

মুসকান বলেন, ‘আমার বাবা নিশ্চিত করলেন ছবিটি তার ছেলের।’ জিজ্ঞেস করলেন, কিছু ঘটেছে কিনা। পরে তারা কোন উত্তর দিল না। হঠাৎ বুলডোজার চালানো শুরু করল। কর্মকর্তারা এই তরুণের বিরুদ্ধে শুক্রবার সহিংসতায় উৎসাহ দেয়ার অভিযোগ এনেছেন। একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে একটি ভিডিও দেখিয়েছেন। যেটিতে তারা বলছেন, ছেলেটিকে দেখা যাচ্ছে জনতাকে উস্কানি দিতে। ছবিতে দেখা যায়, ছেলেটি জনতার উদ্দেশে বক্তৃতা দিচ্ছে, ‘এই দেশের মুসলিমরা ঘুমিয়ে আছে। ইতিহাস সাক্ষী। যখনই মুসলিমরা জেগেছে, তারা ক্রোধ নিয়ে জেগেছে। মুসকান তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ও এমন ছেলে নয় যে ধ্বংসাত্মক কিছু করবে। কিছু ভাঙার মতো ছেলে তিনি নয়, এগুলো সব মিথ্যে। কর্মকর্তারা বলছেন, যাদেরকে ধরা হয়েছে, তাদের পরিবারকে এরকম নোটিশ দেয়া হয়েছিল যে, তাদের বাড়ি-ঘর যথাযথ অনুমোদন ছাড়া তৈরি করা হয়েছে। আমরা যখন তদন্ত চালাই, তখন দেখলাম তার পরিবার এমন এক আত্মীয় বাড়িতে থাকছে, যেটি অনুমোদন ছাড়া নির্মাণ করা।

পুলিশের এক অফিসার কুমার বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় এসব বাড়ি পরিদর্শন করছে। এরপর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গ্রেফতার হওয়া আরো লোকজনের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হবে। তিনি বলেন, যাদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে, তাদের ব্যাপারে অবৈধ কোনো কিছু জানা গেলে বুলডোজার চালানো হবে। যোগী আদিত্যনাথের একজন উপদেষ্টা নভনীত সেহগাল বলেন, বুলডোজার দিয়ে যা করা হচ্ছে তা আইন ও সব নিয়ম মেনেই করা হচ্ছে। এখানে আইনের বিরুদ্ধে কিছু হচ্ছে না। ভারতের একদল শীর্ষস্থানীয় আইন বিশেষজ্ঞ, যাদের মধ্যে সাবেক বিচারপতি ও নামকরা আইনজীবীরা রয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন পেশ করেছেন পুলিশের এসব মারধর ও বুলডোজারের অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারের সর্বশেষ ঘটনাবলীর বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে। তাদের চিঠিতে তারা অভিযোগ তুলেন, আদিত্যনাথ পুলিশকে নিষ্ঠুর ও বেআইনিভাবে বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্যাতন চালাতে মদত দিচ্ছেন। তারা আরো বলেন, সর্বশেষ এসব ঘটনা জাতির বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। তারা বলেন, শাসকশ্রেণির এরকম নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়ন আইনের শাসনকে যেভাবে ধ্বংস করছে, তা মানা যায় না। এটি সংবিধান ও রাষ্ট্র যেসব মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে, তাকে একটা পরিহাসে পরিণত করছে।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারত সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলে, তারা যেকোনো ধরণের ভিন্নমতকে দমন করতে চাইছে। ভারত সরকার বেছে বেছে ও হিংস্রভাবে ওই সব মুসলিমের ওপরই দমন চালাচ্ছে, যারা তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভিন্নমত তুলে ধরছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় বোর্ডের প্রধান আকার প্যাটেল এক বিবৃতিতে বলেন, বিক্ষোভকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে দমন করা। বিনা বিচারে আটকে রাখা এবং শাস্তি হিসেবে ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়া, এগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ড রক্ষা করে চলার যে অঙ্গীকার ভারত করেছে, তার পুরোপুরি লঙ্ঘন। এদিকে সাহারানপুরে মুন্নি বেগম তার ছেলে ও স্বামীর খবরের অপেক্ষায় একটা দুঃসময় পার করছেন। তিনি অভিযোগ করেন বলেন, এ দু’জনকেও পুলিশ মারধর করছে। তিনি জানেন না, কখন তারা ফিরে আসবে। যখন ফিরবে তখন তাদের থাকার মতো কোনো বাড়ি আর দাঁড়িয়ে থাকবে কিনা তাও তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমার নির্দোষ ছেলে ও স্বামী এখন জেলে। আমি আমার মেয়েদের নিয়ে নতুন তৈরি করা বাড়িতে একাকী থাকছি। যদি ওরা আমাদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়, তখন কি হবে? সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত। আমি রাতে ঘুমাতে পারি না।’ সূত্র : বিবিসি

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom